শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে: শিশুদের কণ্ঠ সাধারণত বেশ তীক্ষ্ণ হয়। তাই শিশুদের কান্না কারো কাছেই পছন্দের মত কোনো বিষয় নয়। এজন্য শিশু কাঁদলে প্রতিটি বাবা-মাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং বাচ্চার কান্না দ্রুত থামানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন।

একটা শিশু বিভিন্ন কারণে কান্না করতে পারে আবার কখনো তারা কারণ ছাড়াই কান্না করে। আবার নতুন বাবা মায়েদের পক্ষে কান্নার নির্দিষ্ট কারণ জানা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ তাদের শিশু লালন পালনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না।

কিন্তু বিশেষভাবে মায়েরা শিশুর কান্নায় খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মনে করেন শিশু হয়তোবা বুকের দুধ ঠিকমত পাচ্ছে না। তাদের বাড়তি খাবার প্রয়োজন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর একমাত্র ও প্রধান খাদ্য। একেবারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ সময়টাতে শিশুকে অন্য কিছু খাবার না দেওয়াই ভালো।

শিশুর কান্নার কারণ ও কান্না বন্ধ করার উপায়

শিশুরা কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় তাদের কেবল দুটি ভাষা; একটি হলো কান্না আরেকটি হাসি। কিন্তু শিশুরা সাধারণত এমনি এমনি কাঁদে না। কেননা, তারা কান্নার মাধ্যমে ক্ষুধা, বিরক্তি, অস্বস্তি, ভয় কিংবা যে কোনো প্রয়োজন প্রকাশ করে। জন্মের পর প্রথম ৩ মাস পর্যন্ত একটি শিশু কোনো কারণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ২৪ ঘন্টায় তিন থেকে চার বার কান্না করে। এছাড়া অনেক সময় তারা কান্নার মাধ্যমে আপনার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমিডি জানিয়েছে, শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কিছু কারণের কথা। দেখে নিন তো আপনার আদরের বাবুটি এসব কারণেই বেশি কাঁদে কিনা?

১। ক্ষুধা লেগেছে কিনা?

শিশুর কান্না করার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্ষুধা। কান্না করার আগেই শিশুকে খেতে দেওয়া উচিত। কেননা, অতিরিক্ত কান্না শিশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে শিশুরা কান্না করলেই আমরা ধরে নেই যে তাকে ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু এমনটা সব সময় হয় না। হয়তোবা, পিঁপড়ের কামড়ে বা কোথাও আঘাত প্রাপ্ত হলেও বাচ্চা কান্না করতে পারে। কিংবা অনেক সময় পেট ভালোভাবে না ভরলেও শিশু কান্না করতে পারে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন, শিশুর ক্ষিধা পেয়েছে?

ক্ষুধা পেলে,

  • শিশু অস্থির হয়ে ওঠে।
  • ঠোঁট কামড়াতে থাকে।
  • মুখে বার বার আঙ্গুল দেয়।
  • কাঁদতে শুরু করে।
  • গালে হাত লাগানো হলে তাদের মাথা হাতের দিকে ঘোরায়

এই কয়েকটি লক্ষণ দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন শিশুর ক্ষুধা লেগেছে। এছাড়া যদি আপনার কখনো এরকমটা মনে হয় যে শিশুর ক্ষিধা লেগেছে তাহলে বাবুর হাতটি গালের দিকে ঘুরিয়ে দিন। বাবু যত তার হাতটি মুখে দেয় তাহলে বুঝতে হবে বাবুর ক্ষিধা লেগেছে।

২। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডার কারণে

গরম কিংবা ঠাণ্ডা উভয়টাই শিশুদের অপছন্দ। তাই অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠাণ্ডার কারণে শিশুরা কেঁদে ওঠে। কিভাবে বুঝবেন শিশুর অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম লাগছে?

  • প্রতিবার খেলাধুলার পর আপনি যখন তার নোংরা পোশাকগুলো পরিবর্তনের জন্য দেহ থেকে খুলে ফেলেন তখন শিশুরা কেঁদে ওঠে।
  • ন্যাপি পরিবর্তন করার সময় যখন তার জামা খুলে ঠান্ডা ও ভেজা টিস্যু দিয়ে মোছেন, তখন সে ঠান্ডা অনুভবের কারণে কাঁদে।
  • প্রতিবার গোসলের সময় শিশুকে যখন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভেজান তখনও শিশু কেঁদে ওঠে।
  • পায়খানা করার পর শিশুকে যখন টিউবওয়েল কিংবা টেপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন তখনও শিশু কাঁদে।
  • নবজাতককে উষ্ণ রাখতে গিয়ে বাড়তি পোশাক পরিয়েছেন। এতে অতিরিক্ত গরম কিংবা অস্বস্তি বোধের কারণে শিশুরা কাঁদতে শুরু করে।

এ ছাড়াও নতুন পরিবেশে গেলে, ব্যথা পেলে বা ভয়ের কিছু দেখলে, হঠাৎ জোরে কোনো শব্দ শুনলে, নতুন মানুষ দেখলেও শিশুরা কান্না করতে পারে।

৩। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য

দীর্ঘসময় ধরে খেলাধুলার কারণে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে যায়। আর তখনই তাদের প্রয়োজন হয় ঘুমের। সাধারণত আমরা বড়রাই একটু ক্লান্ত হলে বা সারাদিনের পরিশ্রমের পর একটা ফ্রেশ ঘুম না দিলে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তাই বিছানায় গা দিতেই চলে যাই গভীর ঘুমের ঘোরে। কিন্তু শিশুরা তো আর এ কাজটি একা একাই করতে পারে না। তাই তারা কান্না শুরু করে দেয়। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা ঘুমের জন্য কান্না করছে?

ঘুম পেলে,

  • বাচ্চাদের চোখে পানি আসতে থাকে।
  • বাচ্চারা অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে।
  • নাক ও মুখ চুলকাতে থাকলে।
  • ঘাড়ের মধ্যে মাথা রেখে শান্ত থাকলে।
  • অস্থিরতাবোধ করলে।
  • প্রতিনিয়ত নিয়মমাফিক ঘুমের টাইম থাকলে

এছাড়াও আপনি তার কান্নার ধরণ (বিরক্তিকর কান্না/বিরক্তিকর নয় এমন কান্না) দেখেও বুঝতে পারেন সে ঘুমের জন্য কাঁদছে নাকি অন্য কিছুর জন্য। অথবা এটাও ভেবে দেখতে পারেন সে পূর্বে কখন ঘুমিয়েছিল, এখন আবার ঘুমাবে কিনা। যদি এমনটা মনে হয় তাহলে তার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ঘুম পারিয়ে দিন কিংবা তাকে কোলে নিয়েও ঘুম পাড়াতে পারেন।

৪। ভেজা ডায়াপার বা ডায়াপার নোংরা হলে

বেশ কিছু শিশু অনেকক্ষণ ধরে নোংরা ডায়াপার সহ্য করতে পারে যদিও এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু শিশু ডায়াপার নোংরা হলেই অস্বস্তিবোধ করে ও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। অনেকসময় মায়েদের অবহেলার কারণেও শিশুরা নোংরা ডায়াপর পরে দীর্ঘক্ষণ থাকে। কিন্তু এটা একেবারেই উচিত নয়। শিশুর ডায়পার নোংরা হলে সেটা সাথে সাথেই পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত।

নচেৎ নোংরা ডায়াপারের কারণে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে। ভেজা ডায়াপারের কারণেই যে বাচ্চা কাঁদে তা কিন্তু না। বাচ্চার নরম ত্বকে কোনো জ্বালা যন্ত্রণা হওয়ার কারণেই কাঁদে। তাই ডায়াপার বদলানো নিয়ে অবহেলা করলে চলবে না। শিশুর মঙ্গল চাইলে নোংরা হলে তৎক্ষণাৎ তা পাল্টাতে হবে। আর মনে রাখবেন শিশুর ত্বকের জন্য র‍্যাশ ভালো কিছু নয়। তাই শিশুর জন্য বেছে নিতে হবে অধিক শোষণক্ষমতার কটন ডায়পার, যা নবজাতককে দিবে আরাম আর রাখবে র‍্যাশ মুক্ত।

৫। মা-বাবার সান্নিধ্য বা আদর চাওয়া

অনেক সময় শিশুরা মা-বাবার সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য কিংবা একটু আদরের জন্য কান্নাকাটি করে।

সন্তানের প্রথম বন্ধু হলো মা-বাবা। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই সন্তান মা-বাবাকে চিনতে পারে। তাদের শরীরের আলাদা গন্ধ, কণ্ঠ, হৃদস্পদন ইত্যাদি বুঝতে পারে। মা-বাবা যদি বাবুর সাথে কথা বলে, খেলে তাহলে সে আনন্দ পায়। তাই তারা আশেপাশে থাকলেই কোলে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে ও কেঁদে দেয়। আসলে শিশুরা মা-বাবার সাথে সময় কাটাতে চায়, তাদের সাথে খেলতে চায়, তাদের কথা শুনতে চায়।

একবার ভাবুনতো, তার খাওয়া ঠিক আছে, ঘুম ঠিক আছে, ডায়পারে সমস্যা নেই, সে কোনো আঘাত প্রাপ্ত নয়। এসব কিছু ঠিক থাকা স্বত্বেও সে কাঁদছে কেন? কি, একটুখানি আদরের জন্য নয়তো?

হ্যা, ঠিক তাই। এরকমটা ঘটলে শিশুকে আস্তে করে আদরের ভাষা বলতে বলতে কোলে তুলে নিন, তাকে চুমু খান, কথা বলুন। কোলে তুলে নেওয়ার পর হালকা করে দোল দিন। দেখবেন, আর কান্নাকাটি করছে না।

তো কি বুঝলেন, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যের জন্যুও শিশুরা কাঁদে।

৬। পেটের সমস্যা হলে

পেটের পীড়া শিশু কান্নার আরেকটি কারণ। পেট ব্যথা কিংবা পেটে কোনো সমস্যা হলে শিশুরা অনবরত কেঁদে উঠে। অনেক সময় খাওয়ার পরে শিশুদের পেটে গ্যাস হলে ব্যথার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই শিশুরা কান্না শুরু করে দেয়। মেডিক্যাল সাইন্সে এই সমস্যাটাকে বলে ইনফ্যান্টাইল কলিগ।

জন্মের পর সাধারণত প্রথম তিন মাস পর্যন্ত শিশুরা এ রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। আবার হজমের সমস্যাও শিশুর পেট ব্যথার জন্য দায়ী। এটা সাধারণত একেবারেই নবজাতক শিশুদের হয়ে থাকে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা পেটের সমস্যায় ভুগছে?

পেটে সমস্যা হলে শিশুরা,

  • বেশি নড়াচড়া করে।
  • বিশেষ করে হাত ও পা ভাঁজ করে ফেলে।
  • খাওয়ার পর পেটে গ্যাস হলে।
  • অস্থির হয়ে ওঠে।

এছাড়া মাসল বা হাড়ের কোনো ব্যথাও কারণও এমন কান্নার জন্য দায়ী। পেটের গোলমাল হয়ে থাকলে তাকে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়াতে পারেন। তবে আগে এটা শিওর হতে হবে যে, আপনার বাবুটা পেটের সমস্যার জন্যই কাঁদছে কিনা।

৭। দাঁতে অথবা কানে ব্যথা

অনেক সময় শিশুরা কোনো কারণ ছাড়াই বেশি বেশি কাঁদে। এটা সাধারণত ৬-৮ মাস বয়সী শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যদি আপনি এরকম কান্নার সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারেন তাহলে কয়েকটা কাজ করবেন।

  • আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে বাচ্চার দাঁতের মাড়ি দেখে নিন। মাড়িতে শক্ত কিছু উঠলে বুঝবেন শিশুর দাঁত উঠেছে। দাঁত ওঠার কারণে ব্যথা ও অস্বস্তিবোধ হলে শিশু কেঁদে ওঠে।
  • অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানেও ব্যথা হয়। যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদতে থাকে।

এরকমটা ঘটলে ডাক্তারি পরামর্শ নিন। শিশুকে যত্নে রাখুন।

৮। অপরিচিত পরিবেশ

শিশুরা সাধারণত পরিচিত পরিবেশ ও পরিচিত মানুষদের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। তাই হঠাৎ করে যখন তাদের অপরিচিত কোনো পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা কান্না শুরু করে দেয়। কারণ হৈ চৈ পূর্ণ নতুন পরিবেশে তারা অস্বস্তিবোধ করে এবং হঠাৎ বিকট কোনো শব্দ শুনে শিশুরা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে।

৯। অসুস্থ হলে

কিছু কিছু সময় শিশুরা দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকে। তারা বিছানায় শুয়ে থাকতে চায় না, কোলে উঠতে চায়, খেতে চায় না, বিরক্তিবোধ করে।

এরকমটা ঘটলে মনে রাখবেন, শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আর এ সময় তার শরীরে জ্বর থাকতে পারে।

তাই তার শরীরে ও কপালে হাত দিয়ে দেখতে পারেন শরীর গরম আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

১০। পছন্দের কোনো জিনিস এ উঠতে চাইলে

অনেক সময় শিশুরা কোনো জিনিস এর প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়। যেমনঃ মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি কিংবা সাইকেলে উঠতে তারা পছন্দ করে। পছন্দের জিনিসটি তাদের সন্নিকটে থাকলেই তারা সেটা দেখে কাঁদতে শুরু করে। সেটাতে উঠতে চায়।

খেয়াল রাখবেন, শিশুরা প্রয়োজনের কথা মুখে বলতে পারে না। তারা অঙ্গবভঙ্গি কিংবা আচার আচরণের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। আর খুব বেশি সমস্যা মনে হলে তারা কান্না শুরু করে দেয়। শিশু কান্নাকাটি করবেই এটা নিতান্তই সত্য একটি বাক্য। আর তারা কান্নাকাটি করলে ভয় পাবেন না, বিরক্ত হবেন না। শিশুর প্রতি অধিক যত্নশীল হোন। ওদের বুঝতে চেষ্টা করুন এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে অপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১১। সিনথেটিক কাপড়

এ ছাড়া অনেক সময় সিনথেটিক কাপড় পরালে শিশুদের গায়ে অস্বস্তিবোধ হয়। এ ধরনের কাপড় পরালে গায়ে ঘর্ষণের ফলে শরীর কেটে যায় এবং কাঁটা অংশগুলো চিন চিন করে ও ব্যথা অনুভুত হয়। এতেও নবজাতক শিশুরা কেঁদে ওঠে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী?

যদি আপনার আদরের বাবুটি এক নাগাড়ে কান্না করতেই থাকে এবং তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে কয়েকটি জিনিস লক্ষ করতে হবে।

  • প্রথমে তার শরীরে ভালোভাবে লক্ষ করুন কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা।
  • এরপর হাত পা নড়ানড়া করে দেখুন। যদি শিশুটি আরো জোরে কান্না করে তবে বুঝতে হবে তার শরীরে ব্যথা হচ্ছে।
  • তার শরীর ও মাথায় হাত দিয়ে দেখুন স্বাভাবিকের তুলনায় খুব বেশি গরম অনুভুত হচ্ছে কিনা।
  • বাচ্চার পেটে হালকা চাপ দিয়ে দেখুন সে পেটের ব্যথায় আরো জোরে কাঁদছে কিনা।
  • কোনো কীটপতঙ্গ তাকে কামড় দিয়েছে কিনা নিশ্চিত হোন। অনেক সময় বিছানায় খাবারের টুকরা পড়লে পিঁপড়া কিংবা কোনো পোকামাকড় খাবার খেতে এসে বাচ্চাকে কামড় দিতে পারে।

এসব বাদেও যদি শিশু খুব অস্বাভাবিকভাবে কান্না করতেই থাকে তবে খুব দ্রুত চেষ্টা করুন নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

জন্মের পর শিশুর কাঁদে কেন?

প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে নিরিবিলিতে বেড়ে উঠতে থাকে৷ যেখানে কেউ তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা বা তাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করে না৷ সেই শান্তাবস্থাই তার পছন্দের পরিবেশ হয়ে ওঠে৷ কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হঠাৎই এক মুহূর্তে তার সবকিছু বদলে যায়, যা ওই টুকু একটা শিশুর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া কঠিনতম একটি বিষয়৷ তখন সে কাঁদতে শুরু করে।

জন্মের পর তার কান্নার ফলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা, পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়৷


জন্মের পর শিশু না কাঁদলে করণীয় কি?

জন্মের পর শিশু না কাঁদলে মনে করা হয় তার শরীরে অক্সিজেন ছড়িয়ে পড়তে কোনও সমস্যা হচ্ছে। তাই, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর না কাঁদলে, তার পিঠে মেরে তাঁকে কাঁদানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে প্রাথমিক কিছু সমস্যা থাকলে তা ঠিক হয়ে যায়৷


কেন শিশুরা অতিরিক্ত কাঁদে?

কান্না হলো কষ্ট বা হতাশা কমানোর কার্যকরী একটি মাধ্যম। যাদের বোঝার ক্ষমতা ভালো, সহজে মানিয়ে নেয় তারা কাঁদে কম। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠিক এই সমস্যাটাই থাকে, আবার অনেক বাচ্চা কান্নাকে চাহিদা পূরণের মাধ্যম মনে করে।

যেমন- আপনার বাচ্চা প্রসাব করছে বিছানায়, যেটা তার জন্য বিরক্তিকর। আপনি কাজে ব্যস্ত থাকায় সে দেরী সহ্য করতে না পেরে কাঁদে যাতে তা কান্নার শব্দে আপনি তা বুঝতে পারেন। আসলে শিশুরা এটা বোঝে তখনি যখন দেখে যে কান্না করলে তার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তখন সে এটাকে মাধ্যম হিসেবে নিয়ে নেয়।


বাচ্চা রাতে কাঁদে কেন?

বাচ্চা যে রুমে থেকে অভ্যস্থ সেই রুমের পরিবেশ বা তাপমাত্রা পরিবর্তন শিশুর কাছে অসস্তিকর লাগে। আবার রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শিশু একা অনুভব করে, আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেলে সে ভয় পেয়ে যায়, তখন কান্না করে সান্নিধ্য চায়।

এছাড়া পেটের সমস্যা, বা কোন অসুখ থাকলে তা যেহেতু রাতে বেশি বাড়ে তাই রাতে শিশুরা কাঁদতে পারে। তবে মা হিসেবে আপনি একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আসল কারণ।

আশা করি, আমাদের এই পদ্ধতি ও কারণগুলো আপনার মনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ভালো থাকুক আপনার সোনামণি। ভালো থাকুক, আপনার পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *