শিশুর মিথ্যা বলা দূর করার উপায় – How To Deal With Child That Lies

শিশুর মিথ্যা বলা দূর করার উপায়

শিশুর মিথ্যা বলা দূর করার উপায় – How To Deal With A Child That Lies: শিশু মন ভীত একটুতে মিথ্যা বলার আশ্রয় নেয়। তবে কেউ এমনি এমনি মিথ্যে বলে না, কোন না কোন কারণ থাকে। তবে শিশুরা বাবা মায়ের সামনে বেশিরভাগ সময় মিথ্যে বলে শাসন বা মাইরের ভয়ে। যেটা থেকে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং মিথ্যাবাদী হয়।

এটা হয়তো আমরা সবাই জানি, ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ।’ কিন্তু শিশুরা তো আর সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য বুঝে না। তাই তারা প্রায়ই মিথ্যার প্রশ্রয় নেয়। এটি শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা।

কেন শিশুরা মিথ্যা বলে?

আসুন জেনে নেওয়া যাক, শিশুরা কেন মিথ্যা কথা বলে-

১। সমবয়সীদের সঙ্গে ঝগড়া ফ্যাসাদ করে শিশুরা মিথ্যা কথা বলে।
২। বন্ধুবান্ধবদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বা তাদের বাহাদুরি দেখাতেও শিশুরা মিথ্যা কথা বলে।
৩। নিজের ভুলত্রুটি আড়াল করতে শিশুরা মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
৪। বকা বা শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য শিশুরা মিথ্যা বলে থাকে।
৫। অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যও বাচ্চারা মিথ্যা কথা বলে।
৬। মনের অতৃপ্ত ইচ্ছা পূরণের জন্য বাচ্চারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
৭। শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয়। তাই বড়দের মিথ্যা বলা দেখে তারাও মিথ্যা বলতে শেখে।
৮। কোনো বিষয়কে একটু বাড়িয়ে বা অতিরঞ্জিত করতে।

মিথ্যা কথা বললে কি হয়?

১। এক মিথ্যাকে ঢাকতে হাজার মিথ্যার জন্ম হয়।
২। মিথ্যাচারীকে সমাজের কেউ ভালোবাসে না ও ভালোচোখে দেখে না।
৩। মিথ্যা কথা বলার কারণে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
৪। মিথ্যা, ব্যক্তি চরিত্রের একটি সবচেয়ে খারাপ গুণ।
৫। মিথ্যা মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।
৬। সকল পাপের মূল হচ্ছে মিথ্যা কথা।
৭। মিথ্যাবাদী সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।
৮। মিথ্যাবাদী তার মিথ্যা প্রকাশ হয়ে পড়ার আশংকায় সবসময় মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ভোগে।
৯। যারা মিথ্যা কথা বলে তারা অন্যদেরও একই রকম মিথ্যাবাদী মনে করে।
১০। মিথ্যাবাদীদের সম্মান না থাকায় সে নির্লজ্জের মতো যে কোন ধরনের কাজে লিপ্ত হয়।

শিশুর মিথ্যা বলা যেভাবে দূর করবেন

প্রথমে শিশুর মিথ্যা বলার কারণটি খুঁজে বের করুন। তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন এবং সে কী চাচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুকে যুক্তি দিয়ে বোঝান মিথ্যা কথা বলা কতটা ক্ষতিকর। তাকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য শেখান এবং কেন মিথ্যা কথা বলা উচিত নয় তা বোঝানোর চেষ্টা করুন।

১। শাস্তি দিবেন না

‘শাস্তি’ সঠিক সমাধান নয়। সাধারণত দেখা যায়, সন্তান মিথ্যা বললে বাবা মায়েরা তাকে শাস্তি দেয়। আসলে এক্ষেত্রে শাস্তি তেমন কোনো কাজে আসে না। বাচ্চা প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরে ঐ কাজটা ঠিকই পুনরায় করে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার বাবুটা দৌড়াতে গিয়ে টেবিলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। যার ফলে কাঁচের একটা গ্লাস পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। শব্দ শুনতে পেয়ে আপনি পাশের ঘর থেকে দৌড়ে ছুটে আসলেন ঘটনাস্থলে। ভয়ে কাতর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাবুটাকে রাগী মুডে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে ভাংলো এটা?’ উত্তরে বাচ্চা বলল, বিড়ালটা দৌড়াতে গিয়ে ফেলে দিছে। আপনার শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সে সত্যিটাকে আড়াল করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু আপনি তার হাবভাব দেখেই বুঝতে পারছেন, গ্লাসটা ভাঙার জন্য কে দায়ী? ব্যস, অমনি তাকে শুরু করে দিলেন মারধর। বললেন, ‘আমি জানি এটা তুমি ভাংছো। আরো এভাবে দৌড়ালে ঠ্যাং খোড়া করে দিব’, মনে রাখিও। হয়তোবা, আপনি ভাবছেন এটাই তার জন্য সঠিক সমাধান। কিন্তু মোটেই না।

কিভাবে দূর করবেন?

প্রথমে তাকে জানান, আপনি তার মিথ্যা বলার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।

  • তাকে মারধর কিংবা বকাঝকা একেবারেই করবেন না।
  • গ্লাসের ভাঙা টুকরোয় সে আঘাত পেতে পারে। তাই তাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিন।
  • তাকে অভয় দিন এবং বলুন ‘বাবু তোমার কোথাও লাগেনি তো।
  • অতঃপর তাকে সাবধান করুন, সংশোধন করে দিন।
  • সেই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিন, আপনার কথা না শুনলে কী কী শাস্তি সে পেতে পারে। এরপর তাকে বিষয়টি খুলে বলার জন্য সুযোগ দিন, স্বীকার করার সুযোগ দিন। এভাবে জিজ্ঞেস করলে বাচ্চা কখনোই আপনাকে মিথ্যে বলবে না।

২। সত্য বলার জন্য আদর করুন

‘ভয়’ খুব মারাত্মক একটি শব্দ। আর শিশুদের ক্ষেত্রে এটা আরো প্রকট হয়। শিশুরা যদি আপনাকে ভয় পায় তাহলে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার থেকে বাঁচতে তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

উদাহরণস্বরূপ, অনেকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনার আদরের বাবুটা গাছে উঠতে গিয়ে পড়ে গেছে। সে বেশ আঘাতপ্রাপ্তও হয়েছে। কিন্তু সে আপনার কাছে এসে সব সত্যিটা বলে দেয়। সে জানায়, ‘বাবা তোমার নিষেধ সত্ত্বেও আমি আবারো গাছে উঠতে গেছিলাম। কিন্তু পড়ে গিয়ে বেশ ব্যথা পেয়েছি। আর আমি গাছে উঠবো না।’

আপনি তার সত্যি বলাটাকে গ্রহণ করুন। তাকে বকাঝকা না করে বরং আদর করুন।

আরো যা যা করবেন –

  • ‘আমি আর গাছে উঠবো না।’ একথাটি বলা থেকে তাকে বিরত রাখুন। কেননা, এতে সে আর কখনোই গাছে উঠার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ নাও করতে পারে।
  • তাকে এটা বলুন, ‘তুমি এখনো অনেক ছোট। এখন যদি তুমি একা একাই গাছে উঠতে যাও তাহলে পড়ে যেতে পার।’
  • বরং আমাকে সাথে নিয়ে গাছে উঠিয়ো। আমি তোমাকে ঐ সময় গাছে উঠতে সাহায্য করবো এবং গাছে উঠার কৌশলগুলোও শিখিয়ে দিব।
  • এতে তার ভয় কমে যাবে এবং আপনাকে একজন প্রকৃত বন্ধু ভাববে।

এছাড়াও আপনি তার সাথে মিথ্যা কথা বলার ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

৩। সমস্যা একত্রে সমাধান করুন

অনেকক্ষেত্রে শিশুরা সমস্যায় পড়লে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

উদাহরণস্বরূপ, কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে তারা ঈদে একটি ছোট্ট বিজনেস করার সিদ্ধান্ত নিল। দুঃখের বিষয়, আপনার বাচ্চার কাছে কোনো টাকা নেই। সেও এই বিজনেসটা করতে চায়। কিন্তু আপনাকে বলতে ভয় পাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিল আপনাকে বলবে, কোনো এক বন্ধুর কাছে সে ১০০ টাকা ধার নিয়েছে। সেটা দিতে হবে। হ্যা, এরকম কোনো সমস্যায় পড়লেও বাচ্চারা মিথ্যা বলে।

কিভাবে দূর করবেন?

  • বাচ্চা যদি বিষয়টি আপনার কাছে তুলে ধরে তাহলে তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। আর মিথ্যা বললে কৌশলে জানার চেষ্টা করুন।
  • তাকে বলুন, আপনি তাকে সাহায্য করবেন।
  • এতে শিশুর নিজের প্রতি যেমন বিশ্বাস বাড়বে তেমনি আপনার প্রতিও তার বিশ্বাস বাড়বে।
  • বরং তারা যেন বিজনেসটাতে সফল হয় সেজন্য তাদের আরো উৎসাহিত করুন এবং ভালো পরামর্শ দিন।

মনে রাখবেন, ছোট ছোট বিজনেস এর মাধ্যমেই কিন্তু বড় বিজনেসের স্বপ্ন দেখা যায়। আজকে যারা সফল তারাও প্রথমে এভাবেই শুরু করেছিল। এভাবে তাদের সৎ সাহস দিয়ে মিথ্যা বলার প্রবণতাটাকে দমিয়ে দিতে পারেন।

৪। তাকে পছন্দ করতে দিন

আপনি কালো শার্ট পরেন না। কিন্তু আমি যদি জোর করে বলি, ‘কালো শার্টই পরতে হবে।’ তাহলে আপনাকে কেমন লাগবে? হ্যা, নিজের পছন্দের বিরুদ্ধে যখনই আমরা কোনো কিছু চাপিয়ে দেই তা আমাদের সহ্যের বাহিরে চলে যায়।

শিশুদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা কিছুটা এরকম। অনেক বাবা-মা ই আছেন যারা শিশুদের হাতের লেখা, ব্যাগ গুছানো, ব্রাশ করা, চুল আঁচড়ানো, জুতা মোজা পরার মত কাজগুলো সব ঠিক করে দেন। অভিভাবকরা তাদের নিজস্ব মতামত বারবার সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেন। এমনকি, বাচ্চা টিভিতে কোন প্রোগ্রাম দেখবে, কোন কালারের পোশাক পরবে, কি খাবার খাবে এসব কিছুই তারা জোর করে চাপিয়ে দেন। ফলে শিশুর মধ্যে তিক্ততা, বিরক্তি, অজুহাত কিংবা মিথ্যা বলার মত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষণীয় হয়ে ওঠে।

কি করবেন?

  • শিশুর ওপর নিজের মতামত চাপিয়ে না দিয়ে তাকে পছন্দ করার সুযোগ দিন।
  • এতে সে তার নিজস্ব মত প্রকাশেও সুযোগ পাবে।
  • নিজের কাজগুলো তাকে নিজে করতে শেখান। নতুবা এ ঘানি আপনাকে বহুদিন পর্যন্ত টানতে হতে পারে।

এতে হয়তো লুকিয়ে কিছু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করবে না।

৫। বাবা-মা’র মিথ্যে বলার অভ্যাস

বাচ্চা কোনো শিক্ষা নিয়ে জন্মে না। তারা পরিবেশ এবং আমাদের নকল করে শিখে। আমাদের অজান্তেই তারা আমাদের নকল করে। বড়রা শিশুর সামনে হয়তো এক রকম বলছেন, কাজের বেলায় অন্য রকম করছেন। শিশুর মন ভোলাতেও বড়রা অনেক সময় মিথ্যার আশ্রয় নেন। তাই বাচ্চা বলে তাদের অবহেলা করবেন না। সুতরাং তাদের সামনে মিথ্যা একেবারেই নয়।

উদাহরণস্বরূপ- আপনার স্ত্রী বলল, বাবুর জন্য একটা খেলার ব্যাট আনিও। আপনি বললেন, ঠিক আছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ব্যাট আনছেন কিনা জানতে চাইলে আপনি বললেন, আজকে টাকা ছিল না। কালকে নিয়ে আসব। আবার আগামীকাল সন্ধ্যায়ও বাসায় ফিরে বললেন, আজ মনে ছিল না। কাল নিয়ে আসব। এভাবে মিথ্যা বলে বলে আপনি কয়েকদিন কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার এ মিথ্যা বলাটা তার মধ্যে একটি নেগেটিভ সাইট তৈরি করবে। আপনার দেখাদেখি সেও মিথ্যা বলতে শুরু করবে।

কিভাবে দূর করবেন?

  • বাচ্চাকে শুধরানোর আগে নিজে শুধরে নিন। মিথ্যা বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
  • ভুলবশত, ব্যাট নিয়ে নাই আসতে পারেন। তবে সত্যটা তুলে ধরুন।
  • বাচ্চার সামনে বা বাচ্চার অগোচরেও মিথ্যা বলার অভ্যাসটা ছেড়ে দিন। কেননা, দেয়ালেরও কান আছে। একথাতো সবাই জানে।

৬। নিজেদের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে

মনে রাখবেন, বাচ্চারা কিন্তু ভাবুক। বন্ধুদের সামনে ভাব নিতে বা তাদের থেকে স্পেশাল বা মর্যাদাবান বোঝাতে কিংবা তাদের চমকে দিতে শিশুরা মিথ্যা কথা বলে। তবে সেই মিথ্যাটাকে অন্য বন্ধুরা অজান্তেই যদি বিশ্বাস করে তবে ঐ শিশুর মিথ্যা বলার প্রাবল্য আরো বেড়ে যায়। কেননা, তার মাথায় এটাই কাজ করে যে মিথ্যা বলে প্রচুর সম্মান পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ- ৭-৮ বছরের কয়েকজন শিশু গল্প করছে। ১ম জন বলল, আমি দুইটার বেশি মিষ্টি খেতে পারি না। ২য় জন বলল, আমি ৪ টা পর্যন্ত পারি। ৩য় জন বলল, আমি ৩ টা পর্যন্ত পারি। কিন্তু আপনার বাচ্চা যে কিনা মিষ্টিই পছন্দ করে না। সে তাদের মাঝে ভাব নেওয়ার জন্য বলল, ধুর আমি ১০ টা খেলেও কিছু হয় না।

হ্যা, ঠিক এমন কিছু মহুর্তে বাচ্চারা বন্ধুদের থেকে নিজেকে স্মার্ট বানাতে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

কিভাবে দূর করবেন?

  • সামান্য মিথ্যা বললে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে পরিমান বেড়ে গেলে অবশ্যই জানার চেষ্টা করুন, কেন তারা মিথ্যা বলছে।
  • যদি এরকম হয়, তবে তার সাথে মিথ্যা বলার কুফলগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
  • প্রকৃষ্ট কোনো উদাহরণ দিয়ে তাকে বোঝাতে পারেন।
  • তাদের ‘দূর-ছাই’ করে তাড়িয়ে দেবেন না।

৭। নজর পেতে

হ্যা, অনেক শিশুই আছে যারা তাদের দিকে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হঠাৎ হঠাৎ মিথ্যা বলে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি বলে এইমাত্র জানালা দিয়ে বাঘ দেখলাম। তাহলে বুঝতে হবে, ওই বাচ্চা আপনার মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। আর তাতে কাজ হলে শিশু বারবার মিথ্যা কথা বলবে।

কিভাবে দূর করবেন?

  • বাচ্চাদের কথা মন দিয়ে শুনলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
  • সে কি বোঝাতে চাচ্ছে সেদিকে মনযোগী হোন।

৮। বাড়িতে গায়ে হাত তোলার অভ্যাস থাকলে

এখনও বাড়ির বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলে এক প্রকার সুখ পান বড়রা। কারণে অকারণে এই শাসন নেমে আসে। তাই এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে, শিশুরা মারের হাত থেকে বাঁচতে তারা মিথ্যা কথা বলবে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার পকেট থেকে বাচ্চা প্রতিদিন ১০-২০ টাকা চুরি করে স্কুলে খাওয়ার জন্য। টাকাটা খুব নগণ্য হওয়ায় আপনি সেটা টের পান না। কিন্তু হঠাৎ একদিন আপনি আড়াল থেকে স্ব-চোখে দেখতে পেলেন বিষয়টা। পরক্ষণে বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি আমার পকেট থেকে টাকা চুরি কর।’ এমন পরিস্থিতিতে মারের হাত থেকে বাঁচতে বাচ্চা মিথ্যা বলবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সে জানে, পরিবারে আপনি কারণে অকারণে বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলেন।

কিভাবে দূর করবেন?

  • তার প্রয়োজনগুলো আসার আগেই মিটিয়ে নিন।
  • বাচ্চাদের গায়ে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • মিথ্যা বলার কুফলগুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন।
  • তার কোনো প্রয়োজন থাকলে সে যেন আপনাকে জানায়। এজন্য তাকে অভয় দিন ও সৎ সাহস যোগান।

৯। ভয়ের কারণে

শিশুরা অনেক সময় ভয় পেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। সত্য গোপন করে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি সবসময় রাগি মুডে থাকেন। ঘরের জিনিসপাতি এলোমেলো থাকাটা আপনার একদম পছন্দ নয়। কিন্তু বাচ্চারা তো ঘর এলোমেলো করবেই। এখন দেখা গেল, আপনি তাকে এর জন্য প্রতিনিয়ত শাস্তি দেন। তাহলে পরবর্তী ঘটনাগুলোর জন্য আপনার ভয়ে সে মিথ্যার প্রশ্রয় নিবে।

কিভাবে দূর করবেন?

  • শিশু কেন মিথ্যে বলছে সেটা আপনাকে অনুধাবন করতে হবে।
  • ঘটনাটা যত খারাপই হোক না কেন, সত্যি বললে আপনি তাকে শাসন করবেন এই আশ্বাস দিন।

১০। সাবধান করার পরেও মিথ্যা বললে শাস্তি দিন

সাবধান করার পরেও শিশু আবার মিথ্যে বললে, তাকে শাস্তি দিন। সেটা শারীরিক শাস্তি কিংবা অতিরিক্ত বকাঝকা করে নয়।

কিভাবে করবেন?

  • তার খুব পছন্দের কোনও জিনিস (খেলনা, বা রং পেন্সিলের সেট) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
  • ধর্মের জ্ঞান দিয়ে তাকে মিথ্যা বলা থেকে বিরত রাখতে পারেন।

১১। রুপকথার গল্প শোনান

রূপকথা, উপকথার মত গল্পগুলোতে অনেক ধরনের শিক্ষামূলক বিষয় তুলে ধরা হয়। তাই শিশুদের এরকম গল্পগুলো শোনাতে হবে। যাতে ওরা সেখান থেকে ভালো কিছু শিখতে পারে। ভালো কাজ এবং মন্দ কাজ সম্পর্কে ওরা যেন সহজে বুঝতে পারে। মিথ্যা যে ভালো কিছু বয়ে আনে না, সেটা তাদেরকে উপলদ্ধি করান। তাদেরকে দেখান, মিথ্যা মানুষের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। একটা বয়স পর ওদেরকে বাস্তবতা আর কল্পকাহিনীর মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়ে দিন।

১২। কল্পনাজনিত মিথ্যার অভ্যাস

অনেক শিশুই আছে যারা কল্পনা করতে ভালোবাসে। কল্পনার জগতে তারা নিজের পছন্দমত সবকিছু তৈরি করে নেয়। কিন্তু কল্পনাজনিত মিথ্যার এই অভ্যাস বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যায়। তবু খুব ছোটবেলা থেকেই শিশুকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সত্য বলার শিক্ষা দিতে হবে। কল্পনা আর মিথ্যার মধ্যে তফাতটা ধরিয়ে দিন। কল্পনাজগত ও বাস্তবতা এক নয়, এটা গল্পচ্ছলে শেখাতে হবে। ঈশপের গল্প বা বিভিন্ন নৈতিক গল্প শুনিয়ে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। সত্য বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। সত্য বলার জন্য শিশুকে পুরস্কৃত করুন।

মিথ্যা বলার পর যদি সে সত্যিটা স্বীকার করে নেয়, তাহলে তাকে যতটা পুরস্কার দেবেন বলে জানিয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি কিছুদিন। তাতে তার বিশ্বাস বাড়বে। যদি দেখেন কোনও ভাবেই বাচ্চার মিথ্যা বলার অভ্যাস বন্ধ করা যাচ্ছে না, তাহলে মনোবিদের পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন উত্তর পর্ব


শিশু মিথ্যাবাদী হয় কেন?

শুরুতেই বলেছি কেউ এমনি এমনি মিথ্যা কথা বলে না! সত্য কথার আনন্দ অনেক তবু কেন বাচ্চারা মিথ্যে বলে ভয়ে থাকে? এর কারণটা হচ্ছে নিজেকে রক্ষা করা। প্রতিটি শিশু তার বাবা মাকে ভয় পায় কারণ বাবা মা কিছু হলেই সন্তানকে বকাঝকা করে, শাস্তি দেয় যেটা শিশুরা নিতে পারে না। তাই এগুলো থেকে বাঁচতে সে মিথ্যের আশ্রয় নেয়। আবার শিশুরা পিতামাতাকে অনুকরণ করে, এখন আপনাকে যদি দেখে মিথ্যে বলছেন তাহলে সেও সেটা করতে চাইবে আবার অনেকে বাচ্চাকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিতে লজ্জা পায় এবং মিথ্যে কিছু একটা বলে বাচ্চার মুখ বন্ধ রাখে কিন্তু সে যখন জানবে যে এটা মিথ্যে ছিল তখন সেও চাইবে মিথ্যা বলার। ঐযে আগেই বলেছি বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়।


সন্তানকে সত্যবাদী করার উপায় কি?

আপনি যদি আপনার সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়তে চান তাহলে সত্যবাদিতা সবার আগে শেখাতে হবে। যত বাঁধা আর বিপদ আসুক না কেন সে যেন সত্য বলে এটা তাকে শেখাতে হবে। এজন্য সে যখন কোন ভুল বা অন্যায় করে ফেলবে তখন কোন ভয় বা শাস্তি না দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে সুন্দর ভাবে। যখন সে আপনার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাবে তখন সে সত্য বলার অনুপ্রেরণা পাবে। তাই বাচ্চাকে ধর্য নিয়ে বোঝান আর আপনি নিজেও একজন সত্যবাদী বাবা-মা হিসেবে তার কাছে পরিচিত হোন।


শিশু মিথ্যা কথা বললে কি করব?

শিশু যখন মিথ্যা বলে তখন তাকে ডিরেক্ট বলবেন না যে তুমি মিথ্যা বলছ! বরং তাকে বলুন বাবা তুমি যেটা করছ তা এই ক্ষতিটা করেছে আর তোমার কাছ থেকে সত্যটা আশা করছিলাম। কখনই নিশ্চিত না হয়ে বাচ্চাকে দোষাবেন না, যদি এরকমটা হয় যে সে ওটা করেনি কিন্তু আপনি তাকে সন্দেহ করে মিথ্যাবাদী বানায় দিচ্ছেন তখন সে অনেক কষ্ট পাবে এবং সত্য বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে মিথ্যের দিকে ধাবিত হবে। তাই একটু ভেবে চিন্তে কাজ করবেন। একটা কথা মনে রাখবেন, শিশুরাই বেশি ভুল করবে এজন্য সে ছোট আর আপনি বড়।

আশা করি, আপনার বাচ্চার মিথ্যে বলার বদ অভ্যাস দূর হবে এই বিষয়গুলো মেনে চললে। একটু ধর্য্য আর নিয়মিত কৌশলের মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুর যেকোন অভ্যাস দূর করতে পারেন। ছোট বয়সে যে অভ্যাস তৈরী হবে সেটা তার বাকি জীবনে প্রভাব ফেলবে। তাই কোন বদ অভ্যাস এড়িয়ে যাবেন না, ছোট বেলায় যত সহজে অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব বড় হয়ে কিন্তু তা সম্ভব না। আপনার শিশু একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক এই কামনা করি।

আরো পড়ুন- শিশুকে শাসন করার উপায়

আদর্শ বাবা হওয়ার উপায় – সন্তানের প্রতি বাবার দায়িত্ব পালন পদ্ধতি

আদর্শ বাবা হওয়ার উপায়

আদর্শ বাবা হওয়ার উপায় – সন্তানের প্রতি বাবার দায়িত্ব পালন পদ্ধতি: সন্তান বাবা মায়ের অমূল্য সম্পদ। সন্তান যার নেই সেই বুঝে তার ব্যথা। কিন্তু সন্তান থেকেও যদি আপনি তাকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারেন তবে সেটা একান্তই আপনার ব্যর্থতা।

সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে আমরা যেটা করি –

  • দুষ্টুমি করলে তাদের ধমক দেই।
  • সঠিক জিনিসটা শেখানোর পরিবর্তে মারধর করি।
  • ছেলে কিংবা মেয়েকে সমান চোখে দেখি না।
  • সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসা করি না।
  • সন্তানকে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলি না।
  • সন্তানের মতামতগুলো গুরুত্ব সহকারে শুনি না।
  • সম্ভব থাকা সত্ত্বেও তার পছন্দানুযায়ী কোনো জিনিস কিনি না।
  • অন্যদের সঙ্গে মিশতে দেই না।
  • অনেকে সন্তানকে একাকী রাখতে পছন্দ করি।
  • শিশুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করি।
  • প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা পালন করি না।
  • শিশুকে ঘুরতে নিয়ে যাই না।
  • শিশুর সাথে অবসর সময় কাটাই না।
  • খেলাধুলার প্রতি শিশুর অনাগ্রহ সৃষ্টি করি।
  • একঘেয়েমি পড়াশোনায় বন্দী রাখি।
  • মিথ্যা বলার পরেও তাকে প্রশ্রয় দেই।
  • পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে তাকে আরো ব্যথা দেই।
  • কড়া শাসনের মাধ্যমে তার মনে ভয়ের সঞ্চার করি।
  • তার করা খারাপ কাজের বিরুদ্ধে কথা বলি না।

সন্তান পালনে বাবার ভূমিকা

এরকম হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে যা আজকালকার অভিভাবকরা করে থাকে। আসলে সন্তানকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সচেতন হতে হবে আপনাকেই। সেই সাথে হতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষকও।

সন্তানের বাবা হিসেবে আপনাকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। নিচে আমরা এমন কিছু পয়েন্ট তুলে ধরলাম যা মেনে চললে আপনার সন্তানকে একটি পূর্ণাংগ জীবন ব্যবস্থা দিতে পারবেন।

১। কান্না দমন করুন

জীবনের প্রথম দিকে বাচ্চারা যা চায় তা পাওয়ার জন্য হাতিয়ার হিসাবে কান্নার ব্যবহার করে। এটি ঘটতে দেবেন না। সে যা চায় তা যদি আপনি দিতে যাচ্ছেন তবে সেটি কেবল একবার দিন অথবা একেবারেই দেবেন না।

উদাহরণস্বরূপ, বাজারের সবচেয়ে দামী ড্রেসটা কেনার জন্য সে আপনার কাছে কান্নাকাটি শুরু করল। আবার কিছুদিন পর বাজারের দামী মোবাইলটা কেনার জন্য বায়না ধরল। এরপর তার একটা দামী ল্যাপটপ চাইই চাই। এক্ষেত্রে আপনি তার চাহিদাগুলোর শুধু মাত্র প্রথমটি পূরণ করুন।

তাও আবার তৎক্ষণাৎ নয়, বরং কান্নার পরদিন বা কান্না থামানোর কিছু সময় পর। আবার কোনো বাজে কাজে সে আপনার কাছে ৫০০০ টাকা আবদার করল। আপনি তাকে পুরোটা না দিয়ে তাকে ১৫০০-২০০০ টাকা দিন। তাও আবার এক সাথেই নয়। দুই তিন দিনে ৫০০ কিংবা ১০০০ করে মিলিয়ে দিন। যাতে সে টাকার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং এটাও উপলদ্ধি করতে পারে যে ‘চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না।’

এভাবে পছন্দের জিনিসগুলো বার বার পাওয়ার জন্য তারা কান্নাকাটি করবে এবং এমন সব কর্মকাণ্ড করবে যা আপনাকে গলে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত আপনাকে তাদের চাহিদার কাছে আত্মসমর্পণ করাবে। আর আপনিও কোনো কূলকিনারা না পেয়ে তাদের প্রতিটি চাহিদা তৎক্ষণাৎ পূরণ করে চলেছেন। তবে এমনটা কেবল তাদের একগুঁয়ে বা জেদী এবং অবাধ্য করে তুলবে। এমনকি তারা যা চায় তা পাওয়ার সহজ উপায় হিসাবে ব্যবহার করবে কান্না।

কিভাবে দূর করবেন?

আপনাকে প্রথমে কয়েকবার কিছুটা কঠোর হতে হবে। যাতে তারা বুঝতে পারে কান্নাকাটির কোনও মানে হয় না। কান্না করলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। প্রতিটি জিনিস অর্জন করতে কষ্ট করতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সাথে মোকাবিলা করার এটাই যুক্তিসঙ্গত উপায়। বরং এটার মাধ্যমে তারা যে কোনো জিনিসের মূল্য দিতে শিখবে।

২। সন্তানকে ভাগাভাগি করতে শেখান

এটি এমন একটি গুণ যা অনেক শিশুর মাঝেই পরিলক্ষিত হয় না। আর না হওয়ার পেছনে দায়ী মূলত অভিভাবকরাই। কারণ তাদেরকে সেভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় না। আর স্ব-শিক্ষায় এ গুণটি অর্জন করতেও বহু সময় চলে যায়। ততদিনে নানাবিধ কাণ্ড ঘটে যায়। মূলত, যে সকল অভিভাবকদের সন্তান কেবলমাত্র ১ জন সে সকল শিশুদের ক্ষেত্রে ভাগাভাগি বিষয়টি শেখানো বেশ জটিল হয়ে উঠে।

এ গুণটি না থাকলে শিশুরা –

  • অন্যদের সাথে কোনো জিনিস শেয়ার করতে চায় না।
  • সব সময় নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে। এক কথায় ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ এমন মনোভাব তৈরি হয় তাদের মাঝে।
  • তারা প্রতিবেশির কোনো খবর রাখে না।
  • এমনকি এমন সন্তানেরা পরবর্তীতে পিতামাতাকেই দূরে ঠেলে দেয়।

কিভাবে দূর করবেন?

আপনার আদরের বেবিটাকে আপনি আইসক্রিম কিনে দিতে যাচ্ছেন। কিন্তু দেখলেন তার পাশে আরো একটি বেবি আছে। তাহলে একটি নয়, বরং দুটি আইসক্রিম কিনুন এবং আপনার বাবুটাকে দেখিয়ে দেখিয়ে তার সামনেই ঐ বাবুটাকেও আইসক্রিম দিন। আদরের ভাষায় বলতে পারেন – ‘একটা আমার বাবাটার জন্য, আর একটা মিষ্টি বাবুটার জন্য।’ অথবা আপনি তাকে পটেটো চিপস কিনে দিতে যাচ্ছেন। তাহলে একটি চিপস কিনে ‘আপনার বাবুটার সাথে পাশের বাবুটাকেও খাওয়ান।’ আদরের ভাষায় বলতে পারেন – ‘মিষ্টি বাবুটা, আসো আমাদের সাথে চিপস খাও।’ এভাবে বাচ্চাকে আপনি ভাগাভাগি বা শেয়ার বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করতে পারেন।

৩। শিশুকে রাস্তা পারপার হতে শিখান

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় রোড এক্সিডেন্ট একটা প্রতিনিয়ত ঘটনা। এই রোড এক্সিডেন্ট এর জন্য প্রতিনিয়ত ঝরে যায় অনেক তাজা প্রাণ। অকালে মৃত্যু হয় অনেক শিশুর। কেবল সাবধানতা ও রাস্তা পারাপারের নিয়ম কানুনই পারে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

কিভাবে শেখাবেন?

  • প্রথমেই শিশুকে সচেতন করুন। তাকে রোড এক্সিডেন্ট সম্পর্কে জানান।
  • রাস্তা পারাপারের সময় তাকে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে বলুন।
  • জেব্রা ক্রসিং না থাকলে প্রথমে বামে তারপর ডানে ভালোভাবে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে, যাতে ঐ মহূর্তে কোনো গাড়ি না আসে।
  • রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ফুটপাত ব্যবহার করা শেখান। ফুটপাত না থাকলে নিরাপদ দুরুত্ব ব্যবহার করা শেখান।

সর্বোপরি, ট্রাফিক আইনগুলো সম্পর্কে তাকে ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাংগ ধারণা দিন। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, আপনি তাকে যা শিখাতে যাচ্ছেন তা আগে নিজে করে দেখান। তবেই সে তা সহজে গ্রহণ করবে। দেখা গেল, আপনি তাকে শুধু জ্ঞানই দিয়ে গেলেন, কিন্তু রাস্তা দিয়ে পারাপারের সময় নিজেই নিজের কথার বরখেলাপ করলেন তা হলে ফলাফল শূণ্য ছাড়া কিছু হবে না।

কেননা, বাচ্চা আপনাকে প্রতি মহূর্তে ফলো করছে। আপনি তাকে জ্ঞান দিয়ে নিজেই যদি না পালন করেন তবে সেটাও সে লক্ষ করবে এবং একটি বিরুপ মনোভাব তার মধ্যে তৈরি হবে। যেটা আপনি এবং তার উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

৪। বইয়ের বাইরে শিক্ষা

বাচ্চা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন তাকে পাঠ্যবই বর্হিভূত কার্যকলাপে অংশ নিতে উৎসাহিত করুন। অর্থাৎ তাকে কুইজ বা খেলাধুলার মত কোনো বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে দিন। স্ব-ইচ্ছায় এসব বিষয়ে অংশ নিতে চাইলে তাকে কখনোই জোর করবেন না। অর্থাৎ সে যখন চায় তখনই তা নিজ ইচ্ছায় করার চেষ্টা করুক। মনে রাখবেন, খেলাধুলা কিন্তু পড়াশোনারই একটা অংশ। আপনার দায়িত্ব হলো শুধু তাকে উৎসাহিত করা।

৫। সন্তানকে সময় দিন

বাচ্চার চাহিদা পূরণ করা অর্থাৎ তার জন্য শুধু খাবার আর খেলনা নিয়ে আসাই একজন প্রকৃত বাবার মূল কাজ নয়। সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেওয়াটাও জরুরি। শিশুর পূর্ণাঙ্গ জীবন গঠনে তার জন্য আপনাকে যথেষ্ট সময় বের করতেই হবে। কেননা, শিশুরা বাবা মায়েদের সঙ্গ পেতে চায়, তাদের কথা শুনতে চায়, তাদের কোলে উঠতে চায়, আদর পেতে চায়।

তাই আপনি যা করবেন-

  • বাচ্চার খেলার সঙ্গী হোন।
  • তার সাথে অলস দুপুর কাটান।
  • তাকে নিয়ে ঘুরতে বেড়োন।
  • অফিস থেকে ফিরেই আগে বাচ্চার খোজখবর নিন।

কেননা, এসব কিছুই বাচ্চার জীবন গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তাই বাচ্চার জন্য যথেষ্ট সময় আপনার টাইম টেবিলে যুক্ত করে নিন।

৬। প্রশ্রয় দিবেন না

সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয় এখানে। মনে রাখবেন, প্রশ্রয় দিলে তারা আরো বড় ভুল করার পথে পা বাড়ায়।

উদাহরণস্বরূপ, লোক মারফতে আপনি জানতে পারলেন যে ক্লাস ফাইভে পড়া আপনার বাচ্চাটা সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে। অথবা বাইরে মারামারি করে আসল। এমন সময় অপর বাচ্চাটার অভিভাবক আপনার কাছে নালিশ নিয়ে আসলে আপনি বললেন – ‘ওতো ছোট মানুষ। দু’একটা ভুল করতেই পারে।’

মনে রাখবেন, এই কথাটি বলার মাধ্যমে আপনি তার ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলেন। কেননা, আপনি যখন তার পক্ষ নিয়ে এ কথাটি বলেছেন তখন সে আর কোনোকিছুকে তোয়াক্কা করে না। এভাবে তার অপরাধ প্রবণতা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়। তাই সন্তানকে প্রশ্রয় না দিয়ে যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

৭। মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিবেন না

হ্যা, ‘মিথ্যা বলা মহাপাপ’ এটা আমরা সবাই জানি। বড়রা এটা বুঝলেও ছোটরা বিপদ থেকে বাঁচতে হরহামেশাই এর ব্যবহার করে থাকে। মিথ্যা মানুষকে ধীরে ধীরে অবনতির দিকে ঠেলে দেয়। আর মিথ্যা বলা ব্যক্তিগুলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে কলঙ্কিত। মিথ্যাচারকারীকে কেউ পছন্দ করে না।

উদাহরণস্বরূপ, বাবুটা পাশের বাসায় খেলতে গিয়ে বড় আপুর কলম চুপ করে পকেটে করে নিয়ে এসেছে। আপু এসে কলমটা ফেরত চাইলে সে সাফ জানায় আমি ওটা নেইনি। কিন্তু আপনি তার পকেটের ফাঁকে ঠিকই কলমটা দেখতে পাচ্ছেন। মূলত, আপনার শাস্তির ভয়ে সে মিথ্যা কথা বলছে।

এখন এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি তার এই মিথ্যা বলার প্রবণতাকে প্রশ্রয় দেন তাহলে পরবর্তীতে সে আরো বড় ধরনের অপরাধের সাথে যক্ত হবে। তাই প্রথমদিন থেকেই ‘মিথ্যা বলার প্রবণতা’ দমনে আপনাকে সচেষ্ট ভূমিকা পালন পালন করতে হবে। প্যারেন্টিং পদ্ধতিতে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কিভাবে দূর করবেন?

  • প্রথমত, মিথ্যা কথা বলা যে খারাপ এটা শিশুদের বোঝাতে হবে।
  • সত্যটা যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এটাও বোঝাতে হবে।
  • মিথ্যা বললে তাকে কেউ পছন্দ করে না, তার সঙ্গে খেলে না, তাকে কেউ ভালোবাসে না – এমন একটা ধারণা শিশুদের মনে গেঁথে দিতে হবে।
  • সাবধান করার পরেও শিশু আবার মিথ্যে বললে, তাকে শাস্তি দিন।
  • মিথ্যা বলার পর যদি সে সত্যিটা স্বীকার করে নেয়, তবে তাকে পুরস্কৃত করুন।
  • যদি তার মিথ্যা বলার প্রবণতা কোনোভাবেই দূর করা না যায় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

অর্থাৎ শিশুসুলভ আচরণ দিয়েই শিশুকে সত্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

৮। ‘Sorry’ বলা শেখান

‘ভুল করে ক্ষমা চাওয়া’ মানব চরিত্রের একটি মহৎ গুণ। কিন্তু সব ব্যক্তিই এই গুণটি নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে না। তাই নিজের সন্তানকে ভুল হলে সরি বলা শেখান।

উদাহরণস্বরুপ, আপনার আদরের বাবুটা সহ হাঁটতে বের হয়েছেন। কিন্তু পথিমধ্যে আপনার অমনোযোগিতার জন্য কোনো এক অপরিচিত ব্যক্তির সাথে ধাক্কা খেয়ে তার হাতে রাখা বইগুলো পড়ে গেল। এই মহূর্তে আপনি তাকে বইগুলো মাটি থেকে তুলতে সাহায্য করুন।

এরপর তাকে বলুন, ‘আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। আমি একেবারেই আপনাকে লক্ষ করিনি।’ এদিকে পুরো ঘটনাটা আপনার বাচ্চা স্ব-চোখে পর্যবেক্ষণ করল। এখান থেকে সে এটাই শিখল যে নিজের ভুল হলে অন্যের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়।

৯। কোনো কাজে বাঁধা নয়

কোনো কাজ শিশুরা করতে চাইলে তাতে বাঁধা দেওয়া উচিত নয়। বরং সে কোন কাজটাতে আগ্রহ প্রকাশ করছে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যদি উক্ত কাজটি তার জন্য ভালো বলে মনে না হয় সেক্ষেত্রে তাকে বোঝান। কাজটির ভালো মন্দ দিক তার সামনে তুলে ধরুন। সন্তান যেন আপনার অবর্তমানে বা আড়ালে কোনো কিছু না করে সেদিকে লক্ষ রাখুন। “বাবাকে এটা বললে আমাকে মারবে” – এমন মনোভাব যেন শিশু চরিত্রে না জন্মায়।

কিভাবে বদলাবেন?

  • প্রয়োজনে তার বন্ধু হোন।
  • তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
  • তার চিন্তা-ভাবনাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখুন।
  • যথাযথ মনে না হলে তার প্রশ্নের ভালোমন্দ দিক তুলে ধরুন।

এভাবে আপনি সন্তানের পাশে থাকলে তাদের মনের কথা সব আপনাকে খুলে বলবে। আর আপনিও তার ভালোমন্দের উপর আমল করতে পারবেন। আদর্শ বাবা হওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

১০। কড়া শাসন নয়

কড়া শাসন শিশুদের জন্য কোনোমতেই কাম্য নয়। কড়া শাসনের ফলে শিশুরা ভয় পায়। এতে শিশুদের মাঝে সত্য লুকানোর প্রবণতা বাড়ে।

ধরেন, বাচ্চা স্কুলের কোনো এক পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করেছে। এখন টিচার বলেছে খাতায় অভিভাবকের স্বাক্ষর আনতে। কিন্তু সে জানে আপনি কতটা রাগী! কতটা ভয়ংকর হবেন তার এ রেজাল্ট দেখে! সত্যি বলছি, আপনার এমন চরিত্রে বাচ্চা ভয় পাবেই পাবে। সে তখন বিষয়টি গোপন করে নিজে নিজে আপনার স্বাক্ষর নকল করার চিন্তা করবে। ধীরে ধীরে সে আপনার অগোচরে এমন সব কাজ করবে যা তার জন্য মঙ্গলজনক নয়।

কী করবেন?

  • সন্তানের বন্ধু হোন।
  • একজন ভালো শ্রোতা হোন।
  • একবার খারাপ করলে পরের বার ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা দিন।

এভাবে তাকে ভয়ভীতি না দেখিয়ে তৈরি করুন।

১১। কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলা

আপনি যদি বাচ্চাকে দিয়ে কিছু করাতে চান তবে তাকে সেটা করতে বলবেন না, বরং আগে সেটি তাকে করে দেখান। এটা সবাই জানি যে, বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়। তাই একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা কেবল আশেপাশের লোকেরা যা করে তা অনুসরণ করে।

বিশেষত তাদের বাবা-মা যা করছেন। তাই আপনি যদি চান যে আপনার মেয়ে/ছেলে আপনার কিছু ভালো অভ্যাস তার নিজের মধ্যে গড়ে তুলুক তবে নিয়মিত তার সামনে সেটা করে দেখান। এটা হতে পারে সংগীত বলা বা শোনা এবং কারো প্রশংসা করা, কাউকে ধন্যবাদ জানানো বা কাউকে অভ্যর্থনা জানানোর মতো কিছু।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি অবসরে ক্লাসিক্যাল বাংলা গানগুলো শুনতে পছন্দ করেন। তাহলে তার সামনে অবসরে সে গান গুলোই শুনুন। পরীক্ষায় পাশের বাসার ছেলেটা জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। তাহলে আপনার সন্তানের সামনেই তার প্রশংসা করুন। বলুন – ‘ওয়াও! খুব ভালো রেজাল্ট। এই পজিশনটা ধরে রাখো। তুমি জীবনে সফল হবে।’ বাসার কাজের লোকটি আপনার জন্য নারিকেল নিয়ে এসেছে। আপনার সন্তানের সামনেই তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন।

নতুন অতিথি বাসায় এসেছে। তাদের সালাম/আদাব দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। এভাবে দৈনন্দিন কাজগুলোতে আপনি তাকে একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে পারেন।

১২। সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করুন

মানব চরিত্রের এটাও একটি মহত গূণ। পৃথিবীতে কেহ একা চলতে পারে না। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কাজে আমরা অন্যের সাহায্য কামনা করি। আপনাকে যদি জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসা হয় তবে চাইলেও আপনি একা থাকতে পারবেন না। কারণ সেখানে না পারবেন কারো সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে, না পারবেন নিজের সব প্রয়োজন মেটাতে। আপনাকে বাধ্য হয়ে সভ্য দুনিয়ায় ফিরতেই হবে। অন্যের সহযোগিতা নিতেই হবে।

ভাবছেন, আমি একা চলতে পারি। আমাকে কারো সাহায্য লাগবে না। আমি কারো উপর নির্ভরশীল নই। তাহলে একবার ভাবুন তো, বাজার না করলে আপনি রান্না করবেন কি, নাপিত না থাকলে চুল কাটাবেন কাকে দিয়ে, কৃষক না থাকলে চাল পাবেন কোথায়? এরকম হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে। তাই সন্তানদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করুন।

কিভাবে তৈরি করবেন?

  • বাসায় ফকির আসলে তার দ্বারা ভিক্ষা দেওয়ান। এটি তাকে অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব তৈরি করবে।
  • ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (মসজিদ কিংবা মন্দিরে) তার দ্বারাই দান করান।
  • বাড়ির পাশে কোনো অভাবগ্রস্থ লোক থাকলে তার দ্বারাই সহযোগিতা করান।
  • রাস্তাঘাটে কোনো দুস্থ লোক দেখলে তাকে সাহায্য করতে পারেন।

এভাবে আপনি তার মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করতে পারেন।

১৩। বেশি বকাঝকা না করা

বাচ্চা মানুষ ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই বলে তাকে রাগ দেখিয়ে বকাবকি করতে যাবেন না। বরং আপনি তাকে সঠিক জিনিসটা শিখিয়ে দিন এবং বুঝিয়ে বলুন। তাকে এটা বোঝাতে চেষ্টা করুন তার ভুলের জন্যে কী কী খারাপ হচ্ছে বা হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, নিষেধ করা সত্ত্বেও বাবুটা গাছে উঠে পড়ে গেছে। আর আপনি তাতেই রেগে গেলেন। শুরু করলেন শারীরিক নির্যাতন আর বকাবকি। অথবা আপনার পছন্দের ঘড়িটি অসাবধাণতাবশত পড়ে গিয়ে ভেঙে ফেলেছে। আর আপনি চট করে রেগে গিয়ে তাকে শুরু করলেন বেধরক মার।

এভাবেই আপনি তাকে ঠেলে দিচ্ছেন ভুল পথে। যদি সে একবার নিষেধ সত্ত্বেও পুণরায় ভুল করে তাহলে তাকে বকা না দিয়ে বরং আরো কয়েকবার তাকে শেখানোর চেষ্টা করুন। দরকার হলে পর্যাপ্ত সময় নিন।

১৪। নেশাদ্রব্য থেকে দূরে রাখুন

নেশাদ্রব্য একটি মারণব্যাধি। বিড়ি, সিগারেট, পান, গুল কিংবা অ্যালকোহল জাতীয় যে কোনো নেশাদ্রব্য মানবশরীরের জন্য ভালো নয়। ক্যান্সার, যক্ষা ছাড়াও ফুসফুসের নানাবিধ রোগ হয়ে থাকে নেশাদ্রব্য পান করার ফলে। তবে হ্যা আপনি যদি নেশাদ্রব্য পান না করেন তবে বাচ্চা অটোমেটিক তা করবে না। আর আপনি যদি বাচ্চার সামনেই নেশাদ্রব্য করে থাকেন তাহলে বাচ্চাও অল্প বয়সে অটোমেটিক নেশাদ্রব্য ধরবে। হয়তো, আপনার ভয়ে সে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত সে সেটা করবেই।

কিভাবে দূর করবেন?

  • নেশাদ্রব্য পানের খারাপ দিক সম্পর্কে তাকে অবহিত করুন।
  • প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে নেশাদ্রব্য পানের ফলে হওয়া সৃষ্ট রোগ গুলো তাকে দেখান।
  • হাসপাতাল থেকে তাকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন।
  • নেশাদ্রব্য থেকে নিজে দূরে থাকুন, সন্তানকে দূরে রাখুন।

এভাবে তাকে নেশাদ্রব্য থেকে দূরে রাখতে পারেন।

১৫। ছোটবেলা থেকেই দায়িত্ব শেখান

অনেক বাবা মাই আছেন যারা সন্তানের সকল কাজগুলো নিজেই করে দেন। হ্যা, যদি আপনিও এমনটা করে থাকেন তবে আজই বাদ দিন। কেননা, এতে শিশু দায়িত্ব নিতে শিখে না। কিন্তু আমাদের উচিত তাকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিয়ে তা যথাযথভাবে পালনের শিক্ষা দেওয়া।

উদাহরণস্বরূপ, সন্তানকে দেওয়া দায়িত্বগুলো হতে পারে এরকম – খাওয়ার পরে প্লেটটা পরিষ্কার করে যথাযথ স্থানে রাখা, সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজে নিজেই ব্রাশ করা, স্কুল থেকে ফিরে জামাকাপড়, জুতামোজা পরিষ্কার করে রাখা, বাবা-মায়ের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা এবং ঘুমানোর সময় নিজের বিছানা বালিশ নিজেই পরিষ্কার করা।

যদি কোনো শিশু এই কাজগুলো করতে দ্বিধা বোধ করে তবে তাকে বকা না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। তাকে এটা বলুন – ‘নিজের কাজ নিজেই করা উচিত। নিজের কাজ নিজে করা খারাপ কিছু নয়। দেখবেন, ঠিক সে আপনার কথা মেনে নিবে।

১৬। প্রতিশ্রুতি পালন করুন

সন্তানকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা যথাযথভাবে পালন করা উচিত। এর মাধ্যমে শিশুরা প্রতিশ্রুতি পালনের শিক্ষা পায়। পাশাপাশি ভালো কিছু করার জন্য তার প্রশংসাও করা উচিত। এটি তাকে ঐ কাজে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি কথা দিলেন সপ্তাহের পাঁচদিন ভালোভাবে স্কুলে গেলে তাকে শুক্রবার বেড়াতে নিয়ে যাবেন। আর সে যদি সপ্তাহের পাঁচ দিনই স্কুলে যায় তাহলে অবশ্যই শুক্রবারে তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু সে যদি ৪ দিন স্কুলে যায় তবে সেক্ষেত্রে তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে সে পাঁচ দিনই স্কুলে গেল। কিন্তু আপনি তাকে বেড়াতে নিয়ে গেলেন না। এমনটা হলে তার মন ভেঙে যাবে। সেও কথার বরখেলাপ করা শিখবে।

তাই অবশ্যই মনে রাখবেন, সন্তানকে প্রতিশ্রুতি দিলে অবশ্যই তা পালন করবেন।

১৭। ছেলে কিংবা মেয়ে সমান অধিকার

অনেক বাবা মাকে দেখা যায় ছেলেদের বড় মাছের মাথাটা খাওয়াতে আর মেয়েকে মাছের পেটি দিয়ে খাওয়াতে। কেন? কারণ বয়স্ক কালে ছেলেরা বাবা মাকে দেখবে কিন্তু মেয়েরা তো পরের ঘরে চলে যাবে। তাহলে আপনার কাছে প্রশ্ন রইল, ‘আপনি কি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন এই ছেলে সন্তান বড় হয়ে আপনার বার্ধক্য কালে আপনাকে দেখবে।’ না, পারবেন না।

কারণ বর্তমানে এমন অনেক নজির আছে দেশের সবচেয়ে সুনামধন্য চাকরী করা ছেলেটার বাবা মাও বৃদ্ধাশ্রমে থাকে। বিদেশে থাকে বলে মৃত বাবাকে এক নজর দেখার জন্যও আসে না। যাই হোক, সন্তান লালন পালনে আপনাকে হতে হবে নিরপেক্ষ। ছেলে বা মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য রাখা যাবে না। উভয়কে সমান ভালোবাসা দিতে হবে। তবেই আপনি একজন আদর্শ বাবা হতে পারবেন।

১৮। মায়ার বাঁধনে বন্দী

সর্বশেষে সমস্ত ছোট ছোট মুহুর্তের ছবিগুলো ফ্রেমে বাধাই করে রাখুন। বছরের শেষে যখন সে সেগুলোর দিকে নজর দেবে, এগুলি কেবল ছবিই নয় বরং সেগুলোর সাথে স্মৃতি যুক্ত হবে। সন্তানদের সাথে একটা মহব্বতের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আপনি তার জীবনের ছোট ছোট কিছু মহূর্ত এভাবে ফ্রেমবন্দী করে রাখতে পারেন। অনেক সময় বাস্তব বস্তু সংবেদনশীল বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সকল সন্তানদের জন্য বাবাকে নিয়ে কিছু উক্তি –

বাবা হলেন একটি বাড়ির ছাদ, যে নিজে পুড়ে সন্তানদের ছায়া দেয়, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না।

বাবা মানে সাহস, বাবাই আসলে বাস্তব,
হাঁসি খুশির জীবনে, বাবাই মোদের রক্ষক।
বাবাই মোদের সম্পদ, সব সংগ্রামের স্রষ্টা,
বাবার থেকেই তৈরি, প্রতিটি জীবনের পৃষ্টা।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

সন্তান লালন পালনে বাবার ভূমিকা কি?

একটি চারাগাছের জন্য প্রয়োজন মা গাছের বীজ, আর সেই চারাগাছটি ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন শক্ত খুঁটি। বাবারা হলেন সন্তানের জন্য এই খুঁটি। প্রত্যেক বাবা তার সন্তানের জন্য আদর্শ বহন করে, বিশেষ করে মেয়েরা তার বাবাকে অন্ধ অনুসরণ করে। একা মায়ের পক্ষে কখনই ঠিকমত প্যারেন্টিং করা সম্ভব নয়।

তাই বাবা হিসেবে যদি আপনি সারাদিন বাইরে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করেন, আর সন্তানদের সময় না দেন তাহলে সেই কষ্ট আপনার বৃথা। কারণ ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে শিশুর সম্পর্ক সারাজীবন স্মরণীয়। প্রতিটি সন্তান তার বাবা মায়ের প্রতি ভক্ত হয় ছোটবেলার আদর স্নেহ আর ভালোবাসা পেয়ে।

তাই বাবা হিসেবে শুধু আপনাকে উপার্জন করলেই হবে না, সন্তানের সাথে সময় কাটাতে হবে, বন্ধুর মত মিশতে হবে। তাহলেই আপনার সন্তান একজন মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠবে। আর আপনি একজন গর্বিত সন্তানের বাবা হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারবেন।


বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

সহজ কথায়, বন্ধুর মত। অনেক বাবা ভাবেন বন্ধুর মত ভাবলে সে তো আর সম্মান দিবে না, কথা শুনবে না। তাই তার সাথে একটা দূরুত্ব বজায় রেখে অনেকটা শাসনের ভঙ্গিতে শিশুকে ভয় দেখিয়ে মানুষ করতে চায়, যা একদম ভুল। মায়েরাও চায় সন্তানকে বাবার ভয় দেখিয়ে শাসন করতে। এতে কিন্তু সাময়িক সময়ের জন্য আপনি তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বেশিরভাগ সময়ে বা আপনার অনুপস্থিতিতে সে ঐ ভুল বারবার করবে। কারণ ভয়ে দমন থাকা কাজ বারবার করতে মন চায়, এটা মানুষের সহজাত একটা চরিত্র।

তাই বাবা হিসেবে বন্ধুর মত সন্তানের সাথে মিশে বিভিন্ন বিষয়ে কথা, গল্প করতে হবে। সন্তান যাতে মনে করে যে তার সমস্যার জন্য বাবা আছে, সে যেন একা ফিল না করে। আপনি বাবা হিসেবে সন্তানের কাছে যত কাছে আসবেন, সন্তানও একদিন আপনার বৃদ্ধ বয়সে আপনাকে কাছে টেনে নিবে, কারণ ছোটবেলায় আপনার সাথে কাটানো মধুর স্মৃতি তাকে বারবার আপনার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

আশা করি, প্রত্যেক বাবারা তার সন্তানকে এভাবে লালন করতে পারবেন, প্রত্যেক বাবা যেন সন্তানের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে সারাটি জীবন।

আরো পড়ুন – শিশুকে শাসন

শিশুর খাবারে অরুচি – কিভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি উৎসাহী করে তুলবেন

শিশুর খাবারে অরুচি

শিশুর খাবারে অরুচি – কিভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি উৎসাহী করে তুলবেন: দিন দিন শিশুর ক্রমশ স্বাস্থ্যহানি দেখে আপনি টেনশন এ পড়ে গেছেন। ভাবছেন, আপনার আদরের বেবিটা আগের মত আর খাচ্ছে না, রোগাটে হয়ে যাচ্ছে। মুখের সামনে খাবার ধরলে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে এটাও বলে “এই খাবার আমার পছন্দ না। আমি এটা খাব না।”

আবার অনেক অভিভাবককেই দেখা যায়, খাবারের থালা নিয়ে বাচ্চার পিছনে রীতিমতো দৌড়াতে। অভিযোগ একটাই, তাদের বাচ্চা খেতে চায় না।

এসব দেখে মহা টেনশনে পড়ে গেলেন। এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের শালদুধ হবে নবজাতকের প্রথম খাবার। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ (গাঢ় এবং হলদেটে) দিতে পারলে শিশু মৃত্যুর হার ৩৭ শতাংশ কমে যায়।

যাই হোক, কেন শিশু খেতে চায় না, কী করলে সে ঠিকমত খাবে, কিভাবে বাচ্চাকে খাওয়ানো দরকার – এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। নিচের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

শিশু কেন খেতে চায় না ?

মূলত শিশুদের না খাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনিয়ম। আর এর জন্য বেশিরভাগ ডাক্তাররাই বাবা মায়েদের অসচেতনতাকে দায়ী করেন। আসলে তারা এটা করেন না জেনে। আবার অনেকক্ষেত্রে শিশুর আবদার মেটাতে গিয়েও কিছু বিপত্তি দেখা দেয়।

বাইরের লোভনীয় ও মুখরোচক খাবারগুলোতে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুললে ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি তাদের চাহিদা কমে যায়, খাদ্যাভাস নষ্ট হয়। অনেক অভিভাবক আবার ভাত খেতে না খেতেই শিশুকে বিস্কুট, চকলেট, রুটি ইত্যাদি খাওয়ান। আবার অনেকে দীর্ঘসময় ধরে খাওয়ান – এটা লক্ষ করেন না যে শিশুর পেটে খিদে আছে না নেই।

শিশু কাঁদলেও অনেকে মনে করেন শিশুর খিদে পেয়েছে। অথচ শিশু অন্য কারণেও কাঁদতে পারে। বাচ্চা একবেলা ঠিকমতো খায়নি বলে অনেকে ব্যাকুল হয়ে যান। আবার দেখা যায়, সকাল ৭ টায় পেট পুরে খাওয়াতে পারেননি বলে সকাল ৮ টায় পুনরায় খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দেন।

আপনার এসব কর্মকাণ্ডই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, পূর্বের খাবার হজম হলেই শিশুর খিদে পায়। আর খিদে পেলে শিশু খাবেই। যদি সুনির্দিষ্ট সময় ছাড়া শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করা হয়, তাহলে কিছু কিছু ক্ষতির শিকার হবে ওই শিশু।

শিশুকে খাবারে উৎসাহী করতে যা করবেন

বাচ্চাদের খাওয়ানোর উপায় কি? খাবারের প্রতি শিশুর পূর্ণরুচি ফিরিয়ে আনতে আমরা আছি আপনার পাশে। শিশু না খাওয়ার পেছনে দায়ী যথাযথ কারণ ও সমাধান তুলে ধরলাম। চেষ্টা করুন এগুলো মেনে চলতে। দেখবেন, আপনার প্যারেন্টিং হবে সেরা প্যারেন্টিং।

১। পূর্ণভাবে খিদে

অনেক শিশুই পরিপূর্ণভাবে খিধা না লাগলে খেতে চায় না। অথবা খেতে বসলেও পরিপূর্ণভাবে খিদা না লাগার কারণে প্লেটের ভাত শেষ করে না।

২। খাওয়া শেষ না হতেই খাওয়া

আমরা সাধারণত শিশুদের বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। হ্যা, এটা খুব ভালো। এতে শিশুর রুচি পরিবর্তন হয় এবং বহুমুখী খাদ্যের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু মাঝখানে একটা ছোট্ট ভুল আমরা করে বসি। দেখা যায়, বিস্কিট খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম, কলা, কাঁঠাল কিংবা চকলেট এর খাবারগুলো তাকে খেতে দেই। এতে শিশুর ভাতের প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবারের প্রতিও অনীহা দেখা দেয়। ফলে শিশুর না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

৩। অসুস্থতা

অসুস্থতার কারণেও শিশুদের খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা, জ্বর কিংবা পেট খারাপ থাকলে শিশুরা নিজেকে খাবার থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখতে পারে। তবে এটা বেশ কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া শিশুর জিহ্বায় ঘায়ের আবির্ভাব ঘটলেও শিশুরা খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়। যদি শিশুর পেটে কিংবা অন্ত্রে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

৪। খাবারে এলার্জি

খাবারে এলার্জি – শিশু না খাওয়ার আরেকটি কারণ। খাদ্যে এলার্জির কারণে অনেক শিশুই স্বাভাবিক খাবার খেতে চায় না। ৪ থেকে ৮ শতাংশ শিশু খাবারে এলার্জির কারণে অনেক খাবার যেমনঃ ফল, শাক, ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি খায় না। তাই খেয়াল রাখুন, খাবারে বাচ্চার এলার্জি হচ্ছে কিনা।

৫। খাবারের স্বাদ

শিশুরা খাবারের স্বাদ ঠিকমত গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে, বার বার একই ধরনের খাবার গ্রহণের ফলে শিশুরা কিছুটা বিরক্ত বোধ করে। তাই চেষ্টা করুন শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করতে। প্রতিদিন তাকে জোর করে নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে খাবারের প্রতি অনীহা আরো বেড়ে যায়। এজন্য একই খাবারকে নতুনভাবে রান্না করুন।

৬। অযথা জোর করবেন না

খাওয়ানোর জন্য শিশুদেরকে অযথা জোর করবেন না। শিশুরা সাধারণত আনন্দের সহিত খেতে পছন্দ করে। কিন্তু যখন তাকে একবার জোর করে খাওয়ানো হয় তখন সে প্রচণ্ড ভয় পায়। আর এতে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমতে থাকে। এমনকি এক সময় খাবারের প্রতি তার বিতৃষ্ণাও দেখা দিতে পারে।

৭। সময়সূচী অনুযায়ী খেতে দিন

বয়সের পার্থক্য অনুযায়ী শিশুদের ক্ষুধা লাগার কিছুটা ভিন্নতা আছে। নিয়ম বা সময়সূচী অনুযায়ী শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললে খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। শিশুকে কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খাচ্ছে না কিংবা খেতে চাইছে না – এমন অযুহাত দেখিয়ে তাকে বার বার খাবার দিবেন না। যদি শিশু একেবারেই খেতে না চায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন, যখন-তখন খাবার দিলে বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ কাজটি থেকে বিরত থাকুন এবং বাচ্চাকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

৮। খাবারের বিরতি

বয়সভেদে শিশুদের খাবারের মাঝে কিছুটা বিরতিও প্রয়োজন। কেননা, খিদে না লেগেই বাচ্চাকে খাবার দিলে সে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে।

গবেষণায় এটা দেখা গেছে, ২ থেকে ৩ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। আর এই সময়টাতে যদি শিশুকে অন্য কোনো খাবার দেওয়া না হয় তবে তার পরিপূর্ণভাবে ক্ষিধা লাগবে। অর্থাৎ শিশু স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার গ্রহণ করবে।

আবার, ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে এই বিরতির সময়টা শিশু বয়স থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত একটু করে বৃদ্ধি পাবে। এক সময় বড়দের মতো তিন বেলা খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৯। খাবার সময় কার্টুন বা টিভি দেখা নয়

অনেক সময় শিশুরা খেতে না চাইলে তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য আমরা বেশ কিছু ভুল পন্থা অবলম্বন করি। আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো টিভিতে তাদের পছন্দসই কার্টুন দেখা।

হ্যা, টিভিতে কার্টুন দেখাতে দেখাতে শিশুদের খাওয়ানো হলে এক সময় তারা সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং টিভি না দেখলে খাওয়া মুখেই নিবে না। এছাড়া টিভির প্রতি মনোযোগ থাকার কারণে তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। এমনিতেই বেশি সময় ধরে টিভি দেখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এমনকি টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, টিভির দিকে মনোযোগ থাকার জন্যে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না।

১০। খাবারে ভিন্নতা আনুন

আপনি, আমি, আমরা কেহই প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করি না। সবাই একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করি। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তাই প্রতিদিন তাকে একই রকমের খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র আনুন। যদি শিশু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে তবে সে যা খেতে চায় সে অনুযায়ী খাবার বানিয়ে দিন। পছন্দের খাবারটি তাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে পরিবেশন করুন। তবে তাকে বাইরের খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে অবগত করুন।

১১। বাইরের খাবার

বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না এমনটা নয়। কেননা, বড়দের সঙ্গে বিয়ে কিংবা বার্থডে পার্টিতে গেলে, পরিবারের সাথে ঘুরতে গেলে নিশ্চয়ই তাকে বাইরের খাবার খেতে হবে। তা ঠিক আছে। কিন্তু প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে রুটিন করে তার জন্য চকলেট, কেক, পটেটো কিংবা মুখরোচক খাবারগুলো আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না। মুখরোচক এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

১২। যখন তখন খাবার

রুটিন অনুযায়ী শিশুদের খাবার খাওয়াই ভালো। কিন্তু শিশুরা যখন তখন খাবার খেলে যথাসময়ে আর তাদের খিদে লাগবে না। আর সে খেতেও পারবে না।

দেখা যায়, অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে ফিরেই বিস্কিট-চানাচুর কিংবা ফলমূলের রস খেয়ে থাকে। আর তার এক ঘণ্টা পরেই হয়তো দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় হয়ে যায়। এ সময় সে ঠিকমত খেতে চাইবে না, কেননা ইতোমধ্যেই তার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে।

আবার অনেক শিশুকে দেখা যায় সারাদিনে যখন তখন বিস্কুট, কলা, রুটি, লজেন্স কিংবা আইসক্রিম এর মত খাবারগুলো পেট ভর্তি করে খেতে। যার ফলে মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খেতে চায় না।

১৩। অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো

ছোট বাচ্চাদের পেটও ছোট থাকে। এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবাই জানি, শিশুদের ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধই তাদের জন্য উত্তম এবং পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু ছয় মাস হওয়ার পরেও শক্ত খাবার না দিয়ে শিশুকে আগের মতই বুকের দুধ খাওয়ালে অন্য খাবারের প্রতি তার অনীহা হতে পারে। কেননা, ছোট পেটে দুধ খাওয়ার পরে অন্য খাবার গ্রহণের পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই ৬ মাস পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দিয়ে শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য জায়গা করে দিতে হবে।

১৪। খাবারের ধরণ বা গন্ধে

খাবারে গন্ধ বা খাবার পরিবেশনের ধরনে অনেক শিশুরই সমস্যা থাকে। যেমনঃ অনেক শিশু আছে যারা অতিরিক্ত নরম খাবার পছন্দ করে না। এছাড়া গন্ধের জন্য তারা শাকসবজি ও ফলমূল খেতেও ‘না’ সূচক শব্দ ব্যবহার করে। একে texture sensitivity বলে।

১৫। মাছ, মাংস ও ডিম খায় না

অনেক শিশুই আছে যারা মাছ, মাংস ও ডিম খেতে পছন্দ করে না। শিশুরা এসব গ্রহণ না করলে একেবারেই টেনশন নিবেন না। শুধু আপনাকে খাবার পরিবেশন এর ধরনটা পাল্টাতে হবে। মাছ খেতে না চাইলে তাকে ফিশকাটলেট বানিয়ে দিন। চিংড়ির সাথে নুডুলস রান্না করুন। মাংস খেতে না চাইলে তাকে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব বানিয়ে দিন। ডিম খেতে না চাইলে সুজির সাথে বা খিচুড়ির সাথে ডিম রান্না করুন। ডিমের স্যুপ বা চপও দিতে পারেন।

খাবার গ্রহণে শিশুর আগ্রহ বাড়ানোর উপায়

শাকসবজি, রুটি, মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস ও ফলমূল সব কিছুই শিশুকে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। আর তাই জানা প্রয়োজন নানা ধরনের রন্ধন পদ্ধতি। একই রকমের খাবার বার বার খেতে না দিয়ে ঐ খাবারকে ভিন্নভাবে প্রস্তুত করুন এবং বাচ্চার সামনে পরিবেশন করুন। দেখবেন, বাচ্চা ঠিকই তা গ্রহণ করবে।

বাচ্চা যখন প্রথম খাওয়া শুরু করে তখন থেকেই বিচি ছাড়া পটল, আলু, ঝিঙা, গাজর, জালি, পেঁপে ইত্যাদির মত সবজিগুলো দেওয়া যেতে পারে। এরপর এক বছর বয়সে তাকে শাক খেতে দিন। তবে এটা দেখুন হজম হয় কিনা। শাক ঠিকমত হজম হলে তাকে অন্যান্য শাক খেতে দিন। ফলের মধ্যে প্রথমে চটকানো কলা, লেবু বা মাল্টার রস, আপেল, আনারের রস খেতে দিন। ধীরে ধীরে দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি ও শক্ত দাঁতের ওপর নির্ভর করে অন্যান্য ফলমূল দেওয়া যেতে পারে।

সেরিলাক (পটের দুধ) শিশুদের খিদে নষ্ট করে দেয়। এর বদলে শিশুকে সুজি, রুটি, ওটস, সাগু ইত্যাদি খাওয়ান। শিশুকে প্রথম থেকেই মাছ-শাকসবজি ইত্যাদি খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাহলে পরবর্তীতে এসব খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে না।

অনেক শিশু ডিম খেতে চায় না। এক্ষেত্রে তাকে খাওয়ানো যেতে পারে ডিমের স্যুপ বা পুডিং এবং রান্না করা ডিম। এছাড়াও পুডিং, ছানা, দই, মিষ্টি, সেমাই পারেন দুধের বদলে। শিশুর বর্ধনে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বেশি থাকা দরকার।

শিশুর খাদ্যতালিকায় শাকসবজি কম থাকলেও প্রবলেম নেই। তবে দিনে অল্প হলেও রাখতে হবে। মাঝে মাঝে শাক ভাজি বা খিচুড়ির ভিতরে দিয়ে রান্না করে খাওয়ান।

সরাসরি মাংস খেতে না চাইলে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব করে খাওয়ান। নুডলসের সাথে ডিম, মাংস, চিংড়ি, সবজি ইত্যাদি দিয়ে আরো মজাদার করে তুলুন। সরাসরি মাছ খেতে না চাইলে তাদের মাছের বড়া করে দিন।

টেস্টিং সল্ট শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই শিশুর খাবারে টেস্টিং সল্ট দেওয়া একেবারেই নিষেধ। শিশু যেন আলগা লবণ না খায়। এতে শিশুর স্বাদ নষ্ট হয়। শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে চা দেওয়া যাবে না। তবে গরম স্যুপ দেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব


শিশুর খাবারে অরুচি কেন হয়?

বাচ্চাদের খাবারে অরুচি খুব কমন একটা বিষয়। কোন অসুখ, মন খারাপ বা কৃমি জনিত সমস্যার জন্য বাচ্চার খাবারে অরুচি হতে পারে। এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ এটা খুব সাময়িক। যতটা পারেন বাচ্চাকে কম চাপ দিন, পড়াশোনা নিয়ে বেশি চাপ দিবেন না, ভয় দেখাবেন না। ভয় ও মানসিক চাপ অরুচির প্রধান কারণ। তাই বাচ্চার সাথে বন্ধুর সাথে মিশুন, তাদের উৎসাহ দিন, ভালোবাসা দিন, খেলতে দিন। বাচ্চারা খেলা করলে এমনিতেই খাবারে অরুচি চলে যাবে। তবে খাবার একটু মজাদার এবং ভিন্ন রেসিপিতে পরিবেশন করুন। তার পছন্দের খাবার দিন।

আমার মতে নিজে থেকে স্বাভাবিক ভাবে ঠিক হয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাই করা উচিত। একটুতেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর অভ্যাস বাদ দিন। বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করুন, বাচ্চাকে দূর্বল বানাবেন না। সামান্যতেই ভয় না পেয়ে একটু সময় নিয়ে দেখুন ঠিক হয় কিনা, কারণ শরীরের বেশির ভাগ সমস্যা শরীর ওষুধ ছাড়াই এমনিতে ঠিক করে। তাই খুব বড় কোন সমস্যা না হলে ডাকারের কাছে যাবেন না, এমনিতেই শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের থেকে বেশি।


শিশুর খাবারে অনিহা কেন হয়?

আমার একটি বাস্তবিক অভিজ্ঞতা আপনাদের বলি, হয়তো আপনিও খেয়াল করে দেখেছেন বিষয়টা- অসহায় গরীব বাচ্চারা যা দেন তাই খায়, খাব না কথাটা তারা বলে না! কিন্তু যে বাচ্চার পিছনে বাবা-মা লেগে থাকে, বাবা এটা খাও, ওটা খাও। অথচ শিশু খেতে চায় না। এর কারণ কি ভেবে দেখেছেন? উত্তর- সহজলভ্যতা। মানুষের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল যেটা সে সহজে পায় সেটার মূল্য দেয় না।

বাচ্চাদের সব সময় খাবারের কথা বলবেন না, কথায় আছে না, খিদে লাগলে বাঘে ধান খায়। এজন্য তার খিদে লাগার সময় দিন। এজন্য তাকে একটু খেলার সময় দিন, লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করলে খিদের জ্বালায় আপনাকে সময় দিবে না। অনেকে বাচ্চাদের দোকানের খাবার যেমন- চিপ্স, চকলেট ইত্যাদি খিদে নষ্ট করা খাবার বেশি দেয়, ফলে বাচ্চার ক্ষুধামন্দা হয়।

শিশুদের এক খাবার সব সময় দিবেন না, খাবারে একটু বৈচিত্র আনুন। একই খাবার ভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করুন। যে খাবার সে খেতে চায় না তা একটু ভিন্ন রেসিপিতে পরিবেশন করুন। বাচ্চারা মজাদার খাবার পছন্দ করে বেশি, এজন্য খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনুন।

খাবারের প্রয়োজনীয়তা বা মূল্য না বুঝলে সেটার আনন্দ থাকে না। অসহায় গরীব বাচ্চাদের শুধু ভাত দেন দেখবেন খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। কিন্তু যত বাহানা আপনার বাচ্চা করে। এর কারণ আপনি নিজেই। আপনি তাকে বেশি মূল্য দিয়ে ফেলেছেন। আমার মা ছোটবেলায় আমাকে সব খাবার খাওয়া শিখিয়েছেন।

আমি যদি কোন খাবার খেতে পছন্দ না করি সেটা টানা তিন দিন চলত, অর্থাৎ আমি নিরামিষ খেতে চাইতাম না, তাই আমার মা অন্য তরকারি বাদে শুধু নিরামিষ রান্না করে রাখতেন। তখন আর কোন উপায় না পেয়ে খিদের জ্বালায় নিরামিষ দিয়ে ভাত খেতাম। এভাবে আমি সব খাবার খাওয়া ছোটবেলা থেকে শিখেছি। এখন ম্যাচে বা হোস্টেলে থাকলে আমার কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু আছে যারা আমিষ না হলে খেতেই পারে না। ছোটবেলায় যদি তাদের বাবা-মা সব খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করাতেন, তাদের বাহানা বা জেদের গুরুত্ব না দিতেন তাহলে তারা আজ কষ্ট করে না খেয়ে থাকতে হয় না।

তাই আমার ব্যক্তিগত সাজেশন হবে আপনি বাচ্চাদের সব খাওয়ার অভ্যাস করান। খেতে না চাইলে চুপ থাকেন, খাবার নিয়ে তাকে বলতে যাবেন না খাও। তার জেদ বা বাহানার কথা শুনবেন না। দেখবেন সে নিজে থেকে খাবার খেতে শুরু করবে। ছোট থেকেই বাচ্চাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দিন। মন খারাপ করে, বা জেদে আপনার বাচ্চা না খেয়ে থাকলে শুকায় যাবে, ক্ষতি হবে এমনটা ভাববেন না, কারণ বাচ্চারা বড়দের মত খিদে সহ্য করতে পারে না। তাই যখন খিদে লাগবে তখন দেখবেন ঠিকি খেতে বসেছে।


খাবারে শিশুর রুচি বাড়ানোর উপায় কি?

– খাবার আধা ঘন্টা আগে জল পান করান।
– শিশুদের পছন্দমতো খাবার বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। এতে শিশুর খাবারের চাহিদা বাড়বে।
– জিঙ্কের অভাব ক্ষুধা ক্ষতির জন্য দায়ী, তাই জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়ান। কাজু বাদাম, গম, কুমড়া ইত্যাদি জিংক সমৃদ্ধ।
– আপনি যদি কোনো খাবার অপছন্দ করেন তবে তা শিশুর সামনে বলবেন না।
– শিশুদের জোর করে খাওয়াবেন না।
– খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করুন।
– শিশুদের একই খাবার প্রতিদিন খাওয়াবেন না। সপ্তাহে সাতদিন শিশুর খাবারের রেসিপি তৈরি করুন।
– মাকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। মাকে দেখে শিশু ওই খাবার খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করবে।
– স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি উৎসাহিত করতে শিশুদের পার্কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন।
– স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য পুরস্কার দিন ও প্রশংসা করুন।
– শিশুর মধ্যে একসঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
– খাবার খাওয়ানোর সময় গল্প, কবিতা ও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলুন।

আশা করি, আপনার শিশুর খাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, বাবা-মা হিসেবে একটু কৌশলী ও ধর্যশীল হলেই বেশিরভাগ সমস্যা সহজে সমাধান হয়ে যায়। তাই আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন, ছোট বেলা থেকে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন, উৎসাহের সাথে নিজের ইচ্ছায় খাবার গ্রহণে অভ্যাস গড়ে তুলুন। সঠিক পুষ্টি এবং সুসাস্থ্য নিশ্চিত করুন।

আরো পড়ুন – নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায়

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে: শিশুদের কণ্ঠ সাধারণত বেশ তীক্ষ্ণ হয়। তাই শিশুদের কান্না কারো কাছেই পছন্দের মত কোনো বিষয় নয়। এজন্য শিশু কাঁদলে প্রতিটি বাবা-মাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং বাচ্চার কান্না দ্রুত থামানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন।

একটা শিশু বিভিন্ন কারণে কান্না করতে পারে আবার কখনো তারা কারণ ছাড়াই কান্না করে। আবার নতুন বাবা মায়েদের পক্ষে কান্নার নির্দিষ্ট কারণ জানা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ তাদের শিশু লালন পালনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না।

কিন্তু বিশেষভাবে মায়েরা শিশুর কান্নায় খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মনে করেন শিশু হয়তোবা বুকের দুধ ঠিকমত পাচ্ছে না। তাদের বাড়তি খাবার প্রয়োজন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর একমাত্র ও প্রধান খাদ্য। একেবারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ সময়টাতে শিশুকে অন্য কিছু খাবার না দেওয়াই ভালো।

শিশুর কান্নার কারণ ও কান্না বন্ধ করার উপায়

শিশুরা কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় তাদের কেবল দুটি ভাষা; একটি হলো কান্না আরেকটি হাসি। কিন্তু শিশুরা সাধারণত এমনি এমনি কাঁদে না। কেননা, তারা কান্নার মাধ্যমে ক্ষুধা, বিরক্তি, অস্বস্তি, ভয় কিংবা যে কোনো প্রয়োজন প্রকাশ করে। জন্মের পর প্রথম ৩ মাস পর্যন্ত একটি শিশু কোনো কারণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ২৪ ঘন্টায় তিন থেকে চার বার কান্না করে। এছাড়া অনেক সময় তারা কান্নার মাধ্যমে আপনার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমিডি জানিয়েছে, শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কিছু কারণের কথা। দেখে নিন তো আপনার আদরের বাবুটি এসব কারণেই বেশি কাঁদে কিনা?

১। ক্ষুধা লেগেছে কিনা?

শিশুর কান্না করার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্ষুধা। কান্না করার আগেই শিশুকে খেতে দেওয়া উচিত। কেননা, অতিরিক্ত কান্না শিশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে শিশুরা কান্না করলেই আমরা ধরে নেই যে তাকে ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু এমনটা সব সময় হয় না। হয়তোবা, পিঁপড়ের কামড়ে বা কোথাও আঘাত প্রাপ্ত হলেও বাচ্চা কান্না করতে পারে। কিংবা অনেক সময় পেট ভালোভাবে না ভরলেও শিশু কান্না করতে পারে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন, শিশুর ক্ষিধা পেয়েছে?

ক্ষুধা পেলে,

  • শিশু অস্থির হয়ে ওঠে।
  • ঠোঁট কামড়াতে থাকে।
  • মুখে বার বার আঙ্গুল দেয়।
  • কাঁদতে শুরু করে।
  • গালে হাত লাগানো হলে তাদের মাথা হাতের দিকে ঘোরায়

এই কয়েকটি লক্ষণ দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন শিশুর ক্ষুধা লেগেছে। এছাড়া যদি আপনার কখনো এরকমটা মনে হয় যে শিশুর ক্ষিধা লেগেছে তাহলে বাবুর হাতটি গালের দিকে ঘুরিয়ে দিন। বাবু যত তার হাতটি মুখে দেয় তাহলে বুঝতে হবে বাবুর ক্ষিধা লেগেছে।

২। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডার কারণে

গরম কিংবা ঠাণ্ডা উভয়টাই শিশুদের অপছন্দ। তাই অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠাণ্ডার কারণে শিশুরা কেঁদে ওঠে। কিভাবে বুঝবেন শিশুর অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম লাগছে?

  • প্রতিবার খেলাধুলার পর আপনি যখন তার নোংরা পোশাকগুলো পরিবর্তনের জন্য দেহ থেকে খুলে ফেলেন তখন শিশুরা কেঁদে ওঠে।
  • ন্যাপি পরিবর্তন করার সময় যখন তার জামা খুলে ঠান্ডা ও ভেজা টিস্যু দিয়ে মোছেন, তখন সে ঠান্ডা অনুভবের কারণে কাঁদে।
  • প্রতিবার গোসলের সময় শিশুকে যখন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভেজান তখনও শিশু কেঁদে ওঠে।
  • পায়খানা করার পর শিশুকে যখন টিউবওয়েল কিংবা টেপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন তখনও শিশু কাঁদে।
  • নবজাতককে উষ্ণ রাখতে গিয়ে বাড়তি পোশাক পরিয়েছেন। এতে অতিরিক্ত গরম কিংবা অস্বস্তি বোধের কারণে শিশুরা কাঁদতে শুরু করে।

এ ছাড়াও নতুন পরিবেশে গেলে, ব্যথা পেলে বা ভয়ের কিছু দেখলে, হঠাৎ জোরে কোনো শব্দ শুনলে, নতুন মানুষ দেখলেও শিশুরা কান্না করতে পারে।

৩। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য

দীর্ঘসময় ধরে খেলাধুলার কারণে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে যায়। আর তখনই তাদের প্রয়োজন হয় ঘুমের। সাধারণত আমরা বড়রাই একটু ক্লান্ত হলে বা সারাদিনের পরিশ্রমের পর একটা ফ্রেশ ঘুম না দিলে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তাই বিছানায় গা দিতেই চলে যাই গভীর ঘুমের ঘোরে। কিন্তু শিশুরা তো আর এ কাজটি একা একাই করতে পারে না। তাই তারা কান্না শুরু করে দেয়। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা ঘুমের জন্য কান্না করছে?

ঘুম পেলে,

  • বাচ্চাদের চোখে পানি আসতে থাকে।
  • বাচ্চারা অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে।
  • নাক ও মুখ চুলকাতে থাকলে।
  • ঘাড়ের মধ্যে মাথা রেখে শান্ত থাকলে।
  • অস্থিরতাবোধ করলে।
  • প্রতিনিয়ত নিয়মমাফিক ঘুমের টাইম থাকলে

এছাড়াও আপনি তার কান্নার ধরণ (বিরক্তিকর কান্না/বিরক্তিকর নয় এমন কান্না) দেখেও বুঝতে পারেন সে ঘুমের জন্য কাঁদছে নাকি অন্য কিছুর জন্য। অথবা এটাও ভেবে দেখতে পারেন সে পূর্বে কখন ঘুমিয়েছিল, এখন আবার ঘুমাবে কিনা। যদি এমনটা মনে হয় তাহলে তার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ঘুম পারিয়ে দিন কিংবা তাকে কোলে নিয়েও ঘুম পাড়াতে পারেন।

৪। ভেজা ডায়াপার বা ডায়াপার নোংরা হলে

বেশ কিছু শিশু অনেকক্ষণ ধরে নোংরা ডায়াপার সহ্য করতে পারে যদিও এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু শিশু ডায়াপার নোংরা হলেই অস্বস্তিবোধ করে ও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। অনেকসময় মায়েদের অবহেলার কারণেও শিশুরা নোংরা ডায়াপর পরে দীর্ঘক্ষণ থাকে। কিন্তু এটা একেবারেই উচিত নয়। শিশুর ডায়পার নোংরা হলে সেটা সাথে সাথেই পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত।

নচেৎ নোংরা ডায়াপারের কারণে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে। ভেজা ডায়াপারের কারণেই যে বাচ্চা কাঁদে তা কিন্তু না। বাচ্চার নরম ত্বকে কোনো জ্বালা যন্ত্রণা হওয়ার কারণেই কাঁদে। তাই ডায়াপার বদলানো নিয়ে অবহেলা করলে চলবে না। শিশুর মঙ্গল চাইলে নোংরা হলে তৎক্ষণাৎ তা পাল্টাতে হবে। আর মনে রাখবেন শিশুর ত্বকের জন্য র‍্যাশ ভালো কিছু নয়। তাই শিশুর জন্য বেছে নিতে হবে অধিক শোষণক্ষমতার কটন ডায়পার, যা নবজাতককে দিবে আরাম আর রাখবে র‍্যাশ মুক্ত।

৫। মা-বাবার সান্নিধ্য বা আদর চাওয়া

অনেক সময় শিশুরা মা-বাবার সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য কিংবা একটু আদরের জন্য কান্নাকাটি করে।

সন্তানের প্রথম বন্ধু হলো মা-বাবা। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই সন্তান মা-বাবাকে চিনতে পারে। তাদের শরীরের আলাদা গন্ধ, কণ্ঠ, হৃদস্পদন ইত্যাদি বুঝতে পারে। মা-বাবা যদি বাবুর সাথে কথা বলে, খেলে তাহলে সে আনন্দ পায়। তাই তারা আশেপাশে থাকলেই কোলে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে ও কেঁদে দেয়। আসলে শিশুরা মা-বাবার সাথে সময় কাটাতে চায়, তাদের সাথে খেলতে চায়, তাদের কথা শুনতে চায়।

একবার ভাবুনতো, তার খাওয়া ঠিক আছে, ঘুম ঠিক আছে, ডায়পারে সমস্যা নেই, সে কোনো আঘাত প্রাপ্ত নয়। এসব কিছু ঠিক থাকা স্বত্বেও সে কাঁদছে কেন? কি, একটুখানি আদরের জন্য নয়তো?

হ্যা, ঠিক তাই। এরকমটা ঘটলে শিশুকে আস্তে করে আদরের ভাষা বলতে বলতে কোলে তুলে নিন, তাকে চুমু খান, কথা বলুন। কোলে তুলে নেওয়ার পর হালকা করে দোল দিন। দেখবেন, আর কান্নাকাটি করছে না।

তো কি বুঝলেন, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যের জন্যুও শিশুরা কাঁদে।

৬। পেটের সমস্যা হলে

পেটের পীড়া শিশু কান্নার আরেকটি কারণ। পেট ব্যথা কিংবা পেটে কোনো সমস্যা হলে শিশুরা অনবরত কেঁদে উঠে। অনেক সময় খাওয়ার পরে শিশুদের পেটে গ্যাস হলে ব্যথার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই শিশুরা কান্না শুরু করে দেয়। মেডিক্যাল সাইন্সে এই সমস্যাটাকে বলে ইনফ্যান্টাইল কলিগ।

জন্মের পর সাধারণত প্রথম তিন মাস পর্যন্ত শিশুরা এ রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। আবার হজমের সমস্যাও শিশুর পেট ব্যথার জন্য দায়ী। এটা সাধারণত একেবারেই নবজাতক শিশুদের হয়ে থাকে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা পেটের সমস্যায় ভুগছে?

পেটে সমস্যা হলে শিশুরা,

  • বেশি নড়াচড়া করে।
  • বিশেষ করে হাত ও পা ভাঁজ করে ফেলে।
  • খাওয়ার পর পেটে গ্যাস হলে।
  • অস্থির হয়ে ওঠে।

এছাড়া মাসল বা হাড়ের কোনো ব্যথাও কারণও এমন কান্নার জন্য দায়ী। পেটের গোলমাল হয়ে থাকলে তাকে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়াতে পারেন। তবে আগে এটা শিওর হতে হবে যে, আপনার বাবুটা পেটের সমস্যার জন্যই কাঁদছে কিনা।

৭। দাঁতে অথবা কানে ব্যথা

অনেক সময় শিশুরা কোনো কারণ ছাড়াই বেশি বেশি কাঁদে। এটা সাধারণত ৬-৮ মাস বয়সী শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যদি আপনি এরকম কান্নার সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারেন তাহলে কয়েকটা কাজ করবেন।

  • আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে বাচ্চার দাঁতের মাড়ি দেখে নিন। মাড়িতে শক্ত কিছু উঠলে বুঝবেন শিশুর দাঁত উঠেছে। দাঁত ওঠার কারণে ব্যথা ও অস্বস্তিবোধ হলে শিশু কেঁদে ওঠে।
  • অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানেও ব্যথা হয়। যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদতে থাকে।

এরকমটা ঘটলে ডাক্তারি পরামর্শ নিন। শিশুকে যত্নে রাখুন।

৮। অপরিচিত পরিবেশ

শিশুরা সাধারণত পরিচিত পরিবেশ ও পরিচিত মানুষদের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। তাই হঠাৎ করে যখন তাদের অপরিচিত কোনো পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা কান্না শুরু করে দেয়। কারণ হৈ চৈ পূর্ণ নতুন পরিবেশে তারা অস্বস্তিবোধ করে এবং হঠাৎ বিকট কোনো শব্দ শুনে শিশুরা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে।

৯। অসুস্থ হলে

কিছু কিছু সময় শিশুরা দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকে। তারা বিছানায় শুয়ে থাকতে চায় না, কোলে উঠতে চায়, খেতে চায় না, বিরক্তিবোধ করে।

এরকমটা ঘটলে মনে রাখবেন, শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আর এ সময় তার শরীরে জ্বর থাকতে পারে।

তাই তার শরীরে ও কপালে হাত দিয়ে দেখতে পারেন শরীর গরম আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

১০। পছন্দের কোনো জিনিস এ উঠতে চাইলে

অনেক সময় শিশুরা কোনো জিনিস এর প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়। যেমনঃ মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি কিংবা সাইকেলে উঠতে তারা পছন্দ করে। পছন্দের জিনিসটি তাদের সন্নিকটে থাকলেই তারা সেটা দেখে কাঁদতে শুরু করে। সেটাতে উঠতে চায়।

খেয়াল রাখবেন, শিশুরা প্রয়োজনের কথা মুখে বলতে পারে না। তারা অঙ্গবভঙ্গি কিংবা আচার আচরণের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। আর খুব বেশি সমস্যা মনে হলে তারা কান্না শুরু করে দেয়। শিশু কান্নাকাটি করবেই এটা নিতান্তই সত্য একটি বাক্য। আর তারা কান্নাকাটি করলে ভয় পাবেন না, বিরক্ত হবেন না। শিশুর প্রতি অধিক যত্নশীল হোন। ওদের বুঝতে চেষ্টা করুন এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে অপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১১। সিনথেটিক কাপড়

এ ছাড়া অনেক সময় সিনথেটিক কাপড় পরালে শিশুদের গায়ে অস্বস্তিবোধ হয়। এ ধরনের কাপড় পরালে গায়ে ঘর্ষণের ফলে শরীর কেটে যায় এবং কাঁটা অংশগুলো চিন চিন করে ও ব্যথা অনুভুত হয়। এতেও নবজাতক শিশুরা কেঁদে ওঠে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী?

যদি আপনার আদরের বাবুটি এক নাগাড়ে কান্না করতেই থাকে এবং তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে কয়েকটি জিনিস লক্ষ করতে হবে।

  • প্রথমে তার শরীরে ভালোভাবে লক্ষ করুন কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা।
  • এরপর হাত পা নড়ানড়া করে দেখুন। যদি শিশুটি আরো জোরে কান্না করে তবে বুঝতে হবে তার শরীরে ব্যথা হচ্ছে।
  • তার শরীর ও মাথায় হাত দিয়ে দেখুন স্বাভাবিকের তুলনায় খুব বেশি গরম অনুভুত হচ্ছে কিনা।
  • বাচ্চার পেটে হালকা চাপ দিয়ে দেখুন সে পেটের ব্যথায় আরো জোরে কাঁদছে কিনা।
  • কোনো কীটপতঙ্গ তাকে কামড় দিয়েছে কিনা নিশ্চিত হোন। অনেক সময় বিছানায় খাবারের টুকরা পড়লে পিঁপড়া কিংবা কোনো পোকামাকড় খাবার খেতে এসে বাচ্চাকে কামড় দিতে পারে।

এসব বাদেও যদি শিশু খুব অস্বাভাবিকভাবে কান্না করতেই থাকে তবে খুব দ্রুত চেষ্টা করুন নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

জন্মের পর শিশুর কাঁদে কেন?

প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে নিরিবিলিতে বেড়ে উঠতে থাকে৷ যেখানে কেউ তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা বা তাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করে না৷ সেই শান্তাবস্থাই তার পছন্দের পরিবেশ হয়ে ওঠে৷ কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হঠাৎই এক মুহূর্তে তার সবকিছু বদলে যায়, যা ওই টুকু একটা শিশুর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া কঠিনতম একটি বিষয়৷ তখন সে কাঁদতে শুরু করে।

জন্মের পর তার কান্নার ফলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা, পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়৷


জন্মের পর শিশু না কাঁদলে করণীয় কি?

জন্মের পর শিশু না কাঁদলে মনে করা হয় তার শরীরে অক্সিজেন ছড়িয়ে পড়তে কোনও সমস্যা হচ্ছে। তাই, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর না কাঁদলে, তার পিঠে মেরে তাঁকে কাঁদানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে প্রাথমিক কিছু সমস্যা থাকলে তা ঠিক হয়ে যায়৷


কেন শিশুরা অতিরিক্ত কাঁদে?

কান্না হলো কষ্ট বা হতাশা কমানোর কার্যকরী একটি মাধ্যম। যাদের বোঝার ক্ষমতা ভালো, সহজে মানিয়ে নেয় তারা কাঁদে কম। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠিক এই সমস্যাটাই থাকে, আবার অনেক বাচ্চা কান্নাকে চাহিদা পূরণের মাধ্যম মনে করে।

যেমন- আপনার বাচ্চা প্রসাব করছে বিছানায়, যেটা তার জন্য বিরক্তিকর। আপনি কাজে ব্যস্ত থাকায় সে দেরী সহ্য করতে না পেরে কাঁদে যাতে তা কান্নার শব্দে আপনি তা বুঝতে পারেন। আসলে শিশুরা এটা বোঝে তখনি যখন দেখে যে কান্না করলে তার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তখন সে এটাকে মাধ্যম হিসেবে নিয়ে নেয়।


বাচ্চা রাতে কাঁদে কেন?

বাচ্চা যে রুমে থেকে অভ্যস্থ সেই রুমের পরিবেশ বা তাপমাত্রা পরিবর্তন শিশুর কাছে অসস্তিকর লাগে। আবার রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শিশু একা অনুভব করে, আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেলে সে ভয় পেয়ে যায়, তখন কান্না করে সান্নিধ্য চায়।

এছাড়া পেটের সমস্যা, বা কোন অসুখ থাকলে তা যেহেতু রাতে বেশি বাড়ে তাই রাতে শিশুরা কাঁদতে পারে। তবে মা হিসেবে আপনি একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আসল কারণ।

আশা করি, আমাদের এই পদ্ধতি ও কারণগুলো আপনার মনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ভালো থাকুক আপনার সোনামণি। ভালো থাকুক, আপনার পরিবার।

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ – শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বাড়ানোর উপায় – Baby Brain

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ – শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বাড়ানোর উপায়: আমরা অনেকেই ভেবে থাকি, শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অটোমেটিক তাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। এতে বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। শিশুদের বুদ্ধি অর্থাৎ মেধা বাড়ানোর নানা কৌশল আছে। যা সময় মত প্রয়োগ করে শিশুর মেধা বাড়ানো যেতে পারে।

জন্মের সময়, আপনার শিশুর মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে (মিল্কিওয়েতে যতগুলি তারা রয়েছে!) আর প্রথম বছরেই সে কোটি কোটি ব্রেন-সেল সংযোগ স্থাপন করে, যাকে নিউরাল সিনাপেস বলে। বেশ আশ্চর্যকর, তাই না?

আপনি যখন শিশুর সাথে হাসিমাখা মুখে ভালোবাসার সহিত কথা বলেন তখন তার মস্তিষ্কের নিউরাল সিনাপেস এবং পথগুলিকে একসাথে মজবুত হওয়ার আরও বেশি সুযোগ করে দিচ্ছেন। যার ফলে, ঐ শিশুটি সহজে ভাষা শিক্ষা, যুক্তি এবং পরিকল্পনা দক্ষতা অর্জন করে। তাই শিশুর বুদ্ধির বিকাশে আপনাকে বাহ্যিক ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কেন হয় না?

  • প্রথমত, জিনগত বা অনেক সময় বংশগত কারণেও শিশুর মেধার বিকাশ হয় না।
  • পুষ্টিকর খাবারের অভাব থাকলে
  • মায়েদের স্বাস্থ্যজ্ঞানের অভাব না থাকার কারণে।
  • বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে এমন সময়টাতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও অত্যধিক ঔষধ ব্যবহারের কারণে।
  • গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগলে।
  • মায়েদের অসচেতনতার কারণে।
  • পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার অভাবে। কেননা, এই তিনটি জিনিস শিশুর বুদ্ধির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ভালো কাজের প্রশংসা না করে শিশুকে অনুৎসাহিত, তিরস্কার বা নিন্দা করলে।
  • এছাড়া অশোভন আচরণ ও পারিবারিক ঝগড়া শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

মেধাহীন শিশুর যে ধরনের সমস্যা হয়

সাধারণত মেধাহীন শিশুদের নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায় –

  • মেধাহীন শিশুরা সাধারণত রাগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
  • নিজেকে সব সময় লুকানোর চেষ্টা করে।
  • এ সমস্ত শিশুদের আচরণে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
  • বুদ্ধিহীন শিশুরা বড় হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে সরাসরি ব্যাহত করে।
  • জটিল সমস্যা সমাধানে ভয় পায়। কাজে অনীহা প্রকাশ করে।
  • খাবার গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে।
  • কোনো কিছু জিঙ্গাসা করলে চেষ্টা ছাড়াই ‘না’ সূচক জবাব পাওয়া যায়।
  • ব্যক্তিগত দক্ষতা লক্ষণীয় হয় না।
  • স্কুল কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক হয় না।
  • অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা লক্ষণীয় হয়।
  • পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়।

শিশুর বুদ্ধি বা ব্রেন বাড়ানোর উপায়

একজন শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে আপনার করণীয় বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরলাম –

১। জন্মের আগেই শিশুকে একটা ভালো পরিবেশ দিন

প্রেগন্যান্সির সময় আপনার স্বাস্থ্যবান থাকাটা খুবই জরুরি। তবে এটাও জেনে রাখুন, বেশ কিছু ঔষধ জরায়ুতে শিশুর মস্তিষ্কের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। প্রেগন্যান্সির সময় আপনি যদি মাদক সেবন করেন তাহলে এর পার্শ্‌বপ্রতিক্রিয়া শিশুর শরীর ও ব্রেনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শিশুর মাঝে আক্রমণাত্মক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় ধূমপান নিম্ন চতুর্থ শ্রেণির পড়ার স্কোরের সাথে যুক্ত।

২। শিশুকে নানা ধরণের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করুন

শিশুদের বুদ্ধিমান বানাতে তাদের উদ্বুদ্ধ রাখতে হয়। পাশাপাশি তাদের আগ্রহী করে তুলতে অভিনব সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হয়। কেননা, জীবনে ঘটে যাওয়া বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের সাহস বাড়িয়ে তোলে ও তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, দিনের পর দিন একই রকম গতানুগতিক জীবন আলস্য, স্থবিরতা ডেকে আনে।

৩। মায়ের দুধ

মায়ের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য। শিশুকে কমপক্ষে ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। কেননা, শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধ অপরিমেয় ভূমিকা পালন করে। ব্রাজিলের এক দল গবেষক সাড়ে তিন হাজার শিশুর উপর দীর্ঘদিন নজর রাখার পর এ সিদ্ধান্তে আসেন।

৪। তাদের প্রতিভা এবং আগ্রহকে উৎসাহিত করা

খেলাধুলা, নাটকের ক্লাস, সংগীত কিংবা নাচ, যাই হোক না কেন এসব নিয়ে যদি আপনার শিশুর আগ্রহ থাকে তবে তাকে ছোট বয়স থেকেই সুযোগ দিতে হবে। তবেই শিশুর প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে।

তবে বাচ্চার উপর নিজের অপূরণীয় ইচ্ছাগুলো কখনো চাপিয়ে দিবেন না। কারণ এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি চান শিশুকে ডাক্তার বানাতে, কিন্তু শিশু চায় গান গাইতে। আপনি জোর করে তাকে কোনো কিছু করাতে গেলেই সেটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই তাকে তার মতই বড় হতে দিন। বরং তার পাশে দাঁড়িয়ে তার উদ্দীপনা ও আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলুন। শিশুর মানসিক বিকাশে আপনাকে এভাবে সহযোগিতা করতে হবে।

৫। শিশুর সাথে কথোপকথোন করুন

আনন্দ ও উৎফুল্লতার সহিত হাসিমাখা মুখে শিশুর সাথে কথোপকথন করুন। শিশুর ছোট ছোট উচ্চারণগুলির প্রতিক্রিয়া জানান এবং আপনিও ছোট ছোট শব্দ তাকে শোনান। যেমনঃ ‘আমার সোনা বাবুটা’, ‘মিষ্টি বাবু’, ‘বাবুর লাল জামা’ ইত্যাদি। এইরকম বলার উপায়কে পেরেন্টটিস বলা হয়।

এর ফলে শিশু আপনার অতিরঞ্জিত মুখের ভাবগুলি এবং উচ্চারিত শব্দগুলি মনে রাখে। বক্তৃতা বোঝার এবং ভাষা তৈরির জন্য দায়ী শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষেত্রগুলিকে আপনাকেই জাগ্রত করাতে হবে। তবেই শিশুর ব্রেন পাওয়ার ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাবে।

৬। মার্তৃগর্ভেই শিশুকে শেখান

শিক্ষা গ্রহণের নির্ধারিত কোনো সময় নেই। শিশু সাধারণত মার্তৃগর্ভ থেকেই শেখা শুরু করে। মায়ের গর্ভে শিশুর বয়স যখন সবে মাত্র ৬ মাস তখন থেকেই শিশু আমাদের কথাগুলোর প্রতিক্রিয়া জানায়। যদি আপনি শিশুকে পূর্ণাংগ ব্যক্তিত্ব দিতে চান তবে তখন থেকেই আপনাকে কাজ শুরু করতে হবে। শিশুকে কোন দিকে আপনি নিয়ে যেতে চান সে কাজগুলো বেশি বেশি করুন।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রেগনেন্ট মা যদি গর্ভাবস্থায় কিংবা পরবর্তী সময়েও টিভিতে প্রচুর পরিমাণে নাচ গান দেখেন, তবে শিশুর অটোমেটিক নাচ গানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। পক্ষান্তরে, যদি নামাজ পরেন, ইসলামিক গজল শোনেন, মানুষকে ভালো ভালো কথা বলেন, তবে শিশু অটোমেটিক পরহেজগার হবে। এখন তাকে আপনি কোন পথে নিয়ে যাবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। তাই মায়ের পেটের কাছে মুখ নিয়ে তার সাথে গল্প করুন, ভালো ভালো কথা শোনান।

৭। জানা বা শেখার চেষ্টার প্রশংসা করুন, তার ক্ষমতাকে নয়

‘নতুন কোনো কিছু শেখার আগ্রহ’ যদি আপনার শিশুর মধ্যেও থেকে থাকে তবে তার এই গুণটি দমিয়ে যেতে দিবেন না। এ গুণটি সব বাচ্চাদের মধ্যে থাকে না। তাই এটা ধরে রাখতে তার শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বেশি বেশি প্রশংসা করুন।

গান শেখার জন্য তার চেষ্টা, সাইকেল চালানোর জন্য তার চেষ্টা, ছবি আঁকা শেখার জন্য তার চেষ্টা, এমনকি নতুন কোনো ভাষা শেখার জন্য তার চেষ্টা – এসব বিষয়কে উৎসাহিত করুণ। তাই বলে, যে জিনিসটা শিখলে তার জন্য পরবর্তীতে বিপজ্জনক হতে পারে তা থেকে দূরে রাখুন। শেখার চেষ্টা, জানার চেষ্টা শিশুর মধ্যে থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একমাত্র নতুন কিছু শেখার চেষ্টাটাই তাকে সহজেই সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিবে।

৮। হাত জড়িত গেম খেলুন

হাড়িপাতিল, ঘর বানিয়ে খেলা, পাখি উড়ে, হাতে তালি দিয়ে খেলা এমনকি বিভিন্ন ধরনের পুতুল খেলাগুলোও আপনার শিশুকে কাজের মধ্যে জড়িত রাখে এবং শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাত ব্যবহার করে এই ধরনের খেলাগুলো তাদের এটা শিক্ষা দেয় যে কীভাবে আমরা বিশ্বের সাথে শারীরিকভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করি। এছাড়া হাতে তালি দিয়ে খেলাগুলো শিশু ও আপনার উভয়ের জন্যই বেশ মজাদার।

৯। ব্যর্থতা ভীতিকর কিছু নয়

আপনি আমি সবাই এটা জানি যে সফলতা সহজ কোনো বিষয় নয়। আপনি কিন্তু জন্মের পরদিনেই হাঁটা শিখেননি, একদিনেই সাইকেল চালানো শিখেননি, জন্মের পরদিনেই কথা বলতে শিখেননি। জীবনে কোনো কাজ করতে গিয়ে একটা ভুলও হয়নি এমন নজির খুব কম বা নেই বললেই চলে।

তাই শিশুর করা ভুলগুলোকে শিক্ষার একটা অংশ হিসেবে ধরে নিতে হবে। শিশুরা যত বেশি ভুল করবে তত বেশি শিখবে। তবে আপনাকে এখানে বিচারক হিসেবে কাজ করতে হবে এবং তার ভুলটি শুধরিয়ে তাকে সঠিক জিনিসটা গ্রহণে সাহায্য করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ভুল করলে বাচ্চাদের ভবিষ্যতে সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষমতা বাড়ে।

১০। মনযোগী হন

যখন আদরের বাবুটা কোনো কিছু নিতে বা দেখতে ইঙ্গিত করবে তখন আপনি ছোট ছোট বাক্যে ঐ জিনিসটি সম্পর্কে কয়েকটি মন্তব্য করুণ। ধরুন, বাবুটা একটা শার্টের দিকে ইঙ্গিত করছে। তাহলে আপনি বলতে পারেন ‘ওয়াও! কি সুন্দর লাল শার্ট!’, ‘এটা পরলে তোমাকে দারুণ লাগবে।’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবে বাচ্চা আপনার কথার মধ্য থেকে শিক্ষা খুঁজে নিবে। তাই বাবুর ব্রেনকে পাওয়ার করার জন্য নিজেকেও মনোযোগী হতে হবে।

১১। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ

প্রতিভাবান বাচ্চারা সাধারণত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ চায়। কেননা, তারা তাদের নিজস্ব গতিতে শিখতে ভালোবাসে। তারা হাজারো প্রশ্নের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। আর সেগুলোর সঠিক উত্তর জানাটা তাদের জন্য অতীব জরুরি। তাই চলতি শিক্ষার পাশাপাশি শিশুর সেই বিশেষ চাহিদা পূরণে অভিভাবকদের উচিত শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা।

১২। শিশুর নিজের দেহের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করুণ

পড়তে, খেলতে বা ডায়াপার বদলানোর সময় শিশুর পেট ও মাথার চুলগুলো আলতোভাবে নাড়িয়ে দিন। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল শিশুদের শরীর ও মাথায় কম স্পর্শ পড়ে সে সকল শিশুদের বুদ্ধি তাদের স্বাভাবিক বয়সের তুলনায় অনেক কম হয়। পাশাপাশি শিশুদের শরীর স্পর্শ করে কথা বললে তারা আপনার প্রতি মনযোগী হয়। আপনি চাইলে তাকে বডি পার্টস সম্পর্কে শুরু থেকেই জানাতে পারেন। যদিও সে কথা বলতে পারে না, কিন্তু আপনার মুখাভিনয় ও শব্দ বোঝার চেষ্টা করে।

১৩। শিশুর সক্ষমতা যাচাই করুন

বর্তমানে স্কুলগুলোতে কম্পিটিশন ধরে রাখার জন্য শিশুদের বাড়তি চাপ দেওয়া হয়। ফলে তাদের শরীরের ওজনের থেকে ব্যাগেরই ওজন অনেক বেশি হয়। তাই স্কুলের এই বাড়তি চাপ দেওয়ার পূর্বে শিশুর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা সম্পর্কে আপনাকে যথেষ্ট ধারণা নিতে হবে। কেননা, সে তো শূণ্য জ্ঞান নিয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয়েছে।

তাই তার অনেক ধরনের অজানা প্রবলেম থাকতে পারে। হয়তোবা, আপনার শিশু বোঝে কম অথবা তার মনোযোগের সমস্যা থাকতে পারে, কিংবা তার অতিমাত্রায় চঞ্চলতার সমস্যা থাকতে পারে। সুতরাং শিশুর কাছে ভালো ফিডব্যাক পেতে চাইলে শিশুকে আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট করে তুলুন।

১৪। শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন

শিশুর মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও সতেজ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাবারের কোনো জুড়ি নেই। কেননা, পুষ্টিকর খাবারগুলো শিশুর বুদ্ধির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মেধা নষ্ট করে এমন ক্ষতিকর খাবারগুলো শিশুর ডায়েট চার্ট থেকে বাদ দিতে হবে। পক্ষান্তরে, শিশুকে রুটিন মাফিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, বেশি করে প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবারগুলো খাওয়াতে হবে।

১৫। মেধার বিকাশে শিশুর চাই পর্যাপ্ত ঘুম

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অপর্যাপ্ত ঘুম শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বিঘ্ন ঘটায়। খেয়াল করে দেখুন তো, মিনিমাম ৬ ঘন্টার কম ঘুম হলে সারাদিনে আপনাকে কতটা বিরক্ত লাগে। কোনো কাজে ঠিক মত মন বসে না, চোখে সবসময় একটা ঘুম ঘুম ভাব থেকেই যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমই দূর করতে পারে সারাদিনের ক্লান্তি। তাই শিশুর মেধার বিকাশে পর্যাপ্ত ঘুমের নিশ্চয়তা করুন।

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয়

এগুলো ছাড়াও শিশুর মেধার বিকাশে নিচের বিষয়গুলোর দিকেও নজর রাখা অতীব জরুরি –

  • সৃষ্টিশীল যে কোনো কাজে শিশুকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত রাখুন। এতে সে নতুন নতুন জিনিস জানবে ও শিখবে। যার ফলে বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।
  • শিশুর প্রশংসা করুন এবং তার ভালো কাজগুলোর জন্য সব সময় উৎসাহিত করুন। এতে সে আরো মনযোগী হবে এবং পূর্বাপেক্ষা অধিক ভালো কাজ করবে।
  • শিশুকে জানার জন্য তাকে বেশি বেশি সময় দিন। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। তার ছোট ছোট চিন্তাগুলোর সঙ্গী হোন। ছুটির দিনগুলোতে চেষ্টা করুন তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে। তাকে প্রকৃতি সম্পর্কে জানান। এতে তার বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।
  • পারিবারিক ঝগড়া কিংবা অশোভন আচরণ শিশুর সামনে কখনোই করবেন না।
  • শিশুকে খারাপ ভাষায় গালামন্দ করা, রাগ দেখানো, ধমক দেওয়া, উচ্চ স্বরে কথা বলা ইত্যাদি কাজগুলো করবেন না। এতে বুদ্ধির বিকাশে বিঘ্ন ঘটে।
  • সমবয়সী কিংবা পরিবার ও সমাজের অন্য শিশুদের সাথে আপনার শিশুকে খেলাধুলার সুযোগ করে দিন। এতে তাদের মেধার বিকাশ কয়েকগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে।
  • আপনার অপূরণীয় ইচ্ছাগুলো শিশুর ওপর কখনোই চাপিয়ে দিবেন না। তাকে পছন্দ ও দায়িত্ব নেওয়া শেখান। এতে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
  • নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। নিজে কখনো শিশুর সামনে নেশাদ্রব্য পান করবেন না। পারলে অন্য নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিদের থেকেও দূরে রাখুন।
  • শিশুকে পরিবেশের বিভিন্ন জিনিস ও নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। এতে মেধার বিকাশ ঘটে।
  • শিশুকে ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করুন।
  • ভয় দেখিয়ে, মারধর করে ভুলেও বাচ্চাকে শেখাতে যাবেন না।
  • গল্প শুনলে সাধারণত শিশুর কল্পনাশক্তি বাড়্রে। তাই রাতে বিছানায় শুইয়ে তাকে গল্প শোনাতে পারেন।
  • বাচ্চার মগজের ব্যায়াম বাড়ান। নানা বিষয়ে বই পড়ার উত্সাহ দিন।
  • শুধু পড়ালেখা নয়, বাচ্চা যেন রোজ খেলার সুযোগও পায়।
  • বাচ্চার প্রযুক্তির ব্যবহার যেন মাত্রা ছাড়া না হয়, সেদিকে নজর রাখুন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

কিভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চা অসীম প্রতিভাধর?

– যে কোনো বিষয় সম্পর্কে সব সময় প্রশ্ন করা।
– মনে রাখার অস্বাভাবিক ক্ষমতা পরিলক্ষিত হওয়া।
– প্রখর চিন্তাশক্তি ও ভেবে উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা।
– খেলা নিয়ে নতুন নিয়মকানুন তৈরির ক্ষমতা।
– অল্প বয়সেই পড়তে শেখা।
– দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া।
– সংগীত বা নাচের প্রতি আগ্রহ।
– বিশ্বে বর্তমানে ঘটছে এমন চলমান ঘটনাবলী সম্পর্কে ধারণা।
– কোনো কিছুকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগ্রহ।
– উচ্চমানের রসিকতাবোধ থাকা।


বাচ্চাদের বুদ্ধি বৃদ্ধির খেলা কোনগুলো?

দাবা- খেলাকে বুদ্ধিমত্তার বৃদ্ধি সাধনের প্রথম ধাপ হিসেবে ধরা যেতে পারে। ভেনিজুয়েলার ৪000 শিক্ষার্থীর উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে দাবা খেলে এমন ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই ৪ মাসের মধ্যে আইকিউ স্কোর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সুডোকু- সুডোকু খেলাকে ব্রেইনগেম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি শিশুর মেধা বিকাশে ও মস্তিষ্ক বিকাশে ব্যাপক সাহায্য করে। এই মজার খেলা আপনার বাচ্চার মধ্যে ইউনিটি বা দলগত শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান দেয় একই সাথে শিশুকে মনযোগী ও ঠাণ্ডা মেজাজি হতে সাহায্য করে।

লুডু- বাচ্চার মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে আরও একটি অন্যতম সহযোগী খেলা লুডু। বাচ্চার সাথে সুসম্পর্ক গড়তে লুডু খেলতে পারেন। বাচ্চাকে সাপ লুডু খেলার সাথে আগে পরিচয় করিয়ে দিন। একটু একটু করে খেলার নিয়ম কানুন গুলো বুঝিয়ে দিন। মজার এই খেলাটি বাচ্চাদের অংক ভীতি থেকে বের করে আনবে।

পাজল গেম- বাচ্চাকে মেধাবি করে তোলে এই পাজল গেম। মজাদার এই খেলাটি আপনার বাচ্চাকে মনযোগী করে তুলবে। শুধু একটু কষ্ট করে বাচ্চাকে খেলার মজার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।

কিউব- বাচ্চাকে বুদ্ধিমান করে তুলতে বা অঙ্ক ভীতি দূর করতে কিউব গেম দারুণ কার্যকরী। বাচ্চাকে ঘরমুখী করতে একটা রুবিস কিউব দিয়ে তার মজা ধরিয়ে দিন, এতে যদি আপনার বাচ্চা বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে তাহলে ক্ষতি কি।

ভিডিও গেম- ভিডিও গেমস বাচ্চার বুদ্ধির বিকাশে দারুণ কাজ করে, তবে কম্পিউটারের প্রতি আসক্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এভোয়েড করতে পারেন। অথবা বাচ্চা কতটুকু সময় কম্পিউটারের সামনে বসে গেমস খেলবে সেটা আপনি নির্ধারণ করবেন।

এছাড়া ট্রেজার হান্ট, ইনডোর বাস্কেটবল, গুনতে শেখানো, রঙ তুলি নিয়ে খেলা সহ মজার সব খেলায় শিশুকে আগ্রহী করে তুলুন।


বাচ্চাদের পড়ানোর উপায় কি?

শিক্ষাবিদরা বহুবার সাবধান করেছেন, “শিশুদের জবরদস্তি করে প্রতিভাবান করে গড়ে তোলার চেষ্টা করলে বা জোর করে পড়ালে হিতে বিপরীত হয়। তাদের নানারকম সামাজিক এবং মানসিক সমস্যা তৈরি হয়।”

আপনার শিশুকে যেভাবে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেন-

খেলতে খেলতে পড়ান- শিশুরা খেলতে বেশি পছন্দ করেন। তাই তাদের উপরে এমন চাপ কখনই তৈরি করবেন না যে তারা খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে। তাহলে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাকে খেলাচ্ছলে কৌশলে পড়াতে হবে। কোনো বিষয় বাস্তবিক জ্ঞান দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাকে খেলার ফাঁকে ফাঁকে পড়তে বলুন।

উদাহরণ দিয়ে শেখান- প্রায় সব বাচ্চারা অঙ্ক ভয় পেয়ে থাকে। তবে উদাহরণ দিয়ে তাকে অঙ্ক শিখিয়ে দিলে তা সহজে বুঝবে এবং মনে রাখবে। যেমন – যোগ, বিয়োগ করানোর সময় তাকে নিয়ে বাজারে যান, প্রাক্টিক্যালি বুঝিয়ে দেন হিসেবটা। দেখবেন সহজে শিখে গেছে এবং তা আর ভুলছে না।

পুরস্কার দিন- আপনার বাচ্চা যদি পড়তে ইচ্ছুক না হয় তাহলে তাকে বলুন যে, এটি পড়ে শেষ করলে তাকে এই পুরস্কার দিবেন। যেমন- বাবা/মা এটি শেষ করলে তোমাকে খেলতে দিব, তোমার পছন্দের খাবার রান্না করব বা রেজাল্ট ভালো করলে তুমি যেটা চেয়েছিলে তা কিনে দিব। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন দেয়ার কথা বলে কথার খেয়ানত করবেন না, আর অযথা বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

গল্প বা ইতিহাস দিয়ে বোঝানো- গল্পের মত করে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বুঝিয়ে দিন। এতে করে তারা গল্পের মধ্য দিয়েই তা মনে রাখবে এবং কখনও ভুলবে না। আবার শিশুকে কোন বদ অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে চাইলে তাকে আপনার বা অন্যের জীবনের গল্প বলুন যেন সেখান থেকে সে নিজেই শিক্ষা নিতে পারে।


শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক খাবার কোনগুলো?

মায়ের দুধ, শাকসবজি, ডিম, সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল, কলা, শুকনো ফল, পনির, বাদাম, কালোজাম, লাল আপেল, কুমড়ার বীজ, মধু। তবে মায়ের দুধের বিকল্প নেই।

আশা করি, আমাদের এই টিপসগুলো আপনাদের কাজে লাগবে। একটু সময় ও ধর্য নিয়ে এগুলো অনুসরণ করলে আপনার বাচ্চার মেধা সুস্থ্য ও স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠবে। পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করবে। মানবিক ও গর্বিত সন্তানের বাবা-মা হোন এই কামনা করি।

শিশুর জেদ – জেদী বা বদমেজাজী বাচ্চাদের সাথে আচরণ এবং পরিবর্তনের উপায়

শিশুর জেদ কমানোর উপায়

শিশুর জেদ – জেদী বা বদমেজাজী বাচ্চাদের সাথে আচরণ এবং পরিবর্তনের উপায় – জেদি অর্থাৎ একগুঁয়ে বাচ্চাদের আচরণ বাবা মায়ের কাছে একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কারণ তাদের গোসল করা, খাবার খাওয়া বা বিছানায় যাওয়ার মতো সাধারণ টুকিটাকি কাজগুলো করতে প্রতিদিন রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। পিতামাতারা সাধারণত অসাবধানতাবসত নিজের অজান্তেই বাচ্চাদের মধ্যে জেদি আচরণকে উত্সাহিত করে।

একগুঁয়ে বা জেদি বাচ্চার জেদ পরিত্রাণের সবচেয়ে ভাল উপায় হ’ল তাদের এটা দেখানো যে তাদের অস্বাভাবিক আচরণ কোনো কাজের নয়।

বাচ্চাকে জেদ মুক্ত করার জন্য তাদের ভাল আচরণগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন। শিশুর যত্ন কয়েকটি টিপস তালিকাভুক্ত করেছে যা জেদী সন্তানের সাথে ডিল করতে সহায়তা করতে পারে।

একগুঁয়ে বা জেদি সন্তানের বৈশিষ্ট্য

স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী চলাফেরা করা শিশুগুলো সাধারণত জেদী হয় না। শিশু যদি জেদী বা একগুঁয়ে হয়ে থাকে তবে সে কোনো জটিল পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন বাচ্চারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং সৃজনশীল হতে পারে। তারা প্রচুর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে।

এমনকি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আপনি ক্লান্তও হয়ে যেতে পারেন। তারা নিজ এবং অপরের মতামত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে, একগুঁয়ে বাচ্চারা তাদের নিজের মতামতকে আঁকড়ে ধরে এবং আপনি যা বলবেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত হবে না।

একগুঁয়ে বাচ্চাদের আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এখানে-

  • জেদী বাচ্চারা তাদের নিজস্ব মনোভাবগুলো অন্যের উপর খাটাতে চেষ্টা করে। তাই তারা আপনার উপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
  • তারা মারাত্মকভাবে স্বাধীন হতে পারে।
  • প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা যা পছন্দ করে তা করতে বাধ্য থাকে।
  • তারা সাধারণত বিচক্ষণ হয়ে থাকে।

জেদী শিশুদের ম্যানেজ করা হয়তো কষ্টসাধ্য হতে পারে কিন্তু এটা খারাপ কিছু নয়।

শিশুরা যেসব কারণে একগুঁয়ে বা জেদি স্বভাবের হয়ে থাকে

  • বিষণ্ণতা, ক্লান্তি, ক্ষুধা, একঘেয়েমি ও অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে
  • পরিস্থিতির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে
  • স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত কিছু করতে না পারার কারণে
  • অনুভূতি প্রকাশের অযোগ্যতার কারণে

জেদী বাচ্চাদের কন্ট্রোল আনতে সহায়তা করতে পারে এমন কিছু টিপস নিম্নরুপ

আপনার কাছেও একগুঁয়ে বা জেদী বাচ্চা থাকতে পারে। যাকে আপনি সব সময় বন্দী করে রাখতে চান। যাতে সে কোনো ক্ষতি না করে। কিন্তু প্রতিবারই আপনি ব্যর্থ হয়ে যান। হয়তোবা, প্রতিবার খাওয়ানোর সময় আপনাকে রীতিমত তার সাথে যুদ্ধ করতে হয়।

অথবা ছয় বছর বয়সী সন্তানটি আপনার প্রতিটি কথা অস্বীকার করতে প্রস্তুত। এখন আপনি ভাবছেন, এমন বাচ্চার সাথে কি করে পারা যায়? কেমন জানি একটা টেনশন মাথার মধ্যে কাজ করছে আপনার। সন্তানের একগুঁয়ে প্রকৃতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য নিচের কয়েকটি টিপস আপনার জন্য কার্যকর হতে

শুনতে চেষ্টা করুন

যোগাযোগ একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। যদি আপনি চান যে সন্তান আপনার কথা শুনুক, তবে আপনাকে প্রথমে তার কথাগুলি শুনতে রাজি থাকতে হবে। কোনো কোনো বিষয়ে জেদী শিশুদের কড়া মতামত থাকতে পারে এবং তর্ক করার ঝোঁক থাকতে পারে।

যদি তারা মনে করে যে তাদের কথায় কান দেওয়া হচ্ছে না, তবে তারা আপত্তিজনক হয়ে উঠতে পারে। অনেকক্ষেত্রে, যখন আপনার শিশু কিছু করার বা না করার বিষয়ে জোর দেয়, তখন তাদের কথা শুনতে হবে। কেন তারা বিরক্ত প্রকাশ করছে – এজন্য তাদের সাথে একটি মুক্ত কথোপকথন করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার শিশু যদি দুপুরের খাবার খেতে কোনো ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করে, তবে তাকে জোর করে খাওয়াবেন না। পরিবর্তে, তাদের জিজ্ঞাসা করুন – কেন তারা খেতে চায় না বা ক্ষোভের কারণ কি? এটি হতে পারে তাদের খেলাধুলার কারণে বা পেটে ব্যথার কারণে।

যদি চান যে আপনার পাঁচ বছরের জেদী বাচ্চাটি আপনার কথা শুনুক, তবে তার সাথে শান্তভাবে এবং ব্যবহারিকভাবে চলার চেষ্টা করুন। মাথা গরম করে নয়। নতুবা আপনি আমি সবাই জানি, ‘ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়।’ তাই প্রথমে তার কথাগুলো শুনুন এবং পরে নিজের অভিমত ব্যক্ত করুন।

সংযুক্ত হোন, জোর করবেন না

জেদী বা একগুঁয়ে বাচ্চাদের যখন কোনও কিছুর জন্য জোর করা হয়, তখন তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এতে যা করা উচিত নয় সেগুলি করে বসে। এই ধরনের আচরণকে কাউন্টারউইল বলা হয়। যা জেদি শিশুদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কাউন্টারউইল স্বতঃস্ফূর্ত এবং এটি কেবল শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাই আপনার বাচ্চাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার ছয় বছরের বাচ্চাটি যে তার শোবার সময় টিভি দেখার জন্য জোর দিয়েছিল, আর আপনি তাকে নিষেধ করছেন। এক্ষেত্রে আপনার মতমত কোনো কাজে আসবে না। বরং তাদের উপর জোর খাটানোর পরিবর্তে, তাদের সাথে বসুন এবং তারা কী দেখছেন তাতে আগ্রহ দেখান। আপনি যখন তাদের প্রতি যত্নশীল হোন, তখন বাচ্চারা সম্ভবত প্রতিক্রিয়া জানায়।

যে সমস্ত শিশুরা তাদের বাবা-মা বা যত্নশীলদের সাথে সংযুক্ত থাকে তারা সহযোগিতা করতে চায়। “একগুঁয়ে বা জেদী শিশুদের সাথে একটি অদম্য সংযোগ স্থাপন তাদের সাথে আচরণ করা সহজ করে তোলে,” সুসান স্টিফেলম্যান তাঁর “প্যারেন্টিং উইথআউট পাওয়ার স্ট্রাগলস” বইয়ে একথা বলেছেন।

সন্তানের সাথে সংযোগের সেই প্রথম পদক্ষেপটি আজই নিন – তাদের বুকে জড়িয়ে ধরুন!

অপশন দিন

একগুঁয়ে বাচ্চাদের নিজস্ব মতামত থাকতে পারে এবং সবসময় কী করা উচিত তা বলা পছন্দ করে না। আপনার চার বছরের একগুঁয়ে বাচ্চাটিকে বলুন যে তাকে রাত ৯ টার মধ্যে বিছানায় থাকতে হবে, এবং আপনি তার কাছ থেকে যা পাবেন তা হ’ল “না!”!

পাঁচ বছরের জেদী বাচ্চাটিকে বলুন যে আপনি পছন্দ করেছেন এমন খেলনা কিনতে এবং তারা তা চাইবে না। আপনার বাচ্চাদের দিকনির্দেশ না দিয়ে অপশন দিন। তাদের বিছানায় যেতে বলার পরিবর্তে তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে তারা শোবার সময় গল্প পড়তে চান কিনা! অপশন A (পড়তে চায়), অপশন B (পড়তে চায় না)।

এখন আপনার সন্তান যদি জেদী হয় তাহলে সে বলতে পারে ‘আমি এখনই বিছানায় যাচ্ছি না।’ যখন এমনটি ঘটে তখন নিজেকে শান্ত রাখুন এবং নম্র কণ্ঠে বলুন ‘এটি কিন্তু অপশন দুটির মধ্যে ছিল না।’ যখনি প্রয়োজন পড়বে তখনি আপনি এ সূত্রটি রিপিট করতে পারেন যতটা শান্তভাবে পারা যায়। যখন আপনি তার সামনে বার বার এমনটি করেন তখন সে যে কোনো একটি অপশন সহাজতভাবেই গ্রহণ করবে।

পক্ষান্তরে, শিশুদের সামনে কখনোই অনেকগুলি অপশন দেওয়া উচিত নয়। এতে তারা বিভ্রান্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কাপড়ের দোকানে গিয়ে আপনার সন্তানকে অনেকগুলো পোশাক থেকে একটি পোশাক বেছে নিতে বললে সে অবশ্যই বিভ্রান্ত হবে। বরং আপনার বাছাই করা দুটি বা তিনটি পোশাক থেকে তাকে পছন্দ করতে বলুন। এতে আপনি সহজেই এই সমস্যাটি থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

শান্ত থাকুন

ও এখনো ছোট মানুষ, ও তো জেদ করবেই কিংবা বাচ্চারাতো সাধারণত জেদ করেই থাকে এই ধরনের মন্তব্য না করাই শ্রেয়। অর্থাৎ সন্তানের জেদ নিয়ে বাবা মায়ের মতের ভিন্নতা কোনোমতেই থাকা যাবে না। আর যদি হয়েও থাকে তাহলে তা বাচ্চাদের সামনে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়।

কোনো কারণে যদি বাচ্চা খুব জেদি হয়ে ওঠে বা হঠাৎ করেই রেগে যায় আর তারপর চিৎকার চেঁচামেচি করে তাহলে আপনিও বাচ্চার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে তাকে থামাতে যাবেন না। রেগে যাওয়া শিশুদের সাথে আপনিও যদি সমপরিমাণ রাগ করেন তাহলে ব্যাপারটি আগুনে ঘি ঢালার মত হয়ে যায়।

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের জেদের অভিব্যক্তি মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা স্নেহবশত ঐ শিশুটির সব দাবী মেনে নেন। মনে রাখবেন, এটা একেবারেই চরম একটি ভুল। কেননা, বাচ্চারা সহজেই পরিবারের দুর্বল পয়েন্ট বুঝতে পারে।

কর্মরত মায়েরা সাধারণত মনে করেন যে তারা হয়তোবা বাচ্চাদের অযত্ন করছেন। এটা তাদের মনে একটি বড় অপরাধবোধ সৃষ্টি করে। যার জন্য তারা বাড়ি ফেরার পথে প্রতিনিয়ত সন্তানদের জন্য চিপস, চকোলেট বা নানা ধরনের খেলনা নিয়ে যান। এতে স্বভাবতই বাচ্চার মনে চাহিদার মাত্রা বেড়ে যায়। এই ধরনের ‘প্যারেন্টিং ব্রাইবিং’ বাচ্চাদের জেদী বা একগুঁয়ে হওয়ার অন্যতম কারণ।

হয়তোবা ভাবছেন, তাহলে এর প্রতিকার কী? তাহলে শুনুন – বাচ্চাকে এটা কৌশলে সহজভাবে বোঝান যে আপনার কাজ করাটা প্রয়োজন। বাচ্চার যাতে চাহিদা না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন যতটা সম্ভব। দেখবেন ও সহজভাবেই বড় হচ্ছে। আপনার যদি কখনো বাড়ি ফিরতে দেরি হয় তাহলে কখনোই তার জন্য চকোলেট বা খেলনা আনার প্রয়োজন নেই।

বরং ফেরার পথে ওকে ফোন দিয়ে প্লান করুন, আজ রাতে আপনি কোন গল্পটা তাকে শোনাবেন। এতে কি ঘটবে জানেন? দেখবেন, ওর জেদ একেবারেই উধাও হয়ে যাবে এবং সে অধীর আগ্রহে আপনার বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষায় থাকবে।

সত্যিই যদি আপনার বাচ্চা একগুঁয়ে বা জেদী হয়ে থাকে তাহলে ঐ পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাকে এটা বলতে দিন যে সে কী বোঝাতে চাচ্ছে? আপনিও এটা বোঝার চেষ্টা করুন তার কথার আসল উদ্দেশ্য কী?

যখন বাচ্চা কিছুটা স্থির হবে অর্থাৎ যখন তার জেদ কিছুটা কমবে, তখন তাকে কাছে টেনে নিয়ে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। আপনার কাজ হচ্ছে বাচ্চাকে শান্ত করা তাকে আরো রাগিয়ে তোলা নয়। তাই তখনই তাকে কিছু বোঝাতে সক্ষম হবেন যখন আপনি শান্ত থাকবেন।

যাইহোক, যদি নিজেকে শান্ত রাখা আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে শান্ত থাকার জন্য যা লাগে তা করুন – ধ্যান করুন, অনুশীলন করুন বা গান শুনুন। বাড়িতে শান্ত বা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সঙ্গীত শুনুন যাতে আপনার বাচ্চারাও শুনতে পারে। মাঝে মাঝে আপনার সন্তানের প্রিয় সংগীত বাজান। এইভাবে, আপনি তাদের ‘ভোট’ অর্জন করতে পারেন এবং তাকেও শান্ত রাখার পাশাপাশি একগুঁয়ে বা জেদী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।

জেদ যখন কমে এসে বাচ্চা শান্ত হয়ে যায় সেই সময়টা পেরেন্টিং এর জন্য উত্তম সময়। আর সেই সময়টাতেই বাচ্চাকে বোঝাতে হবে যে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে আবার ওরকম করে তাহলে পরিবারের কেউ তার সাথে কোনো কথা বলবে না। যদি তার কোনো নিজস্ব চাহিদা থেকে থাকে তবে তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে। আর এইভাবেই তার মধ্যে সেলফ কন্ট্রোল তৈরি হবে।

শ্রদ্ধা করুন, সম্মান দিন

সাধারণত একগুঁয়ে বা জেদি ছেলেমেয়েদের উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করলে তারা তা গ্রহণ করে না। তাই তাদের সাথে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেন। এমন কয়েকটি উপায় এখানেঃ

  • তাদের কাছে সহযোগিতা চান; তবে আপনার নির্দেশ অমান্য করলে তা পালনের জন্য তাদের উপর জোর করবেন না।
  • আপনার সকল সন্তানের জন্য একই নিয়ম রাখুন। তবে কখনোই কারো উপর শিথিলতা প্রকাশ করবেন না। কারণ আপনি জানেন এটাই তাদের জন্য উপযুক্ত।
  • তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। তাদের অনুভূতি বা ধারণাগুলোকে কখনই বরখাস্ত করবেন না।
  • বাচ্চারা নিজের জন্য যা করতে পারে তা করতে দিন। তবে এটা মনে রাখবেন, বোঝা হ্রাস করার জন্য লোভ দেখিয়ে তাদের কিছু করতে বলবেন না। বরং তার চেষ্টাটাকে স্বাদুবাধ জানান। এটি তাদেরকে বলে দেয় যে আপনি তার প্রতি আস্থা রেখেছেন।
  • আপনি যা বলতে চান তা বলুন এবং আপনি যা বলেছেন তা করুন।

‘ইউ আর নট দ্যা বস অফ মি’ এর লেখক বেস্টি ব্রাউন ব্রুন এর মতে আপনার বাচ্চারা সব সময় আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

একসাথে কাজ করুন

একগুঁয়ে বা জেদি শিশুদের সাথে আপনি কিভাবে আচরণ করছেন সে সম্পর্কে তারা অত্যন্ত সংবেদনশীল। সুতরাং আপনি যে সুর, দেহের ভাষা এবং শব্দভান্ডারগুলি ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে সচেতন হন। তারা যখন আপনার আচরণে অস্বস্তি বোধ করে, তখন তারা নিজেরাই সুরক্ষার জন্য যা ভাল জানে তা করেঃ তারা বিদ্রোহী, টকব্যাক এবং আগ্রাসন প্রদর্শন করে।

  • আপনি যদি জেদি বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার উপায় পরিবর্তন করেন তবে তারাও আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করবে তার পরিবর্তন ঘটাবে। কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত নয় – এটা বলার থেকে তাদের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
  • ‘আমি এটা করতে চাই’ এটা না বলে বলুন যে ‘চলো আমরা এটা করি”, “আমরা কিভাবে চেষ্টা করব” এ রকম মন্তব্য ব্যবহার করুন।
  • বাচ্চাদের কোনো কাজ শেখানোর জন্য মজাদার কিছু ট্রিকস ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সন্তানের কাছ থেকে তার খেলনাগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে চান তবে প্রথমে নিজেই এটি শুরু করুন। আর তাকে বলুন আপনার “বিশেষ সহায়ক” হতে।
  • কৌশলগুলো তাকে শেখানোর পেছনে আপনাকে একটু সময় ব্যয় করতে হবে। তার সাথে চ্যালেঞ্জ করুন খেলনাগুলোকে আপনার চেয়ে দ্রুত গতিতে দূরে সরিয়ে রাখতে। এটি একটি গোপন কৌশল যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর।

আগে থেকেই প্লান করে রাখুন

কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি বেশি সময় লাগে আর সে সময় বাচ্চা যাতে ক্ষুধার্ত বা খুব বেশি ক্লান্ত না হয়ে পরে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ধরুন, আপনাকে কোনো এক কাজে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হবে তাহলে শিশুটিকে ব্যস্ত রাখার জন্য সংগে কিছু খেলনা বা তার পছন্দনীয় সামান্য খাবার নিতে পারেন।

বাচ্চার মানসিক শক্তি বাড়ান

সন্তানকে শেখান কিভাবে কঠিন অনুভুতিগুলোকে সহজে প্রকাশ করতে হয়, সে সম্পর্কে তাকে উৎসাহিত করুন। কেননা, যত সে নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে পারবে, তার মধ্যে তত রাগ, ক্ষোভ ও ক্রোধ এই ধরনের অনুভূতিগুলোর সঞ্চালন কমতে থাকবে।

শিশুদের রাগ, অভিমান ও অন্যান্য অনুভূতিগুলো নিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের এটা বোঝান, প্রত্যেকটি অনুভূতি একটি অপরটির থেকে আলাদা।

চিৎকার করে বাচ্চাকে থামাবেন না

ধরুন, আপনার আদরের বাবুটা হঠাৎ পরে গিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। এবার আপনি রেগে গিয়ে আসলেন তাকে থামানোর জন্য। কিন্তু আপনিও এসে চিৎকার শুরু করে দিলেন।

এতে কি হলো? আপনার বাবুটা ভয় পেয়ে আরো জোরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। ব্যস, শান্তি প্রতিষ্ঠার জায়গায় অশান্তি বেড়ে গেল। তাই ভুল করে কখনোই সন্তানদের চিৎকার করে থামানোর চেষ্টা করবেন না।

আলোচনা করুন

কখনো কখনো আপনার বাচ্চাদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। যখন তারা যা চায় তা পাচ্ছে না তখন তাদের বিরূপ আচরণ করাটা সাধারণ। যদি চান তারা আপনার কথা শুনুক, তাহলে আপনাকে জানতে হবে ঐগুলো করতে তাদের কী থামাচ্ছে?

  • তাকে কিছু প্রশ্ন জিঙ্গাসা করুন , যেমনঃ ‘তাকে কী বিরক্ত করছে?’, ‘তার রাগের কারণ কী’ বা তুমি কিছু চাও কিনা!’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন। এটি তাদের জানায় যে আপনি তাদের ইচ্ছাগুলোকে সম্মান করেন এবং সেগুলি বিবেচনা করতে রাজি।
  • আলোচনার অর্থ এই নয় যে আপনি সর্বদা তাদের দাবি মেনে নিবেন। এগুলি সমস্ত বিবেচ্য এবং ব্যবহারিক হওয়া সম্পর্কে।
  • উদাহরণস্বরূপ, আপনার শিশু একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে রাজি নাও হতে পারে। তার সাথে জেদ করার পরিবর্তে একটি শয়নকালীন সময় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করুন; যা আপনার দুজনের পক্ষে উপযুক্ত।

ব্যস্ত রাখুন, সময় দিন

কথায় আছে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট।’ ক্ষুধা, ক্লান্তি, একঘেয়েমি, বিষন্নতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা শিশুদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য। তবে আপনি যদি সন্তানের যে কোনো প্রয়োজন যথাসময়ে পূরণ করেন তাহলে এ বৈশিষ্ট্যগুলো কখনোই তাদের মাঝে সঞ্চার করবে না। এমন কোনো রুটিন সেট করবেন না যা বাচ্চার জন্য মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।

ঘুমানোর পূর্ব মহুর্তে কোনো উত্তেজনাকর খেলাধুলা থেকে তাদের বিরত রাখুন। কেননা, ঐসময়ে দৌড়ঝাপ করা, অতিরিক্ত দুষ্টুমি, খিলখিল করে হাসা – এরকম খেলাধুলা করলে বাচ্চারা বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা সহজেই বিছানায় যেতে চায় না। তাই এগুলোর পরিবর্তে তাদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প শোনাতে পারেন।

শিশুকে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন

শিশুকে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। এতে যেমন তার উপকার হবে তেমনি সে দায়িত্ববানও হয়ে উঠবে। সবকিছুর জন্য শিশুকে না বলা থেকে দূরে থাকুন। শিশুকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখানোর জন্য তাকে নিজের সম্পর্কে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দিন।

উদাহরণস্বরূপ, তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘তুমি কি লাল জুতোটা পরবে নাকি নীল জুতোটা পরবে?’ অথবা খাওয়ার সময় তাকে জিঙ্গেস করতে পারেন, ‘তুমি কি এখন ডিম দিয়ে ভাত খাবে নাকি সবজি দিয়ে? এভাবে তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে সাহায্য করুন।

ভিডিও, টিভি সিরিজ ও ভায়োলেন্ট গেম বন্ধ করুন

এদিক থেকে আপনার বাচ্চাকে নিজে নিজেই জেদি বানাচ্ছেন। ধরুন, আপনি কোনো এক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তাই বাবুটাকে বললেন তুমি টিভিতে স্পাইডারম্যান সিরিজটা দেখ। অথবা মোবাইলে তোমার প্রিয় গেমসটি খেল। এভাবে আপনি প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকলেই তাকে এ ধরনের কাজ করতে বলেন।

অথবা দেখা গেল পরিবারের সবাই মিলে প্রতিনিয়ত আপনারা টিভিতে বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল কিংবা মুভি দেখেন। মনে রাখবেন, বাচ্চা কিন্তু এসবের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। টিভিতে সে যত স্পাইডারম্যান কিংবা মারামারির সিন দেখবে সেও সেরকম অভিনয় করবে। কিংবা পছন্দের সিরিয়াল না শেষ হওয়া পর্যন্ত বই পড়তে বসবে না। তাই এসব থেকে শিশুদের দূরে রাখাই শ্রেয়।

প্রশ্রয় না দেওয়া

বাবুটা আজ পাশের বাসার বেবিটাকে অথবা কোনো এক ক্লাস মেটকে খামচি দিয়েছে। আর আপনি চিন্তা করলেন অবুঝ বাচ্চা কিছু বোঝে না, ছোট মানুষ। কিন্তু এই বাচ্চাই দেখবেন এরপর খেলার পুতুল দিয়ে কারো না কারো মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, তখনো কি বলবেন সে অবুঝ, কিছু বোঝে না।

মনে রাখবেন, এই ঘটনার জন্য কিন্তু আপনি সম্পূর্ণই দায়ী। যদি আপনি প্রথম দিনেই তাকে বোঝাতে সক্ষম হতেন যে এ বিষয়টি খুব খারাপ, যা আপনার একদম পছন্দ নয়। তাহলে পরের দিন আর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আপনাকে দেখতে হতো না। সুতরাং তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রথম দিনেই সাবধান হওয়া ভালো।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল

আপনার বাবুকে এটা উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেন যে তার কোনো কাজে আপনিও ব্যথা পেতে পারেন, আপনিও কষ্ট পেতে পারেন। ধরুন, পাশের বাসার বাবুটা তাকে ‘গরু’ বলে ডাকে। আর এটা বলার পরপরই আপনার বাবুটাকে তাকে খামচি মারে। আর এভাবে বেশ কয়েকদিন খামচি মারার পর পাশের বাসার বাবুটা আর তাকে গাধা বলে না। কিন্তু সমস্যাটা এখানে নয়।

সমস্যা হল- পাশের বাসার বাবুটাকে দেখলেই আপনার বাবুটা এখন খামচি দিতে চায়, আর অন্য বাচ্চাদেরও। দিন দিন তার এ খামচির কাহিনী বেড়েই চলেছে। তাহলে এ অবস্থায় আপনি কি করবেন? আপনি তাকে এটা বোঝান যে সে যদি আর কাউকে খামচি মারে তাহলে আপনি তার সাথে আর কথা বলবেন না বা এরকম কিছু একটা। যাতে করে সে এটা বুঝতে পারে যে আপনি তার এ কাজের জন্য ব্যথা পেয়েছেন।

প্রশংসা করুন

শিশুর যে কোন ভালো কাজে প্রশংসা করুন। কেননা, সত্যিকারের প্রশংসা যে কোনো মানুষের মনে একটা পজিটিভ সাইট তৈরি করে। ধরুন, আপনার বাচ্চাটি একটা ছবি এঁকেছে। কিন্তু ছবিটিতে খুব সামান্য পরিমাণে ভুল আছে।

এক্ষেত্রে তার ভুলটি না ধরে তাকে এটা বলুন বাহ! খুব সুন্দর ছবি হয়েছে। আরো চেষ্টা করুন। আশা করি, পরবর্তীটা আরো ভাল করবে তুমি। আর যদি তার ভুলটি ধরিয়ে দিতে চান তাহলে সরাসরি না বলে প্রশংসা করার পর এটা বলুন, বাবু এটাকে দেখতো। এটা মনে হয় এদিক দিয়ে দিলে আরো একটু ভালো হবে। কি বল তুমি? দেখবেন, সে খুব সহজাতভাবেই আপনার কথা গ্রহণ করবে।

শেয়ার করা শেখান

ছেলেমেয়েকে কখনোই সামাজিক পরিবেশ থেকে ভিন্ন করে একা একা বড় করবেন না। এতে সে সমাজের অনেক কিছু থেকেই পিছিয়ে পড়বে। আপনার সন্তানকে যে কোনো জিনিস ভাগাভাগি করা শেখান। যেমন, আপনি একটি রুটি নিয়ে আসলেন। কিন্তু তার পাশে আরো একটি ছোট বাবু আছে। এক্ষেত্রে আপনি তাকে অর্ধেক রুটি দিয়ে আপনার শিশুর সামনে ভাগাভাগি করে খাওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরতে পারেন।

যে সমস্ত অভিভাবকের সন্তান একটি সাধারণত তাদের বাচ্চারা ‘শেয়ার বা ভাগাভাগি’ ব্যাপারটি কম বোঝে। কেননা, তাদের পরিবারে বাচ্চা বলতে সে একাই। তাই যখন আপনি তাকে কিছু দিবেন তখন তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য যে কোনো বাচ্চাকে অর্ধেক বা সেম জিনিসটাই দিবেন। এভাবে তারা নিজেদের একগুঁয়ে বা জেদি ভাবটাকে কমিয়ে নিতে পারবে।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসেছে?

আপনার সুবিধার্থে বেশ কিছু লক্ষণ এখানে তুলে ধরা হলোঃ

  • কোনো কারণে রেগে গেলেই খারাপ ভাষা ব্যবহার করে।
  • ছোট ছোট কারণেই রেগে যায় এবং জিনিসপত্র ভাংচুর করে।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে খেলার সাথী বা ভাইবোনদের মারধর করে।
  • অন্য শিশুরা আপনার বাচ্চার সাথে খেলতে বা মিশতে চায় না।
  • তার মুখ থেকে প্রায়ই অন্য মানুষের নামে খারাপ মনোভাব শোনা যায়।
  • খুব রেগে গেলে সে নিজেই নিজেকে আঘাত করে।
  • বাচ্চাটি অন্য বাচ্চাদের ও প্রাণীদের আঘাত করে।
  • বাচ্চা অনেক বেশি প্রতিশোধপরায়ণ স্বভাবের হয়।

একনজরে কী করবেন আর কী করবেন না?

হয়তোবা জেনে থাকবেন, বলার থেকে করাটা কঠিন। আর যা করবেন তা প্রতিনিয়ত ধরে রাখাটা কঠিন।

কী করবেন?

  • শিশুর যে কোনো জেদকে পুরোপুরি উপেক্ষা করুন।
  • বাচ্চার যে কোনো ভালো কাজে প্রশংসা করুন।
  • সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিন এবং তার জিনিসপত্র অন্যদের সাথে শেয়ার করা শেখান।
  • তার যে কোনো কথা মূল্যায়ন করে নিজের মন্তব্য দিন।
  • সামাজিক পরিবেশে গ্রহণীয় ও বর্জনীয় আচরণগুলি সম্পর্কে তাকে স্পষ্ট করে জানান।
  • মিথ্যা বলার প্রবণতা দূর করুন।
  • বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করুন।
  • বাধ্যতামূলক পড়ালেখা করাবেন। আর পড়ালেখার পাশাপাশি সাধারণ আচরণ, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শেখান।
  • তাকে সম্মান করুন এবং কোনো বিষয়ে তার করা অভিমত পর্যালোচনা করুন।

কী করবেন না?

  • জেদের বশবতী হয়ে কোনো জিনিস চাইলে তা পুরোপুরি উপেক্ষা করুন। স্বাভাবিকভাবে চাইলে কেবল তখনই দিবেন।
  • উস্কানিমূলক কোনো কথাবার্তা (রাগ উঠে এমন) বলবেন না।
  • যে কোনো রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কোনো ধরনের কৈফিয়ত ছাড়াই উপেক্ষা করুন।
  • বার বার এক কথার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না।
  • শিশুদের পাশে রেখে অন্যদের সাথে জেদ নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা করবেন না।
  • বকা দেওয়া, অতিরিক্ত বোঝানো বা তিরস্কার করবেন না।

বোনাস টিপসঃ বাবা মায়ের জন্য

এখান অব্দি এসেছেন- এর মানে হলো আপনি পুরো আর্টিকেলটি পড়েছেন। এখন হাতের পাশেই যদি মোবাইল ফোন থাকে তাহলে আপনার মাকে ফোন দিয়ে এটা জিঙ্গেস করুন “আমি কি ছোট বেলায় তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, মা?”

অপরদিক থেকে মায়ের হাসিমাখা মুখখানা থেকে জবাবে আসবে, নাহ, তুইও অনেক শান্ত ছিলিরে, বাবা। পাশের বাসার বাচ্চাগুলো তাদের মায়েদের কতই না জ্বালাত। কত ধরনের কত কমপ্লেইনই না আসত দিনভর। কিন্তু তুই তো অনেক শান্তশিষ্টই ছিলিরে বাজান।

আমি বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কেননা, আপনার বাচ্চা যেমন আপনাকে যন্ত্রণা দেয় তার থেকে বহুগুণ বেশি যন্ত্রণা আপনি দিয়েছেন, এর থেকে কম দেননি। এটা নিশ্চিত।

বাচ্চাকে সঠিকভাবে লালন পালনের জন্য, যোগ্য ব্যক্তিত্ব দেওয়ার জন্য আপনি যেমন অনলাইনে এসেছেন, আপনার মায়ের সময় কিন্তু এরকমটা ছিল না। তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন আপনাকে কিভাবে মানুষ করা লাগবে?

এরজন্য তিনি বেশি বেশি যে কাজটা করতেন তা হলো আপনার সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো। তাই আপনিও চেষ্টা করুন, বাচ্চার সাথে বেশি বেশি সময় কাটানোর। সর্বোপরি, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

শিশু রাগী হয় কেন?

রাগ নেই এমন মানুষ কি আছে এই পৃথিবীতে? না নেই, সবার রাগ আছে। এটা একটা শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য, তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখাটাই মূখ্য। বাচ্চারা এই নিয়ন্ত্রণ সহজে করতে পারে না, কারণ তারা এটির খারাপ দিক তেমন উপলদ্ধি করতে পারে না।

আপনি যদি চান আপনার শিশু অতিরিক্ত রাগী না হোক তাহলে সবার আগে আপনাদের শান্ত হতে হবে। বাবা-মা হিসেবে আপনাদের শান্ত সুরে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলেই আপনার বাচ্চা আপনাদের দেখে সেটাই শিখবে।


শিশু বদমেজাজী হয় কেন?

আপনার বাচ্চা বদমেজাজী তার মানে আপনার পরিবারে আপনি বা বড় কারো এই বদমেজাজ আছে যা সে অনুসরণ করছে। বেশিরভাগ বাবা-মা ঝগড়া ও রাগারাগী থেকে শিশু বদমেজাজী হয়। আবার সব কাজে তার অন্যায় আবদার পূরণ করলে বা অন্যায় তুলে না ধরলেও এরকমটা হয় বাচ্চারা।

যেমন- আপনার বাচ্চা কারো সাথে ঝগড়া করল, এখন আপনি যদি নিজের বাচ্চার ভুল না ধরে শুধু অন্যের বাচ্চার ভুল ধরেন তাহলে আপনার শিশু সাহস পেয়ে গেল। সে দাপটের সাথে ঐ কাজটি বারবার করবে এবং শাসন করার অভ্যাস তৈরি হবে।

তাই নিরপেক্ষ ভাবে বাচ্চার সাথে আচরণ করুন, ভুল করলে ধরিয়ে দিন। আপনাকে রাগ দেখিয়ে কোন কিছু আবদার করলে তা পূরণ করা থেকে বিরত থাকুন, আর তার সাথে ভালো ব্যবহার করুন। স্বভাবতই বাচ্চাদের আবদার পূরণ না করলে তার মন খারাপ হয়, এসময় তার পছন্দের কোন খাবার বা অন্য কিছু দিয়ে তার মন ভালো করুন, তাকে একা মন খারাপের মধ্যে রাখবেন না।


শিশুর অতিরিক্ত জেদ কেন হয়?

২০ শতাংশ শিশু জীনগত কারণে ও বাকি ৮০ শতাংশই পরিবেশগত কারণে জেদি হয়। মনোবিজ্ঞানের মতে, সন্তানের যেসব আচরণে মা-বাবা মনোযোগ দেবেন, সেসব আচরণ সে বারবার করবে। ধরুন আপনার শিশুর জেদ সে পুতুল কিনবে, এজন্য কান্নাকাটি করল, আর আপনি তা সইতে না পেরে তা তখনি কিনে দিলেন।

এ থেকে সে বুঝল যে জেদ না করলে পাওয়া যায় না, তাই জেদ করতে হবে। এভাবেই ধিরে ধিরে জেদী হয়ে পড়ে। আবার বাচ্চার সামনে যদি বলেন, এ খুব জেদী/বদমেজাজী তাহলে সে নিজেকে সেটাই ভাববে এবং মেনে নিবে। এখন সে মনে করবে সে যেহেতু জেদী তাহলে জেদ করি।

তাই শুরু থেকে বাচ্চার অহেতুক আবদার পূরণ করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে কোন একটি জিনিস কিনে দেয়ার আগে সেটার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরুন, তাকে বুঝতে দিন একটি জিনিস এমনি এমনি বা সহজে আসে না। সেটার জন্য আপনাদের কত কি পরিশ্রম করতে হয়।
অনেকে আবার বাচ্চার একটা আবদারও পূরণ করে না, এটা ঠিক না। ছোট খাট আবদার প্রয়োজনের সাপেক্ষে পূরণ করবেন, এতে ভালোবাসা বাড়ে, শিশু আপনার অনুগামী হয় বা চুরির অভ্যাস হয় না।


বাচ্চারা কথা শোনে না কেন?

বাচ্চার প্রতি যখন আপনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে তখন আর আপনার কথা শুনবে না। আবার আপনি তাকে এমন কিছু করতে বললেন যেটা আপনি নিজেই মানেন না, সেটাও কিন্তু বাচ্চারা শুনবে না। বাচ্চাদের আত্মসম্মান অনেক। তাকে সম্মান ও গুরুত্ব দিলে সে সবকিছু শুনতে রাজি। কিন্তু আপনি যদি তাকে মারেন, অন্যের সামনে অপমান করেন বা কোন কিছু জোর করে ভয় দেখিয়ে করতে বলেন তাহলে শিওর থাকেন যে আপনি দিন দিন তার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।

বাচ্চা আপনার কথা তখনি শুনবে যখন- আপনি তাকে সম্মান দিবেন, ভালোবাসা দিয়ে বোঝাবেন, অনুপ্রেরণা দিবেন, মূল্যায়ন করবেন, জোর না করে বুঝিয়ে বলবেন, তার ইচ্ছার মূল্য দিবেন। বাচ্চার কাছে যদি আপনি একজন ভালো বন্ধু হতে পারেন তাহলেই সে আপনার কথামত চলবে।

যেমন- এই এখনি পড়তে বস এভাবে না বলে, বলুন যে- বাবা/মা তুমি আজকে রাতে কয়টার সময় পড়তে বসবে আমাকে বলো, আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিব। এভাবে কোন কিছু চাপিয়ে না দিয়ে, তার কাছ থেকে মতামত নিন। যখন দেখবে আপনি তাকে মূল্যায়ন করছেন তখন সেও আপনাকে মূল্যায়ন করবে।

অবশেষে আপনার বাচ্চার জন্য শুভকামনা রইল।
আর আপনিও ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম – Baby Care Guidelines Bangla

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম: শিশুরা খুব কোমল এবং নরম ত্বক নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নতুন পিতামাতারা প্রায়শই তাদের শিশুর ত্বকের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন যা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। শিশুর ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং সঠিক ত্বকের যত্ন না নিলে সম্ভবত তার চুলকানি এবং অ্যালার্জি হতে পারে।

জন্মের পর ২৮ দিন পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় নবজাতক পিরিয়ড। আর এ সময়টা বাচ্চা ও মা দুজনের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদরের বেবীটাকে সুস্থ, সুন্দর, রোগবালাইমুক্ত ও হাস্যোজ্জল রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো জুড়ি নেই। শিশুর কোমল শরীরে সহজেই রোগজীবণু আক্রমণ করতে পারে। এছাড়া সামান্য অপরিচ্ছন্নতার কারণে শিশুর নাভীর ইনফেকশনও হতে পারে।

আপনার ছোট্ট বাবুর ছোট্ট শরীরকে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। তাই ‘শিশুকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন’ এসব টিপস নিয়েই আমাদের এই আর্টিকেল।

হাত ধুয়ে নিন

আমাদের হাতে সাধারণত অদৃশ্য ময়লা লেগেই থাকে। যেগুলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবানুনাশক না ব্যবহার করলে যায় না। তাই শিশুর সংস্পর্শে আসার পূর্বে নিজের হাতটি সর্বদা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য আপনি ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

অন্য কেউ শিশুকে কোলে নিতে চাইলে তাকেও হাত ধুয়ে নিতে বলুন। এছাড়া প্রতিবার শিশুকে পরিষ্কার করার পূর্বে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই তাকে কোলে নিন।

বাচ্চার কাপড় কাঁথা পাল্টানোর সময়, প্রসাব পায়খানা করার পর বা ডায়াপার পাল্টানোর সময়ও হাত ধুয়ে নিন।

ত্বক ও চুলের যত্ন

এটা লক্ষণীয় যে, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের প্রতিদিন গোসল করাতে পছন্দ করে। আর এজন্য তারা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে না এমন সাবান বা স্যাম্পু ব্যবহার করে থাকে। শিশুর ত্বক হালকা গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য চোখে ধরে না এমন একটি সাবান ব্যবহার করুন। বাচ্চাকে শুকানোর জন্য যে ঘরটি ব্যবহার করবেন সেটি অবশ্যই গরম রাখুন। এজন্য শীত এড়ানোর সমস্ত এয়ার কণ্ডিশনারগুলো বন্ধ রাখুন।

শিশুর ত্বকে নতুন কোনো পণ্য চেষ্টা করবেন না। কোনও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলি শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে। প্রাকৃতিক তুলো এবং মসৃণ তোয়ালে ব্যবহার করে বাচ্চাকে মুছে ফেলা ভাল। যাতে অপ্রত্যাশিত স্ক্র্যাচ থেকে দূরে থাকা যায়।

ভারনিক্স ব্যবহার করুন

সন্তান জন্মের পর তাকে উষ্ণ, কোমল ও আরামদায়ক জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করুন। শিশু জন্মের পর চেষ্টা করুন ভারনিক্স ব্যবহার করতে। ভারনিক্স এমন একটি তেল জাতীয় পদার্থ যা শিশুর চামড়ায় ব্যবহার করলে অনেকটা অ্যান্টিবডির মত কাজ করে। শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন জিনিস যেমনঃ বাইরের ধুলোবালি বা অন্য কিছু ইত্যাদিকে বাচ্চার সংস্পর্শে আসতে বাঁধা প্রদান করে।

নাভির যত্ন

শিশু জন্মের পর পরই ডাক্তাররা প্লাসেন্টা থেকে কেটে দেন। নাভি থেকে রক্তপ্রবাহ বন্ধ এবং ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমানোর জন্য ডাক্তাররা নাভি কাটার পরপরই তা পেঁচিয়ে ক্লিপের মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্ল্যাম্প বা টেইপ লাগিয়ে দেন।

নাভিতে পানি, তেল, লোশন বা সাবান ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। বাচ্চার নাভিকে শুষ্ক রাখুন। কেননা, নাভি যত বেশি শুষ্ক থাকবে তত দ্রুত তা ঝরে যাবে।

শিশুর গোসলের নিয়ম

প্রথমবার শিশুকে গোসল করানো ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা। এত ছোট্ট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই যায় না ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে? কিন্তু আমাদের দেশের মায়েরা একটা কাজ খুব ভুল করেন। আর সেটা হলো যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চার গোসল সেরে ফেলা। বাচ্চাকে সপ্তাহে তিনবার গোসল করানোর নিয়ম আছে।

তাও আবার ইচ্ছামত পানি ঢেলে নয়। নরম কাপড় কিংবা স্পঞ্জ নিয়ে সেটা হালকা গরম পানিতে চুবাতে হবে। তার সেটা দিয়ে শিশুর সমস্ত শরীর সুন্দর করে মুছে দিতে হবে। তবে ডাক্তাররা বাচ্চার নাভি না শুকানো পর্যন্ত গোসল দিতে নিষেধ করেন।

ততদিন পর্যন্ত শুধু ভেজা কাপড় দিয়ে বাচ্চার শরীর মুছে দিলেই চলবে। আর ছোট্ট বাচ্চাকে বার বার পানি ঢেলে গোসল করালে শিশুর ত্বকে যে তেল তেলে ভাবটা থাকে সেটা চলে যায়। ফলে একজিমার মত মারাত্মক চামড়ার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চার গা ভেজা থাকলে একটা নরম শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা, গলা, বুক, হাত ভালোভাবে মুছে দিন। নতুন বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

বাচ্চার কান পরিষ্কার

শিশুর ত্বক এমনিতেই নরম হয়। নরম ত্বকে শক্ত কোনো কিছুর আঘাত বেশ বেদনাদায়ক ও ভয়ংকর। তাই কটনবাডস দিয়ে শিশুর কান পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আপনি বরং কডনবাডস কিংবা নরম কাপড় ব্যবহার করে কানের বাইরের ময়লাগুলো পরিষ্কার রাখতে পারেন। কিন্তু কানের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার করতে গেলে অসাবধানতা বশত কানের পর্দায় কটনবাডস এর আঘাত লেগে যেতে পারে। আর তাতেই শিশুর কানের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। যা খুবই ক্ষতিকর। আবার কানের ভিতরে এক ধরনের লোম থাকে। যেগুলো বাইরের ময়লাগুলো ঠেলে দেয় এবং ভিতরে যেতে বাঁধা প্রদান করে। ছোট্ট শিশুর কানে কটনবাডস ব্যবহার করলে এই লোমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই কটনবাডস এর আঘাত থেকে এদের রক্ষা করা জরুরি।

নবজাতকের নাকের যত্ন

কানের মত নাকেও কটনবাডস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ময়লা জমে কিংবা সর্দির কারণে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তখন শিশু মুখের মাধ্যমে নিঃশ্বাস নেয়। তখন শিশু দুধ টানতে চায় না। তাই আপনি বরং কডনবাডস এর পরিবর্তে নরম পরিষ্কার সুতি কাপড়ের কোণা পেচিয়ে নিয়ে তা দিয়ে বাচ্চার নাক পরিষ্কার করতে পারেন।

শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন

ডায়াপার যতটা শিশুর জন্য ততটা ক্ষতির কারণও হতে পারে। কেননা, অধিক সময় ধরে নোংরা ডায়াপার পরিবর্তন না করলে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে, যা তার জন্য ক্ষতিকর এবং ভয়াবহ। এজন্য ডায়াপার ব্যবহারে সাবধান হতে হবে।

ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে শিশুর ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল লাগিয়ে নিতে পারেন। অনেকে আবার পাউডার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু পাউডার ব্যবহার করলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

নবজাতকের জন্য সবসময় ভালো এবং উচ্চ শোষণক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার নিশ্চিত করুন। ডায়াপার লাইন খেয়াল রাখুন এবং প্রয়োজন হলে পাল্টে দিন। শিশুর ব্যবহৃত ডায়াপার সুন্দর করে মুড়িয়ে নিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিন।

নবজাতকের জিহ্বা পরিষ্কার

বাবুদের দুধ খাওয়ার কারণে জিভের মধ্যে সাদা সাদা আস্তরণ পড়তে দেখা যায়। অনেক মায়েরা এই বিষয়টি খেয়ালই করেন না। তাই ঐ সমস্ত শিশুদের মুখে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। মনে রাখবেন এটা পরিষ্কার করাও খুব জরুরি। এটা পরিষ্কারের জন্য পরিষ্কার শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন। আলত করে মুছে দিন আপনার ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ৷

শিশুর শরীরে ম্যাসাজের নিয়ম

এটা সবাই জানি, শিশুর ত্বক খুব নাজুক হয়। জন্মের প্রায় দশ সপ্তাহ পর থেকে শিশুকে নিয়মিত ম্যাসাজ দিতে পারেন। এতে শিশুর ত্বক আরো একটু স্বাস্থ্যকর হয়। তবে রিসার্চে এটাও দেখা গেছে, শিশুকে কিভাবে স্পর্শ করা হচ্ছে, তার উপর শিশুর সুস্থতা ও বৃদ্ধি খানিকটা নির্ভর করে।

শিশুর শরীরে ম্যাসেজের জন্য তেমন স্পেশাল কোনো নিয়ম নেই। ম্যাসেজের পূর্বে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন। তা হলো শিশুর শরীরে যাতে চাপ না লাগে। কেননা, এতে শিশু ব্যথা পেতে পারে। আর তাই একটা উষ্ণ রুমে নরম একটা ভাজ করা কম্বলের উপর শিশুকে উপর করে শোয়ান। তারপর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বেবী লোশন বা বেবী অয়েলগুলো হাতে মেখে নিন। এরপর আলতো করে শিশুর সমস্ত শরীরে বুলাতে থাকুন। এতে শিশুর চামড়া আরো নরম ও স্বাস্থ্যকর হবে।

সুস্থ ও হাসিমাখা মুখে নতুন অতিথি আসুক এটা আমরা সবাই চাই। তাই আপনার নবজাতকের ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে জন্ম থেকেই তার যত্ন নেওয়া জরুরী। উপরিউক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে আপনার নবজাতক শিশু নাভির ইনফেকশন, সর্দি, ডায়রিয়া বা অন্যান্য ইনফেকশন হতে রক্ষা পাবে। শিশুকে যত্নে রাখুন ভালোবাসায় আর পরিচ্ছন্নতায়।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

শিশু জন্মের কতদিন পর গোসল করাবেন?

জন্মের তিন দিন পর আপনি বাচ্চাকে গোসল করাবেন। প্রতিদিন করানোর দরকার নেই। একদিন, দুই দিন পর করানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই সেটি হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে করাতে হবে।


বাচ্চার কানের ময়লা পরিষ্কার করার উপায় কি?

কানের ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহার করতে পারেন বেবি অয়েল। বেবি অয়েল হাতে নিয়ে ২ কানে ভাল মতো লাগিয়ে নিন। তারপর কয়েক ফোটা তেল আস্তে আস্তে কানের ভিতরে দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে কটনবাড বা কান পরিষ্কার করার কিট দিয়ে কান পরিষ্কার করে ফেলুন।

কানের ময়লা পরিষ্কার করার সহজ উপায় হল অলিভ অয়েল। কানের ময়লা নরম হয় এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়। সামান্য অলিভ অয়েল নিয়ে গরম করে নিন, তারপর একটি ড্রপারে গরম তেল ভরে ২ কানের ভিতরে দিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন কানের ভিতরের ময়লা নরম হতে। কান পরিষ্কার করার কিট দিয়ে কান পরিষ্কার করে নিন।


নবজাতকের নাকে শব্দ দূর করার উপায় কি?

নাক ডাকার অন্যতম কারণ নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাক জ্যাম হয়ে যাওয়া। ঠান্ডা লাগলে বা অ্যালার্জিতে এই ঘটনা ঘটে। এজন্য বিছানার মাথার দিক কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে রাখা উচিত। চিত না হয়ে বরং এক কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করুন। শিশুর খাবার ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগেই শেষ করুন।


নবজাতকের নাক বন্ধ হলে করণীয় কি?

সরষের তেলে রসুন গরম একটা চায়ের কাপের চার ভাগের এক ভাগ সরষের তেল নিন। তাতে ২-৩টে রসুন কোয়া দিয়ে হালকা আঁচে গরম করে নিন। তারপর সেটাকে একটু ঠান্ডা হতে দিন। তারপর বাচ্চার গলা, বুক, পিঠ ও পায়ের তালুতে আসতে আসতে মালিশ করুন।

যে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞের প্রথম পছন্দ স্য়ালাইন ড্রপ। বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে ধরুন। নাকে ধীরে ধীরে ২-৩ ড্রপ দিন। অপেক্ষা করুন, ড্রপ ভিতরে যাওয়া পর্যন্ত। তারপর বাল্ব সিরিঞ্জ দিয়ে নাকের ময়লা বের করে নিন।


বাচ্চাদের ওরাল থ্রাশ কি?

বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হয়ে গেলে তখন এক ধরণের ছত্রাক আক্রমণ করে। বাচ্চাকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলেও এই রোগ হতে পারে। কারণ কিছু কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো খেলে বাচ্চাদের শরীরের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায়, ইমিউন সিস্টেমের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তখন মুখের ভিতর গালসি বা চোয়ালে একধরনের সাদা ফোস্কার মত দেখা যায় যাকে বলে ওরাল থ্রাশ।

ওরাল থ্রাশ হলে প্রথমত তার সবকিছু খুব যত্নের সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। খেলনা থেকে শুরু করে আশেপাশে বিভিন্ন বস্তু যা শিশু মুখে দিতে পারে, খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। সাথে মায়ের দুধের নিপল-ও সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। ডাক্তার দেখালে সাধারণত একটি অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রীম দেয়। নিয়মানুযায়ী এই ক্রীম ব্যবহার করলে সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই ওরাল থ্রাশ সেরে যাবে।


নবজাতক নাকে মুখে বমি করে কেন?

বদ হজম বা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করলে, বমি করে দেয়। তবে অনেক কারণ হতে পারে বমি করার পিছনে।


নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন?

জন্ডিস হতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।


নবজাতকের চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ ও সমাধান কি?

প্রথমত ম্যাসেজ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে কারণ ম্যাসাজের ফলাফল এক বছর পর্যন্ত, ৯৬ থেকে ৯৮ ভাগ পাওয়া যাবে। এরপরেও যদি উন্নতি না হয়, দুই বছরের মধ্যে কোনো একসময়ে অজ্ঞান করে, ডাক্তার তারের মতো যন্ত্র দিয়ে সেই রাস্তাটিকে পরিষ্কার করে দেয়। এটি করলে যাদের সমস্যাটি রয়ে গেছে তাদের মধ্য থেকে ৯৫ ভাগ শিশুর বিষয়টি ভালো হয়ে যায়।

আশা করি, নবজাতক শিশুর যত্ন বিষয়ক এই টিপস গুলো দিয়ে, আপনাদের জানার বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে পেরেছি, আপনাদের প্রশ্ন জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। ভালো থাকবেন, আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখায়।

আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখুন –

আরো পড়ুন- শিশুর খাবারে অরুচি ও প্রতিকারের উপায়

শিশুকে শাসন – শাস্তি নাকি প্যারেন্টিং পদ্ধতি – Baby Behavior Guidelines

শিশুকে শাসন

শিশুকে শাসন – শাস্তি নাকি স্মার্ট টেকনিক অনুসরণ করবেন: শিশু শব্দটার সাথে মিশে আছে অবুঝ একটা ভাব। অজানা, অচেনা আর অবোধ সবটাই থাকে একটি শিশুর মধ্যে। আচ্ছা একটা পাগল যদি আপনাকে ঢিল মারে তাহলে কি আপনিও তার দিকে ঢিল মারবেন? নাহ, কখনই না, কারণ আপনি জানেন যে তার হিতাহিত জ্ঞান নেই। ঠিক তাই একটি বাচ্চা যখন কোন ভুল করে বা বুঝতে চায় না তখন যদি আপনি তাকে মারেন বা ধমক দেন তাহলে একরকম পাগলামি হবে আপনার।

শিশুকে শাসন ও প্রতিপালন

শুধু তাই নয় শিশুর সুস্থ্য স্বাভাবিক বিকাশ ও চরিত্র ব্যাপক প্রভাবিত হবে। আজকে তাই এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলব এবং শাস্তির বদলে কি করা উচিত তা নিয়ে জানাব। চলুন তবে শুরু করা যাক-

আমরা আলোচনা করব, শাস্তি কেন আপনার সন্তানকে জবাবদিহিতা শেখায় না? অথবা সন্তানকে শাস্তি দিলে কি হয় এবং তার প্রতিকার? কোনও শাস্তি ছাড়াই কীভাবে কোনও শিশুকে তার আচরণের জন্য জবাবদিহি করতে হয়?

“আমি সম্প্রতি ফিনিশ শিক্ষামন্ত্রীর একটি উদ্ধৃতি পড়েছিলামঃ “ফিনিশ ভাষায় জবাবদিহিতার কোনও শব্দ নেই। জবাবদিহিতা এমন কিছু – যখন দায়িত্ব শেষ হয় তখন জবাবদিহিতা শুরু হয়। “- শিক্ষক টম।

এর অর্থ কী? এর অর্থ হলো- আমাদের সন্তানকে তার আচরণের জন্য দায়বদ্ধ রাখা? আমার সংজ্ঞাটি হ’ল এরকম- আমাদের শিশু তার ক্রিয়াকলাপগুলির জন্য দায়বদ্ধতা সংশোধন করে এবং পুনরাবৃত্তি এড়ানো সহ কর্তৃত্বের চিত্র উপস্থিত থাকবে কিনা তা গ্রহণ করবে।

মূলত, নৈতিক মূল্যবোধের সহিত কিভাবে একজন শিশুকে বড় করা যায়- আমরা সে বিষয়েই কথা বলব। এদিকে বেশিরভাগ লোকেরা ধরে নিয়েছে যে, শাস্তিই মানুষকে সঠিক কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তাই আমরা যদি আমাদের বাচ্চাদের শাস্তি না দিই, তবে তারা ভুল কাজ করে বড় হবে। এটি মানব প্রকৃতির একটি বর্ণহীন দৃষ্টিভঙ্গি। বরং এটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বাচ্চাদের শাস্তি দিলে তারা ইতিবাচক মনোভাব থেকে পিছিয়ে পড়ে। বরং তারা নেতিবাচক মনোভাবের দিকে প্রবল আকৃষ্ট হয়। যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য ঝুকি বয়ে আনে।

শাস্তি বনাম প্যারেন্টিং টেকনিক

চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, বাচ্চাদের শাস্তি দিলে তার পরিণতি কি হতে পারে আর কি তার প্রতিকার? অসাধারণ কিছু প্যারেন্টিং টিপস আপনাদের সামনে তুলে ধরব:

খারাপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করা

যেসমস্ত খারাপ আচরণ করার জন্য বাচ্চাকে আপনি শাস্তি দিচ্ছেন বরং সে না শুধরিয়ে সে সমস্ত খারাপ আচরণের প্রতি আরো বেশি ঝুকে পড়ে। পাশাপাশি এটি তাকে আরও স্বকেন্দ্রিক এবং কম সহানুভূতিশীল করে তোলে। বস্তুত, সে জানেনই না তার করা খারাপ আচরণটির পরিণতি কি?

ধরেন, কোনো কারণে আপনি রেগে গেলেন। যার ফলে স্ত্রীকে শুরু করলেন বেধরক মার, সাথে যাচ্ছেতাই গালি। এ ঘটনা আপনি প্রায়ই বাড়িতে ঘটান। কিন্তু পাশে যে আপনার ৪-৫ বছর বয়সী শিশুটি আছে সেদিকে আপনার কোনো ভ্রুক্ষেপই থাকে না। এটা হয়তো জেনে থাকবেন, শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।

সুতরাং আপনার দেওয়া প্রত্যেকটি গালি সে মনে রাখে। কিন্তু সে যখন না বুঝে আপনাকে “শালা, কুত্তার বাচ্চা” ইত্যাদি বলে গালি দেয়, তখন আপনি ভাবলেন যে ‘এবার একে শাসন করতে হবে। নয়তো বড় বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।” শুরু করলেন বেধরক মাইর। ব্যাস কি হলো “ইটটি মেরে পাটকেলটি খেতে হলো।”

যাইহোক, সেদিন শাসন করার পর আপনি আবারো স্ত্রীকে বাচ্চার সামনে অহেতুক গালাগালি করলেন। তাহলে মনে রাখবেন, আপনার বাচ্চার খারাপ আচরণটি পুনরাবৃত্তি করার সম্ভাবনা ১০০%।

স্মার্ট টেকনিক- এক্ষেত্রে আপনি তার সামনে ঐ পরিস্থিতির ভালো ও খারাপ দুটো দিকই তুলে ধরতে পারেন। তাহলে সে নিজে থেকেই নিজেকে শুধরিয়ে নিবে। বাচ্চাদের সামনে কখনো গালিগালাজ বা কোনো খারাপ আচরণ করবেন না। তাদের নীতি গল্প শোনাবেন বা তার সামনে আপনার স্ত্রীকে গল্প শোনাবেন, দেখবেন মনযোগ দিয়ে শুনে নিজে উপলদ্ধি করতে পারবে। আর একবার নিজে থেকে বোঝা বা উপলদ্ধি করতে পারলে সারা জীবন তা টেকসই থাকবে।

নিজেকে একজন খারাপ ব্যক্তি ভাবা

শাস্তি একটা শিশুর মন মানসিকতা নষ্ট করে। তার সুস্থ চিন্তাধারায় বাধা ঘটায়। বারংবার শাস্তি দেওয়ার কারণে সে নিজেকে একজন খারাপ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাই খারাপ আচরণটির পুনরাবৃত্তি করার সম্ভাবনা তার খুব বেশি।

ধরেন, বিনা কারণে আমরা সবাই একটা ১০-১২ বছর বয়সী শিশুকে ‘চোরের ব্যাটা চোর’ বলে ডাকি। তার সমবয়সী বন্ধুবান্ধব, এমনকি বড়রাও একই ভাবে তাকে তাচ্ছিল্য করে। এ ঘটনা একদিন নয় বরং তার সাথে প্রত্যেকদিন ঘটে। এতে শিশুটি ধীরে ধীরে মনের শক্তি হারিয়ে ফেলে। হাজারো তাচ্ছিল্যের মাঝে সে নিজেকে একজন খারাপ ব্যক্তি বিবেচনা করে। সে চিন্তা করে ‘সবাই যেহেতু আমাকে খারাপ বলে তাহলে হয়তো আমি খারাপ।’ দেখি খারাপ কাজটাই করি। এভাবে সে ভয়ংকর পথে পা বাড়ায়।

স্মার্ট টেকনিক- শিশুকে শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অযথা কাউকে তাচ্ছিল্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একজন লোক খারাপ তাই বলে তার ছেলেও খারাপ হবে। এমনটা ভাবা মূর্খতার পরিচয়।

মিথ্যা বলার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া

শাস্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘ভবিষ্যতে লুকিয়ে থাকা।’ অর্থাৎ অপরাধের পর ধরা খাওয়া থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যা বলার মাধ্যমে এড়ানো। সুতরাং শাস্তি শিশুদের মাঝে অসততা বাড়ায়।

ধরেন, আপনি ৪-৫ বছর বয়সী একটা বাচ্চাকে ছোট ছোট সব ভুলের জন্যও শাস্তি দেন। অহেতুক মারধর করেন। যার ফলে সে এটা ভেবে নেয় যে, কোনো ভুল হলে বাবা আমাকে মারবেই। আর শিশুরা শাস্তিকে প্রচণ্ড ভয় পায়। ফলে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সে মিথ্যা বলা শুরু করে। হঠাৎ একদিন ভুলবশত তার হাত থেকে আপনার পছন্দের ঘড়িটি পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে যায়। আপনি এসে জিঙ্গাসা করলেন, ঘড়িটি কে ভেঙেছে। সে বলল, বাবা বিড়ালটা ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলেছে। আর আপনিও বিষয়টাতে সম্মতি দিলেন। এতে সে বুঝে ফেলল মিথ্যা বললে শাস্তি থেকে বাঁচা যায়।

আর এভাবেই শুরু হয় তার মিথ্যা বলা।

স্মার্ট টেকনিক- সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করলে এমনটা কখনোই হতো না। বরং সে আপনাকে আদর করে বলতো, বাবা আমি তোমার পছন্দের ঘড়িটা ভুলবশত ফেলে দিয়ে ভেঙে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করো। আর আপনি আদর করে তাকে একটি চুমো দিয়ে বলতেন, ইটস ওকে, মামনি। তবে একটু সাবধানে ধরিও। তাহলে শিশুটি আর কখনোই আপনাকে মিথ্যা বলার সাহস পেত না। সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করুন।

নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়

শাস্তিকে বাচ্চারা সবসময় অন্যায় বিবেচনা করে। এটি বাচ্চাদের ভালো কিছু শেখায় না। বরং এটি তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করা শেখায়। যা বাচ্চাদের মধ্যে নৈতিক ধারণা জন্মাতে বাধা প্রদান করে।

ধরেন, যেখানে আপনার শরীরে আঘাত করলে আপনি সহ্য করতে পারেন না, সেখানে একটা বাচ্চার শরীরে আঘাত করলে সে কিভাবে সহ্য করবে। হ্যাঁ, বাচ্চাদের সহ্য ক্ষমতা অনেক কম। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আপনার মেয়ে কাঁচের সুন্দর গ্লাসটি ভেঙে ফেলল।

আর আপনি তাকে চট করে একটা তাপ্পর মারলেন। কিন্তু আপনি এটাতো জানেন, সে ছোট মানুষ। ভুলবশত, ভেঙে গেছে। কিন্তু না, আপনার রাগের সামনে ছোট বড় সবাই সমান। এসব কাণ্ড আপনি প্রায়ই করে থাকেন।

তবে ভেবে নিন, শিশুটি আপনাকে একজন কঠোরপন্থী অভিভাবক হিসেবেই বিবেচনা করবে। আর সে এটাও ভাববে, বড়রা শুধু শাস্তিই দিতে পারে, আদর করতে পারে না।

স্মার্ট টেকনিক- আপনার উচিত ছিল ‘গ্লাসটি ভাঙ্গার সাথে সাথে শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া। তার কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়েছে কিনা তার খোজখবর নেওয়া। তাকে এটা বলা, মামনি একটু কাঁচের গ্লাস একটু সাবধানে ধরতে হয়।

নতুবা ভেঙে গিয়ে তোমার শরীরে ক্ষত হতে পারে। দেখতে আর কোনো দিন আপনাকে বকাবকি করতে লাগত না। সে বিষয়টা একেবারে সহজভাবে শিখে যেত। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য আপনার উপর নির্ভর করছে।

পিতামাতার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া

শাস্তি – হ্যাঁ, সময়সীমাও – সন্তানের সাথে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। সন্তানের বিভিন্ন ভালো কাজে পিতামাতা সন্তুষ্ট হবে – এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার ভালো খারাপ সব কাজেই আপনি তার ভুল ধরেন, তাকে নানাবিধ কথা শোনান। এভাবে প্রতিনিয়ত শাস্তি দেওয়ার ফলে সন্তাদের সাথে পিতামাতার সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। আর শাস্তি যতই বাড়ে, সম্পর্ক ততই নষ্ট হয়। আর সম্পর্ক যত নষ্ট হয়, সন্তানের আচরণ ততই খারাপ হতে থাকে।

ধরেন, আপনার ১৩-১৪ বছর বয়সী শিশুটি খারাপ সংগ পেয়ে সিগারেট খেতে শুরু করেছে। লোক মারফত আপনি জানতে পারলেন যে ঘটনা সত্য। আর এ ঘটনার জন্য আপনি তাকে প্রতিনিয়ত টর্চার করা শুর করলেন। দেখা যাচ্ছে, সে বিষয়টি বুঝতে পেরে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আপনি টর্চার করা ছাড়লেন না। এতে আপনার প্রতি তার একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে। যার ফলে তার সাথে আপনার সম্পর্কের দূরুত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।

স্মার্ট টেকনিক- আপনি যদি তাকে মারধর না করে সিগারেট খাওয়ার কুফল ও রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জানাতেন তবে সে নিজে থেকেই শুধরিয়ে নিতো। আর মনে রাখবেন এক কথা বার বার বলা কেউ পছন্দ করে না। না আপনি, না আমি। তাই তার পরিবর্তন হয়েছে কিনা এ বিষয়টি আগে খেয়াল করুন।

সামাজিকীকরণে বিরূপ প্রভাব

এটা আমরা সবাই জানি, একজন শিশু জন্মের পর তার আশেপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটায়। এটাকে বলে সামাজিকীকরণ। কিন্তু একজন শিশুকে শাস্তি দেওয়া হলে এই প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। বরং সে ভালো জিনিসগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিসগুলোর দিকে ঝুকে পড়ে। শিশুটি না বুঝে ধীরে ধীরে আরো বেশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

আপনার হয়তো জানা থাকতে পারে- পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমবয়সী বন্ধু, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এসব জিনিসগুলো সামাজিকীকরণের অংশ। সমাজে চলতে গেলে ছোট খাটো ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক।

স্মার্ট টেকনিক- ছোট ছোট ভুলের জন্য আপনার সন্তানকে শাস্তি না দিয়ে তাকে ভালোবাসা দিন। তাকে এটা শেখান- ভুল হলে কিভাবে অন্যের কাছে মাফ চাইতে হয়, কিভাবে সত্য বলতে হয়, কিভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায়, কিভাবে অন্যের খারাপ জিনিসগুলো বর্জন করে ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করা যায় ইত্যাদি।

আবেগের মরণ

জন্মের ১ বছরের মধ্যেই শিশুর মধ্যে আবেগ এর সঞ্চার ঘটে।

উদাহরণস্বরূপ, খেয়াল করে দেখুন তো- ১ বছর বয়সী একটা শিশুর সামনে আপনি যখন একটু মজাদারভাবে অঙ্গাভিনয় করেন তখন শিশুটি হেসে উঠে। আবার তার পাশে অন্য একটি শিশু কান্না করলে সেও কেঁদে উঠে। আর একটি বড় বিষয় হলো, যে মানুষটি তাকে বেশি বেশি আদর করে, তার আবেগগুলি বুঝে তার সাথে শিশুটি থাকতে বেশি পছন্দ করে। এমনি অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে।

কোথাও আঘাত পেলে শিশুরা চায় বাবা মা তাকে আদর করুক, তার সেফটি হোক। প্রতিটি শিশুর বৈশিষ্ট্য এটি। কিন্তু তা না করে আপনি তাকে মারেন, তাকে গালিগালাজ করেন। এভাবেই তার আবেগের মরণ ঘটে। আর এই ছোট্ট বয়স থেকেই আপনি যদি তাকে কড়া শাসনের মধ্যে রাখেন, তার ছোট্ট ছোট্ট ভুল গুলোর জন্য তাকে শাস্তি দেন তাহলে শিশুটির মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সে আপনাকে একজন খারাপ লোক ভেবে নেয় এবং বারংবার দুর্ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি ঘটায়।

স্মার্ট টেকনিক- আঘাত প্রাপ্ত হলে সন্তানকে না মেরে তার সেফটি হোন। তাকে বোঝান, এটা তোমার জন্য বিপদজনক। দেখবেন, সে ঠিকই আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। সন্তান লালন পালন ভালো ভাবে করতে হলে আপনার আবেগের সাথে তার আবেগ মিশে যাবে। আপনি যেন আপনার বাচ্চার মুখ দেখে বুঝতে পারেন তার কি চাই, তেমনি আপনার বাচ্চাও যেন তার মায়ের মুখ দেখে তা বুঝে।

অপরাধবোধের সৃষ্টি

একটা ঘটনা বলি। একটা ছোট্ট শিশু, বয়স আনুমানিক ৮ বছর হবে। পেটের খিধায় দোকান থেকে দু তিনটা রুটি চুরি করে। এতে দোকানদার তাকে হাতেনাতে ধরা পায় এবং তাকে চোর বলে সম্বোধন করে। এতে শিশুটি মন খারাপ করলেও নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করে।

কিন্তু হঠাত ঐ দোকানে আবারো চুরি হয়। কিন্তু এবার দোকানদার চোরকে ধরতে পারেনি। ইতোমধ্যে ঐ ছেলেটি দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এবং দোকানদার পুণরায় তাকে চোর বলে সম্বোধন করে। এভাবে দোকানদার তাকে চোরের সিলমোহর দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কোনো চুরির ঘটনা ঘটলে তার নাম আসতোই এবং শিশুটি চুরি না করেও গণপিটুনি খেত।

এভাবে শিশুটি ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে উঠে। আশেপাশের মানুষকে নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করে। পরবর্তীতে শিশুটি অপরাধ জগতের সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে।

স্মার্ট টেকনিক- ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এক ভুলের জন্য বারংবার শাস্তি দেওয়াটা অপরাধ। এটা হিতের বিপরীত। মানুষকে সংশোধনের একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।

আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠা

শাস্তি দেওয়ার ফলে বাচ্চারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠে। কি, বুঝলেন না তো? আসলে ব্যাপারটা এরকম – ধরেন, আপনি বাচ্চাকে একটু ভিন্নভাবে লালনপালন করতে চান। ডিসিশন অনুসারে অন্য বাচ্চাদের সাথে তাকে মেলামেশাও করতে দেন না। বাইরের পরিবেশ এবং বন্ধু-বান্ধব থেকে তাকে বিরত রেখে সম্পূর্ণ গৃহবন্দী অবস্থায় তাকে বড় করছেন।

জানেন কী – এই ডিসিশনটার জন্য আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা অভিভাবকের পরিচয় দিলেন। গৃহবন্দি অবস্থায় শিশুটি গুটিকয়েক লোক ব্যতিত অন্য কারো সাথে মিশতে পারে না।

তাই বাইরের পরিবেশ কেমন, অন্য লোকদের আচরণ কেমন, দুঃখ কি, আনন্দ কি, কাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত – এসব বিষয়ে তার কোনো ধারণাই জন্মায় না। বরং সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে সব সময়। অর্থাৎ আমরা যেটা গ্রাম্য ভাষায় বলি, ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম।’ এমন হীন মানসিকতা নিয়ে সে বড় হয়। শিশুকে শাসন করতে গিয়ে যেন হিতে বিপরীত হয়ে না যায়।

স্মার্ট টেকনিক- বাচ্চার মানসিক বিকাশে আত্মকেন্দ্রিকতা যদি ছোট থেকে গড়ে ওঠে তাহলে বৃদ্ধ বয়সে আপনার থাকার জায়গা হতে পারে বৃদ্ধাশ্রম বা নিঃসঙ্গ জীবন। তাই ছোট থেকে তাকে শেয়ারিং শেখান, কিভাবে অন্যকে দিয়ে খেতে হয় তার আনন্দ ভোগ করার জায়গা করে দেন।

অসভ্যতার পরিচয় দেওয়া

বাচ্চাদের শাস্তি দিলে তাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। এতে তারা অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা না করে বরং তাদের ভুলত্রুটি ধরে বেড়ায়। এমনকি খারাপ মন্তব্য করতেও দ্বিধাবোধ করে না।

স্মার্ট টেকনিক- শিশুদের সৃষ্টিশীল হতে শেখান। কিভাবে অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করতে হয় তা শেখান? অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করবেন না, তুলনা কেউ পছন্দ করে না। তাই প্রশংসা করুন সবার আলাদা ভাবে এবং মিষ্টি সুরে।

স্ব-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার বিনাশ

শাস্তি শিশুদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটায়। কি, বুঝলেন নাতো! শুনুন তাহলে, একজন শিশু ছোট থেকে ধীরে ধীরে যখন বড় হয় তখন সে নতুন নতুন জিনিস শেখে ও নতুন নতুন জিনিস করে। এতে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই সামান্য ভুলত্রুটির জন্য আপনি তাকে বেধরক শাস্তি দেন। এখন আপনি ভাবছেন, শাস্তি দিলাম। যাক, এখন থেকে আর এ কাজ করবে না।

আমি বলব, আপনি চরম একটি ভুল কাজ করলেন। এর জন্য তার করা ভুলত্রুটি গুলো থেকে সাময়িক পরিত্রাণ পেতে পারেন। কিন্তু এই শাস্তি দেওয়ার ফলে শিশুটির একটি বড় ক্ষতি আপনি করে ফেললেন। আর তা হলো ‘নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।’ হ্যাঁ, নিয়মিত শাস্তি দেওয়ার ফলে শিশুদের স্ব-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে যায়। যার ফলে শিশুরা যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য পিতামাতা নির্ভর হয়ে পড়ে। যা তার পরবর্তি জীবনে চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

স্মার্ট টেকনিক- শিশুটি যখন ভুলটি করেই ফেলেছে, তখন আপনার উচিত ছিল তাকে সঠিক জিনিসটি জানানো। এমনকি ঐ ভুলটির ভালো দিক ও খারাপ দিক তার সামনে তুলে ধরা। যাতে সে তার করা ভুলটির জন্য অনুশোচনা করতে পারে। এভাবে সে নিজে নিজেই সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারত। সন্তান খুব ছোট হলে তাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝাতে হবে।

লক্ষ্য পূরণে বাধা

শাস্তি শিশুদের লক্ষ পূরণে বাধা প্রদান করে। ধরেন, ১১-১২ বছরের একজন শিশু পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি চান সে ক্রিকেট না খেলে বরং ঐ সময়টাও পড়ালেখা করুক। এতে তার রেজাল্ট ভালো হবে। তাই জোরপূর্বক তাকে আপনি পড়ালেখায় বাধ্য করালেন। আপনি ভাবছেন, হম্ম এবার দেখি এ প্লাস কোথায় যায়?

কিন্তু সত্যটা কি জানেন? আপনি নিজের স্বপ্ন পূরণে তার উপর জোর খাটালেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণে আবার আপনি নিজেই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। এবার নিশ্চয়ই আপনার মাথা ঘুরছে। কেননা, আমি নিশ্চিত এ বোধবাক্যটি আপনার মাথায় একেবারেই ঢুকেনি।

ঠিক আছে, আমি বোঝাচ্ছি। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ফ্রেশ হয়ে পড়াশোনা, এরপর টিউশন, তারপর টানা ৫-৬ ঘন্টা স্কুল, বিকেলে আবার একটা টিউশন এবং রাতে নিজের পড়াশোনা। পুরাই রোবট বানাই ফেলছেন। কি একটা অবস্থা? এই রেজাল্ট রেজাল্ট করে আপনি তার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলতেছেন।

আসলে শিশুদের প্রধান দায়িত্ব হলো পড়াশোনা। এটা ঠিক আছে। তাই বলে যে সারাদিন রাত পড়াশোনাই করবে এমনটা নয়। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো তাকে সঠিকভাবে লালন পালন করা, তার সামাজিকীকরণে অংশ নেওয়া, তার শারীরিক গঠন দেখা, তার বুদ্ধির বিকাশ ঘটানো ইত্যাদি।

সারাদিন একঘেয়েমি টিউশন আর ক্লাস করার পর বোরিং লাগাটাই স্বাভাবিক। আর এই বোরিংনেস দূর করতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো খেলাধুলা। খেললে শরীর থেকে ঘাম ঝরে, শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, মস্তিষ্ক দ্রুত কর্মক্ষম হয়। উপরন্ত, খেলাধুলার পর নিজের সুবিধার্তে গোসল করলে পরবর্তী কাজের জন্য মস্তিষ্ক নতুন ভাবে কাজ শুরু করে। তাই আপনার সন্তানকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খেলতে দিন।

স্মার্ট টেকনিক- খেলাধুলা ক্লান্তি দূর করার একটি উত্তম উপায়। নিয়মিত খেললে শিশুদের শারীরিক গঠন ঠিক থাকে এবং দ্রুত বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। তবে কোনো বাচ্চাদের যদি পড়াশোনার থেকে খেলাধুলার প্রতি প্রবল আকর্ষণ থাকে তবে তাকে বিভিন্নভাবে বোঝাতে হবে। আপনি তার সামনে দুটো অপশন রাখতে পারেন। এইভাবে – তুমি ৪ টার সময় বই নিয়ে বসবে নাকি এখন খেলাধুলা করে ৬ টায় বই নিয়ে বসবে। দেখবেন, সে আপনাকে একটি সঠিক মন্তব্যই দিবে।

কাজের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলা

শাস্তি শিশুদের কাজের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে। ধরেন, আপনার বাচ্চাটি পড়ালেখার পাশাপাশি ছবি আকতে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি তার ছবি আঁকাকে মূল্যায়ন করেন না। বরং একটি বাজে কাজ বলে তাচ্ছিল্যের সুরে মন্তব্য করেন। যদি আপনি তার প্রতি এমন আচরণ করতে থাকেন তাহলে শিশুটি আর নিজে থেকে কখনো আর নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে না। তার সৃজনশীলতা ও নতুন জিনিসকে জানার আগ্রহ একেবারেই দমে যাবে।

স্মার্ট টেকনিক- শিশুদের ভালো কাজের বেশি বেশি প্রশংসা করুন। তাকে আরো ভালো করার উৎসাহ দিন। নতুন নতুন চিন্তা করার ও নতুন নতুন কাজ করার অনুপ্রেরণা দিন। মাঠে নিয়ে তার সাথে খেলা করুন বা তাকে খেলতে দিন তার মত করে।

শাস্তি কখনোই শিশুদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। শাস্তির ফলে আপেক্ষিক লাভ হলেও ভবিষ্যতে এর কুফল অনেক। আসলে শিশুদের মানসিক সমস্যা বা রোগ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একটু করে জন্ম নিতে থাকে। যার বড় প্রভাব বিস্তার করে শাস্তি বা বাচ্চাকে মেরে শাসন করা।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু পিতামাতা তাদের সন্তানকে শাস্তি দিয়ে একটা কঠিন রুটিন এর মাধ্যেমে বড় করেছেন। যার ফলে ঐ সমস্ত শিশু তাদের সমবয়সীদের তুলনায় নৈতিকভাবে কম বিকাশ করেছিল। কিন্তু যে সমস্ত পিতামাতা তাদের সন্তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ঠিক রেখে একটা সহজ রুটিনে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন সে সমস্ত সন্তানদের বুদ্ধির বিকাশ বেশি হয়েছিল।

তাইতো আলফি কোহন বলেছেন -“Having learned to do exactly what they’re told in order to avoid losing their parent’s love, they tended to just apply rules in a rigid, one-size-fits-all fashion.”

তাদের যা বলা হয়েছিল ঠিক তা করতে শিখতে পেরে তারা কেবল কঠোর, এক-আকারের-ফিট-ফ্যাশনে নিয়ম প্রয়োগ করার ঝোঁক রেখেছিল,” অ্যালফি কোহন বলেছেন।
শিশুকে বোঝানোর কার্যকরী উপায়

সামগ্রিকভাবে নেওয়া, গবেষণার এই সংস্থাটি সুপারিশ করে, যে শিশুদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে (সময়সীমা ও পরিণতি সহ) তারা আরও বেশি খারাপ আচরণ প্রদর্শন করে। যেসব বাচ্চারা খারাপ আচরণ করে তাদের যে সব সময়ই শাস্তি দেওয়া হয় এমনটা নয়, তবে শাস্তি প্রাপ্ত বাচ্চারা বেশি বেশি খারাপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করে।

শিশুকে শাস্তি দিবেন নাকি ভালোবাসা

যদি দেখেন যে আপনার সন্তান এমন একটা কাজ করছে যা অনেক বোঝানোর পরেও কাজ হচ্ছে না, এক্ষেত্রে আপনাকে একটি কার্যকরী টিপস বলি- প্রথমত মা হিসেবে আপনাকে যে সে অনেক বেশি ভালোবাসে তা নিশ্চিত করুন। এজন্য আদর, মায়া, মমতা আর ভালোবাসা এমন ভাবে দিন যেন সে আপনাকে ছাড়া আর কিছুই না বোঝে।

এমতবস্থায়, তার কোন খারাপ কাজে আপনি মন খারাপ করে চুপচাপ থাকুন, সে যেন বুঝতে পারে যে মায়ের অনেক মন খারাপ, আর তার জন্য সে দায়ী। দেখবেন, আপনার এই মন খারাপ করে থাকা মুখের দিকে সে আর তাকাতে না পেরে ঐ খারাপ কাজটা করা থেকে বিরত থাকবে। আমার মা ঠিক এই পদ্ধতি দিয়ে আমাকে বড় করেছে, বলতে গেলে এটা এক ধরনের ইমোশনাল ব্লাকমেল। তবে বাচ্চার ইমোশন নিয়ে বেশি খেলবেন না, যতটা পারেন গল্পের মাধ্যমে শেখান আর দু একবার ভুলের জন্য তাকে মিষ্টি ভাবে সতর্ক করেন।

যে বিষয়টা একবার বোধ বা উপলদ্ধি হয় সেটা আর কখনো হারায় না। কিন্তু জোর করে ধমক দিয়ে সেটা বেশিদিন টিকে না, কারণ নিষিদ্ধ কাজের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে বেশি আর বাচ্চাদের তো আরো বেশি। তাই না না করে আর ভয় দেখিয়ে ঐ কাজের প্রতি তার নিষিদ্ধ আগ্রহ তৈরী করবেন না। বাবা মা হিসেবে সর্বোচ্চ ধর্য আর সহনশীল হতে হবে আপনাকে। এজন্য বাচ্চা নেয়ার আগে প্যারেন্টিং কোর্স করা উচিত প্রত্যেক পিতা মাতাকে। তাহলে মারাত্মক ভুল গুলো আর হবে না এবং আদর্শ সন্তানের বাবা মা হিসেবে নিজেকে গর্বিত করতে পারবেন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

বাচ্চাদের মারলে কি হয়?

শিশুর মানসিক সমস্যার মূল কারণ এই গালি দেয়া বা বকা দেয়া কিংবা শাস্তি দেয়া। আপনি হয়তো ভাবছেন গালি দিয়ে ভয় দেখালে সে আর সেটা করবে না। কিন্তু আপনার ধারণা ভুল, তাকে আপনি সামান্য সময়ের জন্য বিরত রাখলেন। সে সুযোগ পেলেই সেটা করবে যে কোন সময়ে।

তাছাড়া শিশু রাগি, জেদী, বদমেজাজি, খারাপ স্বভাবের হয় এই ধমক খেয়ে। কারণ তার আত্মসম্মান যখন থাকে না তখন সে আর কোন কিছুর ভয় করে না। তাই আপনার সন্তানকে মূল্যায়ন করুন, পরামর্শ নিন, বাহবা দিন। আর নিষেধ করা সত্বেও কোন কাজ করলে তার জন্য আপনি বুঝিয়ে বলুন বা নিজে অভিমান করুন। বাচ্চাকে উপলদ্ধি দিয়ে শেখানোর চেষ্টা করুন যেটা তার সারা জীবন কাজে লাগবে।


সন্তান অবাধ্য হলে কি করবেন?

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- মা গুনে ছা, অর্থাৎ পরিবারের দেখে বাচ্চারা আচরণ শিখে। আপনি যদি একজন রাগী মানুষ হোন বা জেদি হোন তাহলে আপনার বাচ্চাও আপনাকে দেখে তাই শিখবে। কারণ বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়। সে আপনার কথা না শুনলেও আপনাকে সে অনুসরণ করে। তাই নিজেকে আগে শুধরে নিন, নইলে যত যাই করেন কোন কাজে আসবে না। সন্তান লালন পালনে আপনাকে অনেক স্মার্ট আর ধর্যশীল হতে হবে।


বাচ্চার রাগ কমানোর উপায় কি?

নিজেকে প্রকাশ করতে না পারলেই শিশুরা রেগে যায়। আবার বড়রা ছোট বাচ্চাদের রাগিয়ে মজা পায়। বাবা তার মাকে বাচ্চার সামনে মারছে, বা মা কাজের লোককে বাচ্চার সামনে মারছে, কিম্বা বাবা/মা বাচ্চাকে সামান্য কারণেই মারছে। সে শিখছে “নিজের মতের বিরুদ্ধে কিছু হলেই মারতে হয়”! তাই আগে রাগের কারন অনুসন্ধান করুন। নিজেকে শিশুর জায়গায় কল্পনা করুন। কখন আপনার রাগের চোটে অন্যকে মারতে ইচ্ছা করে, অথচ নিজেকে কনট্রোল করেন? আপনি কথা বলতে পারছেন, তাই সেটা প্রকাশ করতে পারছেন। কিন্তু সে পারছে না বলেই হয়তো মারামারি করছে।

যদি সে মারামারি করে তাহলে তাকে আলাদা করে ডেকে নিন, বসে কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হওয়ার সময় দিন। তারপর তাকে বলুন সে অন্য বাচ্চাকে আঘাত না করে খেলাটা এনজয় করতে প্রস্তুত থাকলে আপনি তাকে খেলতে দিবেন। এভাবে যেকোন বিষয়ে তার রাগ কমানোর জন্য তাকে শর্ত দিন, কিন্তু ধমক বা শাস্তি দিবেন না। ধমক দিয়ে কিছু সময়ের জন্য তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, বাকি সময়টাতে আড়ালে সে ওটাই করবে। তাই ঠিক করেন আপনি কি করতে ইচ্ছুক?


শিশুর জিদ কমানোর উপায় কি?

শিশুর সাথে তর্কে যাবেন না। তাকে এমন প্রশ্ন করবেন না, “তোমার কেমন লাগত যদি সে তোমাকে মারতো/কামড় দিত”? শিশুরা নিজেকে অন্য আরেকজনের জায়গায় বসিয়ে তার অনুভূতি কল্পনা করার মতো দক্ষতা এখনও অর্জন করেনি আর তাই এর মাধ্যমে তাদের আচরণের পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু তারা একটা অন্যায় কাজের ফলাফল কি হয় তা বুঝতে সক্ষম। আর জিদ, অবুঝ, পাগলামি এগুলো শিশুদের মানায়, তারা করবে নাতো কে করবে? এতটুকু গ্রহণ করতে শিখুন, তারপর তার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।

যেমন- সে একটি ভিডিও গেমস আবদার করল, তাহলে সাথে সাথে সেটা কিনে দিবেন না। তাকে এটার জন্য কিছু শর্ত দিন, বলুন যে তুমি যদি এবার ইংরেজিতে ১০০ মধ্যে ৯০ পাও তাহলে সেদিনই কিনে দিব। তারপর সে যদি ঐ নম্বর পায় তাহলে তাকে সেটা কিনে দিন আর বলুন যে এই নম্বর ধরে রাখতে না পারলে কিন্তু এটি আমি নিয়ে নিব। এভাবে প্রয়োজন দেখিয়ে তাকে কোন কিছু অর্জনের জন্য আগ্রহী করে তুলুন।


শিশু দুষ্টুমি করলে কী করবেন?

আচ্ছা বাচ্চারা দুষ্টুমি করবে না তো কে করবে? আপনার বাচ্চা ভীষণ চঞ্চল, ভীষণ দুষ্টু এটা আপনার চিন্তার কারণ কিন্তু একই সাথে সে কিন্তু জিনিয়াস আর চালাক। কারণ এসব বাচ্চারা জীবন উপভোগ করতে পারে, হতাশা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে পারে খুব দ্রুত। আপনি সফল মানুষের জীবনী পড়লে দেখবেন যে প্রায় সবাই ছোটবেলায় অনেক দুষ্টু ছিল।

তাই বাচ্চা যদি মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমি করে অন্যের ক্ষতি করে সেক্ষেত্রে আপনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাও ঠাণ্ডাভাবে। যেমন- সে যদি কারো ক্ষতি করে বসে তাহলে আপনি মন খারাপ করে থাকবেন। যখন বলবে যে- মা তোমার কি হইছে? তখন আপনি বলবেন যে তুমি যার ক্ষতি করছ তার জন্য আমার মন খারাপ। কারো ক্ষতি হলে আমার মন খারাপ হয়। দেখবেন সে আর সেটা করবে না, আর নিজেও উপলদ্ধি করবে যে অন্যের মন খারাপ হলে নিজেরও খারাপ লাগা দরকার।


শিশুদের বোঝানোর উপায় কি?

আমরা অনেক সময় বোঝানোর জন্য শিশুদের অন্যের সাথে তুলনা দেই, তাকে ছোট করি। কিন্তু ভুলেও এটা করবেন না। কোন শিশুই তুলনা পছন্দ করে না। সবার আলাদা একটা পরিচয় আছে। যার সাথে তুলনা করবেন সে তার প্রতিদন্দী হয়ে উঠবে। তাকে হিংসা করা শুরু করবে, অহংকারী হবে। তাই বাচ্চাকে বোঝানোর জন্য গল্প বা ঘটনা শোনাবেন।

যেমন- মিথ্যে বললে কি হয় তার ভয়াবহ কোন ঘটনা আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করেন যাতে সেও শুনতে পায়। দেখবেন আপনার শিশু মনযোগ দিয়ে তা শুনবে আর নিজে থেকে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করবে বিষয়টায় ভয়াবহতা সম্পর্কে। বাচ্চাদের বিচার বিশ্লেষণ খুবই ভালো, সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

উপসংহার

শাস্তি যদি আমাদের শিশুকে সমস্ত ভুল পাঠ শিক্ষা দেয়, তবে কেন শিশুকে শেখানোর জন্য আপনি শাস্তির পন্থা অবলম্বন করবেন? তার সামনে স্নেহপূর্ণ পথ প্রদর্শন করুণ। যার মধ্যে সহানুভূতি, ভালোবাসা, আবেগ ইত্যাদি আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়স ভেদে প্যারেন্টিং নিয়মে – Baby Talk Tips

শিশুদের কথা শেখানোর উপায়

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়স ভেদে – সকল বয়সের বাচ্চা এবার কথা বলবে: শিশুর দেরিতে কথা বলা বা শব্দ উচ্চারণ ঠিকমত না হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে মায়েরা দুশ্চিন্তায় থাকে। অনেক সময় এই বিষয়গুলোকে মনগড়া ট্রিটমেন্ট যেমন- ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া ইত্যাদি নানা উপায় অবলম্বন করে অনেকে। যেটা বাচ্চার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেক সমস্যা আর বড় আকার ধারণ করতে পারে না, বরং ঠিক হয়ে যায় পুরোপুরি। তো আজকে আমি আপনাদের সন্তানের কথা বলা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এমন কিছু সহজ পদ্ধতি বলব যা আপনি বাসায় বসে অনায়াসে করতে পারবেন। চলুন তবে শুরু করা যাক।

শিশুর কথা বলার সমস্যা

‘কথা বলতে শেখা’ এমন একটি প্রক্রিয়া যা জন্মের সময় থেকেই শুরু হয়। যখন আপনার শিশুটি মানব কণ্ঠ কীভাবে শব্দ করতে পারে তা অনুভব করে তখন থেকেই সে নানারুপ শব্দ তৈরি করে। ২ বছর বয়সী, বেশিরভাগ শিশুর একটি বড় শব্দভাণ্ডার রয়েছে। যেখানে তারা তাদের প্রয়োজন এবং ধারণাগুলি প্রকাশ করার জন্য শব্দগুলি একসাথে রাখতে পারে।

বাচ্চারা চারপাশের বিভিন্ন শব্দ মনযোগ দিয়ে শুনে এবং তা নিয়ে ভাবতে থাকে। যখন একবার সে বুঝতে পারে যে এই শব্দটি আসলে এই জায়গা থেকে আসছে তখন সে সেটা একেবারে ব্রেনের মধ্যে জমা করে রাখে। তারপর সে নিজেই এই শব্দটি ভালো লাগলে করতে শুরু করে, যেটা আমরা বুঝতে পারি না। কারণ সেটা সে চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না, ছোট মানুষ বলে কথা। তবে অনেক বাচ্চারাই এটা করতে পারে, একেবারে হুবহু নকল!

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়, তারা বাবা মায়ের অনুকরণ করে। তাই আপনার মুখ থেকেই সে প্রথম কথা বলা শিখে। এজন্য অনেক টেকনিক আছে যা আপনার বাচ্চার কথা বলা ও উচ্চারণ জড়তা দূর করবে। তবে বয়স ভেদে বাচ্চারা যেহেতু আলাদা চরিত্র বহন করে তাই টেকনিকগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আসুন দেখি, আপনার শিশুর কথা শেখানোর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপনি কী করতে পারেন?

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়সভেদে

তিন মাসের বাচ্চা থেকে শুরু করতে হবে। কারণ শিশু কথা বলতে না পারলেও মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকে কথা শুনে, বুঝতে চেষ্টা করে। কোনটা কথা রাগী আর কোনটা কথা মিষ্টি তা সে বুঝে যায় অনায়াসে। তার প্রমাণ স্বরূপ যখন আপনি কারো সাথে ঝগড়া করেন বা উচ্চস্বরে কথা বলেন তখন খেয়াল করে দেখবেন যে পাশে থাকা শিশুটি কাঁদছে, সে বুঝতে পেরেছে পরিবেশ ঠিক নাই।

তাই মায়ের গর্ভাবস্থায় থাকা সময়ে মাকে বিভিন্ন ভাবে কবিতা, ছড়া পড়তে হবে, মাঝেমাঝে বাচ্চাকে শুনিয়ে কথা বলতে হবে, তাহলে দেখবেন এমনিতেই বাচ্চার কথা না বলার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

আসুন দেখি কিভাবে আপনার শিশুটিকে কথা বলা শেখাবেন তা উদাহরণ সহ জেনে নেই।

৩ মাসের শিশুর কথা বলা

আপনার শিশু আপনার কন্ঠ শুনে। সে আপনাকে অনুকরণ করে এবং কলকল শব্দ করে। তারপর আপনার অনুরূপ শব্দ করার চেষ্টা করে। ‘কখন ভয়েস সুন্দর হয়’ কখন একটি কথা মানানসই হয় তা আপনি আপনার বাচ্চাকে এভাবে শেখাতে পারেন-

১। আপনার শিশুর কাছে গান করুন। আপনি তার জন্মের আগেই এটি করতে পারেন! মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ও আপনার শিশু আপনাকে শুনবে। আপনি যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেন বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় তাহলে বড় হয়ে বাচ্চা এই সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

আবার ধর্মীয় কোন গল্প, কথা, বা সংগীত শোনান তাহলে সে সেটার প্রতি টান অনুভব করবে। তাই পেটে থাকা হোক আর নবজাতক হোক তার সামনে গল্পের বই পড়বেন, গুণ গুণ করে গাইবেন, মজার মজার ছড়া শোনাবেন। তাহলে বাচ্চাও এটি করতে চাইবে এবং মুখের জড়তা কাটিয়ে বলতে শুরু করবে।

২। আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। আপনার শিশু উপস্থিত থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে কথা বলুন। এমতাবস্থায়, সে শব্দগুলি হয়তো বুঝতে পারবে না, তবে সে আপনার ভয়েস এবং আপনার হাসি পছন্দ করবে। সে অন্যদের কথা শোনা এবং অন্য লোকদের দেখতেও উপভোগ করবে। অবসরে বা অন্যসময় সে এটা হুবহু করার চেষ্টা করবে।

৩। বিশ্রামের সময়ের জন্য পরিকল্পনা করুন। বাচ্চাদের টিভি বা রেডিও বা অন্যান্য গোলমাল ছাড়াই নিঃশব্দে আধো আধো স্বরে বা অসংলগ্নভাবে কথা বলা এবং খেলার জন্য সময় প্রয়োজন।

তাই সময় বের করে বিভিন্ন শব্দের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। যেমন- কখনো সিংহ, কখনো বাঘের শব্দ থেকে শুরু করে নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। সে শুনবে, তা ব্রেণ সেটা নিয়ে ভাববে এবং হুবহু করার চেষ্টা করবে।

৩ থেকে ৬ মাসের বাচ্চার কথা বলা

লোকেরা একে অপরের সাথে কীভাবে কথা বলে তা আপনার শিশু শিখতে থাকে। আপনি যখন কারো সাথে গল্প করেন তখন আপনি তাকে একজন ‘কথক’ হতে সহায়তা করতে পারেন। নিচের পদ্ধতিগুলো করার চেষ্টা করুন-

১। আপনার বাচ্চাকে কাছে ধরুন যাতে সে আপনার চোখে দেখে।

২। তার সাথে কথা বলে হাসি দিন।

৩। আপনার বাচ্চা যখন অস্ফুট স্বরে বলা কথা বলার চেষ্টা করে তখন তার তৈরি শব্দগুলি অনুকরণ করুন।

৪। যে শব্দটি আপনি করেছেন সে যদি একই শব্দটি পুনরায় করার চেষ্টা করে তবে আপনিও পুনরায় শব্দটি অনুকরণ করুন।

এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে তার সাথে সময় কাটান। এতে কথা বলা সহজ হবে এবং শিশু কথা বলতে উৎসাহী হবে। আর মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক মুজবুত হবে।

৬ থেকে ৯ মাসের বাচ্চার কথা বলা

আপনার বাচ্চা শব্দ করে খেলবে। এই শব্দগুলির মধ্যে কিছু শব্দ যেমন “বাবা” দাদা ইত্যাদি। এসময় খুশিমূলক কোনো কথাবার্তা শুনে বাচ্চা হাসে এবং ধমক শুনে কাঁদে বা তাকে দেখতে অসন্তুষ্ট লাগে। বাচ্চাকে এরকম ছোট ছোট শব্দগুলি বুঝতে আপনি সাহায্য করতে পারেন। (যদিও সে এখনও সেগুলি বলতে পারে না)

১। বাচ্চাকে নিয়ে খেলুন, তাকে পিঠে চড়িয়ে ঘোড়ার মত শব্দ করুন আবার কখনো হাতির মত। এতে শিশু উৎসাহ পায় এবং হাসতে গিয়ে শব্দ তৈরী করে। আবার বইয়ের ছড়া পড়তে পড়তে সেখানে থাকা ছবির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন এবং তার হাত দিয়ে ছবিগুলো স্পর্শ করুন।

২। তাকে একটি খেলনা দিন এবং এটি সম্পর্কে কিছু বলুন। যেমন- দেখ বাবা/মা এই গাড়িটার রং লাল, এটির চারটি চাকা।

৩। আপনার শিশুকে একটি আয়না দিন এবং নিজেকে দেখতে দিন। তারপর জিজ্ঞাসা করুন, “সে কে?” সে যদি সাড়া না দেয়, তাহলে তার নাম বলুন।

৪। আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট প্রশ্ন করুন। যেমন “কুকুর কোথায়?” যদি সে উত্তর না দেয় তবে কোথায় তাকে দেখান।

এভাবে নিত্য নতুন কোন বিষয় নিয়ে বাচ্চাকে গাইড করুন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, বাচ্চাকে কখনো জ্বোর করবেন না। হাসিখুশি মেজাজে তার সাথে এগুলো করুন। কোন কারণে করতে না চাইলে আগে তার মন ভালো করে নিন তারপর করার চেষ্টা করুন।

৯ থেকে ১২ মাস বয়সের শিশুর কথা বলা

এ সময় আপনার শিশু সহজ সহজ শব্দ বুঝতে শুরু করবে। আপনি “না-না” বললে সে আপনার দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে “মা কোথায়?” সে মায়ের খোজ করবে এবং এদিক ওদিক তাকাবে। সে ইঙ্গিত করবে, শব্দ করবে এবং সে কী চায় তা আপনাকে “বলার” জন্য তার শরীরটি ব্যবহার করবে।

উদাহরণস্বরূপ, সে আপনার দিকে চেয়ে থাকতে পারে এবং তার হাতগুলো উপরে তুলে কোমরটা নাচাতে পারে। এর মানে সে উপরে উঠতে চায়, এটা আপনাকে বোঝাতে চাচ্ছে। ‘সে এখন খেলতে চায়’ এটা আপনাকে বোঝানোর জন্য আপনার হাতে একটা খেলনা দিতে পারে। আপনি যখন আপনার শিশুকে “কথা বলতে” সহায়তা করতে পারেন। আপনি কীভাবে অন্যকে বিদায় দেয়ার সময় “বাই বাই” বলেন তা তাকে দেখান।

তাকে বাস্তবিক কথার দিকে নিয়ে যান। কোন নীতি মূলক বা ইশপের গল্প তাকে শুনান, তার মনে প্রশ্ন তৈরী হবে। আর সেটা বলার চেষ্টা করবে, দেখবে বাচ্চার যত কথা বলে বেশিরভাগটাই প্রশ্ন। তাই কোন শিশু যদি কথা না বলে তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে এমন সব কথা বলা যেখানে প্রশ্ন করতে অনেক কৌতুহল জাগবে। ঠিক এই টেকনিকটি কাজে লাগিয়ে আপনি বাচ্চাকে সহজে কথা বলা শেখাতে পারেন।

এক থেকে দেড় বছরের সন্তানের কথা বলা

এ সময় বাচ্চারা শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করে। কোনো কিছু খুঁজতে তারা একই শব্দকে ধারাবাহিকভাবে বারবার বলতে থাকে। যেমনঃ বোতলের জন্য “বাবা” কিংবা জুস এর জন্য “জুজু”। এই বয়সে অনেক শিশুই একটি বা দুটি শব্দ করে থাকে। কিন্তু তারা ২৫ টিরও বেশি শব্দ বুঝতে পারে।

আপনি যদি তার কাছে কোনো খেলনা চান তবে সে আপনাকে একটি খেলনা দেবে। এমনকি কোনও শব্দ ছাড়াই, সে আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে, জিনিসটি নির্দেশ করে, জিনিসটির কাছে পৌঁছে গিয়ে বা জিনিসটি দেখিয়ে বা অস্ফুট শব্দে। আপনি আপনার বাচ্চাকে শব্দগুলি বলতে সহায়তা করতে পারেন এভাবে –

১। আপনি যে সমস্ত জিনিস দৈনন্দিন ব্যবহার করেন সেগুলোর নাম তাকে বলুন। যেমনঃ “কাপ”, “জুস”, “পুতুল” এর মতো শব্দগুলি ব্যবহার করুন। একঘেয়েমি বারংবার না বলে বাচ্চাকে বেশ কয়েকদিন সময় দিন সেগুলোর নাম বলতে।

২। বইগুলিতে থাকা ছবিগুলো সম্পর্কে আপনার বাচ্চাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। আপনার শিশুকে ছবির জিনিসগুলোর নামগুলো জানতে কয়েকদিন সময় দিন।

৩। আপনার শিশু যখন কোন জিনিস দেখে সেগুলোর বলতে পারে তখন হাসুন বা হাততালি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জিনিসটি সম্পর্কে তাকে আরো কিছু বলুন। যেমনঃ “তুমি কুকুর দেখছো। এটি অনেক বড়! তার লেজ নাড়ানোটা শুধু একবার দেখই না কতটা সুন্দর।”

৪। ‘আপনার শিশু কোন বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলতে চায়’ সে সম্পর্কে তার সাথে কথা বলুন। পুরো বিষয়টি একেবারে বলে তার জানার কৌতুহল নষ্ট করে দিবেন না। বরং একটু সময় নিয়ে অল্প অল্প করে তাকে জানান।

৫। আপনি প্রতিদিন যে কাজগুলি করেন সেগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন এভাবে- “তুমি আজকে কোন রঙয়ের শার্ট পড়েছ, জান?” তুমি আজকে লাল কালারের শার্ট পড়েছ। “তোমার কি দুধ বা জুস প্রয়োজন আছে?”

৬। আপনার বাচ্চা যা বলে তার উপর ভিত্তি করে আরো কিছু শেখান। যদি সে “বল” বলে, তাহলে আপনি বলতে পারেন, “এটি হলো তোমার বড়, লাল বল।”

৭। আপনার সন্তানের পছন্দসই পুতুল বা খেলনা প্রাণীর সাথে খেলার ভান করান। এটি আপনার কথোপকথন এবং আপনার খেলায় অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমনঃ “রোভারও খেলতে চায়। সে কি আমাদের সাথে বলটি গড়িয়ে নিতে পারবে? ”

কথা বলার সময় অবশ্যই কোমল ভাবে বাবা/মা সম্বোধন করে বলুন। তার কাছ থেকে প্রশ্ন করুন, মতামত দিন। সে যেন বুঝতে পারে যে তাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেখবেন এমনিতেই সে আগ্রহ নিয়ে কথা বলবে।

আর তার কোন প্রশ্নের মনগড়া বা উল্টাপাল্টা জবাব দিবেন না, যেটা সত্য সেটাই বলুন, যদি আপনার সন্তানকে সত্যবাদী বানাতে চান। কারণ সে যখন দেখবে তার বাবা মা মিথ্যা কথা বলে তখন সেও মিথ্যা বলতে চাইবে।

১৫ থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুর কথা বলা

আপনার শিশু আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য আরও জটিল অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করবে এবং তার শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে থাকবে। সে আপনার হাত ধরবে, আপনাকে বইয়ের শেলফের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তখন কোনও বইয়ের দিকে ইঙ্গিত করুন এবং “বুক” শব্দটি বলতে পারেন। এরপর বলুন “আমি তোমার সাথে একটি বই পড়তে চাই।” আপনি আপনার সন্তানকে আপনার সাথে কথা বলতে সহায়তা করতে পারেন এভাবে-

১। তাকে বলুন “আমাকে তোমার নাক দেখাও।” তারপরে আপনার নাকের দিকে ইশারা করুন। এতে করে সে শীঘ্রই তার নাকের দিকে ইঙ্গিত করবে। পায়ের আঙ্গুল, হাতের আঙুল, কান, চোখ, হাঁটু এবং আরও কিছু দিয়ে এটি করুন। দেখবেন, আপনার বাচ্চা খুব দ্রুত এগুলো চিনবে এবং বলতে শিখবে।

২। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেলনা লুকিয়ে রাখুন। এরপর তাকে খেলনাটি খুঁজে পেতে এবং তার আনন্দ ভাগ করে নেওয়াতে সহায়তা করুন।

৩। যখন সে আপনাকে কিছু নির্দেশ করে বা আপনাকে কিছু দেয়, তখন তার সাথে ঐ বস্তুর বিষয়ে কথা বলুন। “তুমি আমাকে বইটি দিয়েছ। ধন্যবাদ!

এভাবে বাচ্চাকে উৎসাহ ও পুরষ্কার দিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। তাকে গালাগাল বা ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। আপনি শুধু আপনার সন্তানকে কথা বলা শেখাচ্ছেন না বরং তাকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরী করছেন এটা ভেবে সে হিসেবে কাজ করুন। শিশুদের কথা শেখানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি।

১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়সের বাচ্চার কথা বলা

আপনার বাচ্চা দিকনির্দেশগুলি অনুসরণ করতে সক্ষম হবে এবং একসাথে শব্দ বলতে সক্ষম হবে। যেমনঃ ‘গাড়ি যায়’, ‘জুস চাই’ এর মতো শব্দগুলি একসাথে বলতে শুরু করবে। সে ভাষার বিকাশকে উত্সাহিত করে এমন ভান করা খেলাও খেলতে শুরু করবে। আপনি আপনার সন্তানের কথা বলার দক্ষতা জাগাতে পারেন এভাবে-

১। আপনার শিশুকে আপনাকে সহায়তা করতে বলুন। উদাহরণস্বরূপ, তাকে কাপটি টেবিলের উপরে রাখতে বা তার জুতো আপনার কাছে আনতে বলুন।

২। আপনার শিশুকে সাধারণ গান এবং নার্সারি ছড়া শিখিয়ে দিন। আপনার সন্তানের কাছে পড়ুন। সে কী দেখছে তা আপনাকে নির্দেশ করতে এবং বলতে বলুন।

৩। আপনার সন্তানকে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। সে তাদের একটি নতুন খেলনা সম্পর্কে বলতে পারেন।

৪। আপনার সন্তানকে খেলার ভান করা শেখান। এর জন্য আপনি একটি প্লে ফোনে কথা বলতে পারেন, পুতুলগুলিকে খাওয়াতে পারেন বা খেলনা পশুদের সাথে পার্টি করতে পারেন।

তবে এ বয়সে বাচ্চা কথা একেবারে বলতে না পারাটা কিছুটা চিন্তার। আপনি এসব চেষ্টা করেও যদি ফল না হয় তবে ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। শিশুর দেরিতে কথা বলা অবশ্যই একটি চিন্তার বিষয়, তাই হেয়ালি করবেন না।

২ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুর কথা শেখা

আপনার সন্তানের ভাষার দক্ষতাগুলো খুব দ্রুত ও সীমাবদ্ধ হয়ে বৃদ্ধি পাবে। সে আরও সহজ শব্দগুলির দ্বারা একসাথে সরল বাক্য তৈরি করবে। যেমনঃ “ম্যামি বাই বাই বাই”। সে সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। যেমনঃ “তোমার ভালুকটি কোথায়?”

৩৬ মাসের মধ্যে সে আরও জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। যেমনঃ “ক্ষুধার্ত হলে তুমি কী করবে?” এসময় সে আরও বেশি করে খেলার ভান করবে। যেমনঃ কাজ করতে যাওয়া, খেলনা গাড়ি ঠিক করা, তাঁর “পরিবারের” (পুতুল, প্রাণীর) যত্ন নেওয়ার মতো কাল্পনিক দৃশ্যের অভিনয় করবে।

আপনি আপনার বাচ্চাকে তার সমস্ত নতুন শব্দ একসাথে বলতে এবং তাকে এমন জিনিস শিখতে সাহায্য করতে পারেন যা জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণঃ

আপনার বাচ্চার নাম বা প্রথম এবং শেষ নাম বলতে শেখান। আপনার শিশুকে তার সামনে প্রদর্শিত জিনিসগুলির সংখ্যা, আকার এবং গঠন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। “হ্যাঁ” বা “না” উত্তর নেই এমন মুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। এটি তাদের নিজস্ব ধারণা তৈরি করতে এবং তাদের প্রকাশ করতে শিখতে সহায়তা করে। যদি এটি কীটপতঙ্গ হয় তবে আপনি বলতে পারেনঃ “কী মোটা, কৃপণ! তারা কয়জন আছে?

তারা কোথায় যাচ্ছে? অপেক্ষা করুন, দেখুন এবং উত্তরটি শুনুন। প্রয়োজনে আপনি একটি উত্তর প্রস্তাব করতে পারেনঃ “আমি পাঁচটি দেখতে পাচ্ছি। তারা কি পার্কে বা দোকানে যাচ্ছেন?” আপনার সন্তানকে এমন গল্প বলতে বলুন যা তার প্রিয় বইয়ের সাথে যায়। “এই তিনটি হাতির কী হল?” পড়াশোনার ফলে ভাষার বিকাশ হয়। আপনার স্থানীয় লাইব্রেরিতে গল্পের সময় তাকে নিয়ে যান।

আপনার ছোট বাচ্চা আপনার সাথে বইটি সমবয়সীদের পাশাপাশি উপভোগ করবে। প্রচুর খেলার ভান করা খেলুন। গল্পগুলি অভিনয় করা এবং ভূমিকা পালন করাই ভাষা ব্যবহার এবং শেখার জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি করে। আগে যা কাজ করেছে তা ভুলে যাবেন না।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার সন্তানের এখনও বিশ্রামের সময় প্রয়োজন। তবে মনে রাখবেন, এটি কেবল ন্যাপের (দুপুর বেলার স্বল্প ঘুম) জন্য নয়। টিভি এবং রেডিও বন্ধ করুন। আপনার সন্তানকে শান্তভাবে খেলতে, গান করতে এবং আপনার সাথে কথা বলতে উপভোগ করুন।

উপসংহার

শিশুর কথা বলার সমস্যা বেশিরভাগ সময় স্বাভাবিক কোন সাধারণ সমস্যার জন্য হয়। আপনি যদি বয়সভেদে উপরের বিষয়গুলো করার চেষ্টা করেন তাহলে আশা করি আপনার শিশু কথা বলবে।

তারপরেও কিছু বড় ও জন্মগত সমস্যা থাকে যেগুলো ডাক্তার ঠিক করতে পারে আবার কখনই ঠিক হয় না। বাচ্চাদের স্পিচ থেরাপি কিছু ট্রিটমেন্ট আছে যা বেশ কার্যকর। তবে আপনার সন্তান কথা যদি নাও বলতে পারে তবু চিন্তিত হবেন না, সঠিক শিক্ষা ও স্বাভাবিক বাচ্চার মত তাকেও সুযোগ করে দিন, দেখবেন সে পৃথিবী জয় করবে।

আশা করি, আপনাদের কাজে লাগবে বিষয়গুলো। আপনার শিশু স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন পাক এই কামনা করি। আমাদের সাথেই থাকবেন, আপনার বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করতে পারেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করব আপানকে উত্তর দেয়ার। ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে অন্য মায়ের বাচ্চা কথা বলার সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। ভালো থাকুন, পরিবার ও সন্তানকে সময় দিন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

স্পিচ থেরাপি কি?

স্পিচ থেরাপি হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা। যার সাহায্যে কথা বলতে না পারা অথবা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না এমন রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত তোতলামি, শিশুদের দেরিতে কথা বলা, কানে কম শোনাজনিত কথা বলার সমস্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, তাদের প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ করে দেয় স্পিচ থেরাপি।
দাঁত, জিহ্বা, তালু, ভোকালকর্ড ইত্যাদি অঙ্গের মিলনে আমরা কথা বলি। এর যে কোনোটির সামান্য সমস্যা হলে স্বাভাবিক কথা বলা সম্ভব হয় না। স্পিচ থেরাপিস্টরা তাই বাকপ্রতিবন্ধীদের কিছু কায়দা-কানুন শিখিয়ে দেন ও চর্চা করান। প্রয়োজনে তারা অপারেশনের সহায়তা নেন।


শিশুর দেরিতে কথা বলা সমস্যা বুঝব কিভাবে?

শিশু প্রথম বছর একটি শব্দ, দ্বিতীয় বছর দুটি শব্দ এবং তৃতীয় বছর পুরো বাক্য বলতে পারবে। এর ব্যতিক্রম হওয়া মানেই শিশু কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। শিশু বড় হলে সমস্যাটি ঠিক হয়ে যাবে এমন ভাবনা ঠিক নয়।


শিশুর দেরীতে কথা বলার কারণ কি?

শিশুর বংশগত কারণ, মস্তিষ্কের জন্মগত সমস্যা, প্রসবকালীন জটিলতা, জিহ্বার ত্রুটি, বাচ্চার মানসিক প্রতিবন্ধকতা, বাচ্চার সামনে ঝগড়া করলে বা অত্যধিক উচ্চস্বরে কথা বললে নার্ভাসনেসের কারণে তাদের কথা জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।


জিহ্বা আটকানো বা টাং টাই কি?

কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে জিহ্বা সামনের দিকে টাইয়ের মতো পাতলা মাংস দিয়ে মুখ গহ্বরের সঙ্গে লেগে থাকে। ফলে জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে না। এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় টাং টাই। টাই স্মার্টনেসের প্রতীক হলেও জিহ্বার টাই মোটেও সুখকর নয়। এ ধরনের সমস্যা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।


কিভাবে তোতলা ভালো হয়?

তোতলামি সমস্যা সব দেশেই সব বংশের বাচ্চাদের আছে। তবে এ ধরনের রোগীদের জন্য সরাসরি চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তোতলামির সঠিক কারণ না থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় অতিরিক্ত টেনশন, কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হওয়া, দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি কারণে অনেকে তোতলায়। অনেক সময় স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তায় ৫-৬ মাসে এ ধরনের বাচ্চারা প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠে। মুখে কথা আটকে যাওয়ার সমাধান হয়ে যায়।


উচ্চারণগত সমস্যা কেন হয়? সমাধান কি?

অনেক শিশু আছে যারা বাংলা বর্ণমালাগুলো শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারে না। যেমন ‘ত’ কে সর্বদা ‘প’ উচ্চারণ করা, ‘ল’ কে ‘ড’ উচ্চারণ করা ইত্যাদি। এসব শিশু স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তায় খুব দ্রুত স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে। অথবা বাবা-মা চেষ্টা করে এটি ঠিক করতে পারে। উপরে বলা বিষয়গুলো করার চেষ্টা করুন আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।


ঠোঁট বা তালু কাটাজনিত কথা বলার সমস্যা সমাধান কি?

আজকাল প্লাস্টিক সার্জারির কল্যাণে ঠোঁট কাটা বা তালু কাটা রোগীরা স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় অপারেশন পরবর্তী সময়ে কথা বলতে গেলে, কেননা ঠোঁট বা তালু কাটা থাকার কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে অভ্যস্ত থাকে না। স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তা নিলে বা বাবা মা নিয়ম মত জেনে সেভাবে চেষ্টা করলে এ ধরনের সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়।


বাচ্চার কম শোনাজনিত সমস্যার সমাধান কি?

বাচ্চার কম কথা বলার আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে কথা ঠিকমত না শোনার কারণে বা কানের সমস্যা থাকলে। হেয়ারিং এইডসের (কানে শোনার যন্ত্র) মাধ্যমে অনেক বাচ্চার শোনার ব্যবস্থা করা গেলেও বিড়ম্বনা দেখা দেয় কথা বলার ক্ষেত্রে। স্পিচ থেরাপিস্টরা সহজেই এ ধরনের সমস্যা দূর করতে পারেন। এছাড়াও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, ফ্যাঁসফ্যাঁসে কথা বলা, নাকি সুরে কথা বলা ইত্যাদি সমস্যা দূরীকরণে স্পিচ থেরাপিস্টদের জুড়ি নেই।

Note: Some information was adapted, with permission, from Learning Link: Helping Your Baby Learn to Talk, by C.E. Morrisset Huebner and P. Lines, 1994, Washington, DC: U.S. Department of Education, Office of Educational Research and Improvement.)