শিশুর খাবারে অরুচি – কিভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি উৎসাহী করে তুলবেন

শিশুর খাবারে অরুচি

শিশুর খাবারে অরুচি – কিভাবে শিশুকে খাবারের প্রতি উৎসাহী করে তুলবেন: দিন দিন শিশুর ক্রমশ স্বাস্থ্যহানি দেখে আপনি টেনশন এ পড়ে গেছেন। ভাবছেন, আপনার আদরের বেবিটা আগের মত আর খাচ্ছে না, রোগাটে হয়ে যাচ্ছে। মুখের সামনে খাবার ধরলে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। আবার মাঝে মাঝে এটাও বলে “এই খাবার আমার পছন্দ না। আমি এটা খাব না।”

আবার অনেক অভিভাবককেই দেখা যায়, খাবারের থালা নিয়ে বাচ্চার পিছনে রীতিমতো দৌড়াতে। অভিযোগ একটাই, তাদের বাচ্চা খেতে চায় না।

এসব দেখে মহা টেনশনে পড়ে গেলেন। এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের শালদুধ হবে নবজাতকের প্রথম খাবার। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শালদুধ (গাঢ় এবং হলদেটে) দিতে পারলে শিশু মৃত্যুর হার ৩৭ শতাংশ কমে যায়।

যাই হোক, কেন শিশু খেতে চায় না, কী করলে সে ঠিকমত খাবে, কিভাবে বাচ্চাকে খাওয়ানো দরকার – এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। নিচের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আপনার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

শিশু কেন খেতে চায় না ?

মূলত শিশুদের না খাওয়ার অন্যতম কারণ হলো অনিয়ম। আর এর জন্য বেশিরভাগ ডাক্তাররাই বাবা মায়েদের অসচেতনতাকে দায়ী করেন। আসলে তারা এটা করেন না জেনে। আবার অনেকক্ষেত্রে শিশুর আবদার মেটাতে গিয়েও কিছু বিপত্তি দেখা দেয়।

বাইরের লোভনীয় ও মুখরোচক খাবারগুলোতে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুললে ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি তাদের চাহিদা কমে যায়, খাদ্যাভাস নষ্ট হয়। অনেক অভিভাবক আবার ভাত খেতে না খেতেই শিশুকে বিস্কুট, চকলেট, রুটি ইত্যাদি খাওয়ান। আবার অনেকে দীর্ঘসময় ধরে খাওয়ান – এটা লক্ষ করেন না যে শিশুর পেটে খিদে আছে না নেই।

শিশু কাঁদলেও অনেকে মনে করেন শিশুর খিদে পেয়েছে। অথচ শিশু অন্য কারণেও কাঁদতে পারে। বাচ্চা একবেলা ঠিকমতো খায়নি বলে অনেকে ব্যাকুল হয়ে যান। আবার দেখা যায়, সকাল ৭ টায় পেট পুরে খাওয়াতে পারেননি বলে সকাল ৮ টায় পুনরায় খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দেন।

আপনার এসব কর্মকাণ্ডই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, পূর্বের খাবার হজম হলেই শিশুর খিদে পায়। আর খিদে পেলে শিশু খাবেই। যদি সুনির্দিষ্ট সময় ছাড়া শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করা হয়, তাহলে কিছু কিছু ক্ষতির শিকার হবে ওই শিশু।

শিশুকে খাবারে উৎসাহী করতে যা করবেন

বাচ্চাদের খাওয়ানোর উপায় কি? খাবারের প্রতি শিশুর পূর্ণরুচি ফিরিয়ে আনতে আমরা আছি আপনার পাশে। শিশু না খাওয়ার পেছনে দায়ী যথাযথ কারণ ও সমাধান তুলে ধরলাম। চেষ্টা করুন এগুলো মেনে চলতে। দেখবেন, আপনার প্যারেন্টিং হবে সেরা প্যারেন্টিং।

১। পূর্ণভাবে খিদে

অনেক শিশুই পরিপূর্ণভাবে খিধা না লাগলে খেতে চায় না। অথবা খেতে বসলেও পরিপূর্ণভাবে খিদা না লাগার কারণে প্লেটের ভাত শেষ করে না।

২। খাওয়া শেষ না হতেই খাওয়া

আমরা সাধারণত শিশুদের বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। হ্যা, এটা খুব ভালো। এতে শিশুর রুচি পরিবর্তন হয় এবং বহুমুখী খাদ্যের চাহিদা বাড়ে। কিন্তু মাঝখানে একটা ছোট্ট ভুল আমরা করে বসি। দেখা যায়, বিস্কিট খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম, কলা, কাঁঠাল কিংবা চকলেট এর খাবারগুলো তাকে খেতে দেই। এতে শিশুর ভাতের প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবারের প্রতিও অনীহা দেখা দেয়। ফলে শিশুর না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

৩। অসুস্থতা

অসুস্থতার কারণেও শিশুদের খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা, জ্বর কিংবা পেট খারাপ থাকলে শিশুরা নিজেকে খাবার থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখতে পারে। তবে এটা বেশ কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া শিশুর জিহ্বায় ঘায়ের আবির্ভাব ঘটলেও শিশুরা খাবার গ্রহণে অনীহা দেখায়। যদি শিশুর পেটে কিংবা অন্ত্রে কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

৪। খাবারে এলার্জি

খাবারে এলার্জি – শিশু না খাওয়ার আরেকটি কারণ। খাদ্যে এলার্জির কারণে অনেক শিশুই স্বাভাবিক খাবার খেতে চায় না। ৪ থেকে ৮ শতাংশ শিশু খাবারে এলার্জির কারণে অনেক খাবার যেমনঃ ফল, শাক, ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি খায় না। তাই খেয়াল রাখুন, খাবারে বাচ্চার এলার্জি হচ্ছে কিনা।

৫। খাবারের স্বাদ

শিশুরা খাবারের স্বাদ ঠিকমত গ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে, বার বার একই ধরনের খাবার গ্রহণের ফলে শিশুরা কিছুটা বিরক্ত বোধ করে। তাই চেষ্টা করুন শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করতে। প্রতিদিন তাকে জোর করে নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে খাবারের প্রতি অনীহা আরো বেড়ে যায়। এজন্য একই খাবারকে নতুনভাবে রান্না করুন।

৬। অযথা জোর করবেন না

খাওয়ানোর জন্য শিশুদেরকে অযথা জোর করবেন না। শিশুরা সাধারণত আনন্দের সহিত খেতে পছন্দ করে। কিন্তু যখন তাকে একবার জোর করে খাওয়ানো হয় তখন সে প্রচণ্ড ভয় পায়। আর এতে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমতে থাকে। এমনকি এক সময় খাবারের প্রতি তার বিতৃষ্ণাও দেখা দিতে পারে।

৭। সময়সূচী অনুযায়ী খেতে দিন

বয়সের পার্থক্য অনুযায়ী শিশুদের ক্ষুধা লাগার কিছুটা ভিন্নতা আছে। নিয়ম বা সময়সূচী অনুযায়ী শিশুদের খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললে খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। শিশুকে কী খাওয়াচ্ছেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খাচ্ছে না কিংবা খেতে চাইছে না – এমন অযুহাত দেখিয়ে তাকে বার বার খাবার দিবেন না। যদি শিশু একেবারেই খেতে না চায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন, যখন-তখন খাবার দিলে বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ কাজটি থেকে বিরত থাকুন এবং বাচ্চাকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

৮। খাবারের বিরতি

বয়সভেদে শিশুদের খাবারের মাঝে কিছুটা বিরতিও প্রয়োজন। কেননা, খিদে না লেগেই বাচ্চাকে খাবার দিলে সে খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দিতে পারে।

গবেষণায় এটা দেখা গেছে, ২ থেকে ৩ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। আর এই সময়টাতে যদি শিশুকে অন্য কোনো খাবার দেওয়া না হয় তবে তার পরিপূর্ণভাবে ক্ষিধা লাগবে। অর্থাৎ শিশু স্বাচ্ছন্দ্যে খাবার গ্রহণ করবে।

আবার, ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী একজন শিশুর প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় বিরতি দেওয়া উচিত। প্রতিবেলা খাবারের ফাঁকে এই বিরতির সময়টা শিশু বয়স থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত একটু করে বৃদ্ধি পাবে। এক সময় বড়দের মতো তিন বেলা খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৯। খাবার সময় কার্টুন বা টিভি দেখা নয়

অনেক সময় শিশুরা খেতে না চাইলে তাদেরকে খাওয়ানোর জন্য আমরা বেশ কিছু ভুল পন্থা অবলম্বন করি। আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো টিভিতে তাদের পছন্দসই কার্টুন দেখা।

হ্যা, টিভিতে কার্টুন দেখাতে দেখাতে শিশুদের খাওয়ানো হলে এক সময় তারা সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং টিভি না দেখলে খাওয়া মুখেই নিবে না। এছাড়া টিভির প্রতি মনোযোগ থাকার কারণে তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। এমনিতেই বেশি সময় ধরে টিভি দেখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এমনকি টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, টিভির দিকে মনোযোগ থাকার জন্যে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না।

১০। খাবারে ভিন্নতা আনুন

আপনি, আমি, আমরা কেহই প্রতিদিন একই ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করি না। সবাই একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করি। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। তাই প্রতিদিন তাকে একই রকমের খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র আনুন। যদি শিশু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে তবে সে যা খেতে চায় সে অনুযায়ী খাবার বানিয়ে দিন। পছন্দের খাবারটি তাকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে পরিবেশন করুন। তবে তাকে বাইরের খাবারের অপকারিতা সম্পর্কে অবগত করুন।

১১। বাইরের খাবার

বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না এমনটা নয়। কেননা, বড়দের সঙ্গে বিয়ে কিংবা বার্থডে পার্টিতে গেলে, পরিবারের সাথে ঘুরতে গেলে নিশ্চয়ই তাকে বাইরের খাবার খেতে হবে। তা ঠিক আছে। কিন্তু প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে রুটিন করে তার জন্য চকলেট, কেক, পটেটো কিংবা মুখরোচক খাবারগুলো আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না। মুখরোচক এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

১২। যখন তখন খাবার

রুটিন অনুযায়ী শিশুদের খাবার খাওয়াই ভালো। কিন্তু শিশুরা যখন তখন খাবার খেলে যথাসময়ে আর তাদের খিদে লাগবে না। আর সে খেতেও পারবে না।

দেখা যায়, অনেক শিশু বিদ্যালয় থেকে ফিরেই বিস্কিট-চানাচুর কিংবা ফলমূলের রস খেয়ে থাকে। আর তার এক ঘণ্টা পরেই হয়তো দুপুরের খাবার গ্রহণের সময় হয়ে যায়। এ সময় সে ঠিকমত খেতে চাইবে না, কেননা ইতোমধ্যেই তার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে।

আবার অনেক শিশুকে দেখা যায় সারাদিনে যখন তখন বিস্কুট, কলা, রুটি, লজেন্স কিংবা আইসক্রিম এর মত খাবারগুলো পেট ভর্তি করে খেতে। যার ফলে মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খেতে চায় না।

১৩। অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো

ছোট বাচ্চাদের পেটও ছোট থাকে। এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আমরা সবাই জানি, শিশুদের ৬ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধই তাদের জন্য উত্তম এবং পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু ছয় মাস হওয়ার পরেও শক্ত খাবার না দিয়ে শিশুকে আগের মতই বুকের দুধ খাওয়ালে অন্য খাবারের প্রতি তার অনীহা হতে পারে। কেননা, ছোট পেটে দুধ খাওয়ার পরে অন্য খাবার গ্রহণের পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। তাই ৬ মাস পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দিয়ে শক্ত খাবার খাওয়ার জন্য জায়গা করে দিতে হবে।

১৪। খাবারের ধরণ বা গন্ধে

খাবারে গন্ধ বা খাবার পরিবেশনের ধরনে অনেক শিশুরই সমস্যা থাকে। যেমনঃ অনেক শিশু আছে যারা অতিরিক্ত নরম খাবার পছন্দ করে না। এছাড়া গন্ধের জন্য তারা শাকসবজি ও ফলমূল খেতেও ‘না’ সূচক শব্দ ব্যবহার করে। একে texture sensitivity বলে।

১৫। মাছ, মাংস ও ডিম খায় না

অনেক শিশুই আছে যারা মাছ, মাংস ও ডিম খেতে পছন্দ করে না। শিশুরা এসব গ্রহণ না করলে একেবারেই টেনশন নিবেন না। শুধু আপনাকে খাবার পরিবেশন এর ধরনটা পাল্টাতে হবে। মাছ খেতে না চাইলে তাকে ফিশকাটলেট বানিয়ে দিন। চিংড়ির সাথে নুডুলস রান্না করুন। মাংস খেতে না চাইলে তাকে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব বানিয়ে দিন। ডিম খেতে না চাইলে সুজির সাথে বা খিচুড়ির সাথে ডিম রান্না করুন। ডিমের স্যুপ বা চপও দিতে পারেন।

খাবার গ্রহণে শিশুর আগ্রহ বাড়ানোর উপায়

শাকসবজি, রুটি, মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস ও ফলমূল সব কিছুই শিশুকে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। আর তাই জানা প্রয়োজন নানা ধরনের রন্ধন পদ্ধতি। একই রকমের খাবার বার বার খেতে না দিয়ে ঐ খাবারকে ভিন্নভাবে প্রস্তুত করুন এবং বাচ্চার সামনে পরিবেশন করুন। দেখবেন, বাচ্চা ঠিকই তা গ্রহণ করবে।

বাচ্চা যখন প্রথম খাওয়া শুরু করে তখন থেকেই বিচি ছাড়া পটল, আলু, ঝিঙা, গাজর, জালি, পেঁপে ইত্যাদির মত সবজিগুলো দেওয়া যেতে পারে। এরপর এক বছর বয়সে তাকে শাক খেতে দিন। তবে এটা দেখুন হজম হয় কিনা। শাক ঠিকমত হজম হলে তাকে অন্যান্য শাক খেতে দিন। ফলের মধ্যে প্রথমে চটকানো কলা, লেবু বা মাল্টার রস, আপেল, আনারের রস খেতে দিন। ধীরে ধীরে দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি ও শক্ত দাঁতের ওপর নির্ভর করে অন্যান্য ফলমূল দেওয়া যেতে পারে।

সেরিলাক (পটের দুধ) শিশুদের খিদে নষ্ট করে দেয়। এর বদলে শিশুকে সুজি, রুটি, ওটস, সাগু ইত্যাদি খাওয়ান। শিশুকে প্রথম থেকেই মাছ-শাকসবজি ইত্যাদি খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাহলে পরবর্তীতে এসব খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে না।

অনেক শিশু ডিম খেতে চায় না। এক্ষেত্রে তাকে খাওয়ানো যেতে পারে ডিমের স্যুপ বা পুডিং এবং রান্না করা ডিম। এছাড়াও পুডিং, ছানা, দই, মিষ্টি, সেমাই পারেন দুধের বদলে। শিশুর বর্ধনে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বেশি থাকা দরকার।

শিশুর খাদ্যতালিকায় শাকসবজি কম থাকলেও প্রবলেম নেই। তবে দিনে অল্প হলেও রাখতে হবে। মাঝে মাঝে শাক ভাজি বা খিচুড়ির ভিতরে দিয়ে রান্না করে খাওয়ান।

সরাসরি মাংস খেতে না চাইলে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব করে খাওয়ান। নুডলসের সাথে ডিম, মাংস, চিংড়ি, সবজি ইত্যাদি দিয়ে আরো মজাদার করে তুলুন। সরাসরি মাছ খেতে না চাইলে তাদের মাছের বড়া করে দিন।

টেস্টিং সল্ট শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই শিশুর খাবারে টেস্টিং সল্ট দেওয়া একেবারেই নিষেধ। শিশু যেন আলগা লবণ না খায়। এতে শিশুর স্বাদ নষ্ট হয়। শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে চা দেওয়া যাবে না। তবে গরম স্যুপ দেওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব


শিশুর খাবারে অরুচি কেন হয়?

বাচ্চাদের খাবারে অরুচি খুব কমন একটা বিষয়। কোন অসুখ, মন খারাপ বা কৃমি জনিত সমস্যার জন্য বাচ্চার খাবারে অরুচি হতে পারে। এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ এটা খুব সাময়িক। যতটা পারেন বাচ্চাকে কম চাপ দিন, পড়াশোনা নিয়ে বেশি চাপ দিবেন না, ভয় দেখাবেন না। ভয় ও মানসিক চাপ অরুচির প্রধান কারণ। তাই বাচ্চার সাথে বন্ধুর সাথে মিশুন, তাদের উৎসাহ দিন, ভালোবাসা দিন, খেলতে দিন। বাচ্চারা খেলা করলে এমনিতেই খাবারে অরুচি চলে যাবে। তবে খাবার একটু মজাদার এবং ভিন্ন রেসিপিতে পরিবেশন করুন। তার পছন্দের খাবার দিন।

আমার মতে নিজে থেকে স্বাভাবিক ভাবে ঠিক হয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাই করা উচিত। একটুতেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর অভ্যাস বাদ দিন। বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করুন, বাচ্চাকে দূর্বল বানাবেন না। সামান্যতেই ভয় না পেয়ে একটু সময় নিয়ে দেখুন ঠিক হয় কিনা, কারণ শরীরের বেশির ভাগ সমস্যা শরীর ওষুধ ছাড়াই এমনিতে ঠিক করে। তাই খুব বড় কোন সমস্যা না হলে ডাকারের কাছে যাবেন না, এমনিতেই শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের থেকে বেশি।


শিশুর খাবারে অনিহা কেন হয়?

আমার একটি বাস্তবিক অভিজ্ঞতা আপনাদের বলি, হয়তো আপনিও খেয়াল করে দেখেছেন বিষয়টা- অসহায় গরীব বাচ্চারা যা দেন তাই খায়, খাব না কথাটা তারা বলে না! কিন্তু যে বাচ্চার পিছনে বাবা-মা লেগে থাকে, বাবা এটা খাও, ওটা খাও। অথচ শিশু খেতে চায় না। এর কারণ কি ভেবে দেখেছেন? উত্তর- সহজলভ্যতা। মানুষের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল যেটা সে সহজে পায় সেটার মূল্য দেয় না।

বাচ্চাদের সব সময় খাবারের কথা বলবেন না, কথায় আছে না, খিদে লাগলে বাঘে ধান খায়। এজন্য তার খিদে লাগার সময় দিন। এজন্য তাকে একটু খেলার সময় দিন, লাফালাফি, দৌড়াদৌড়ি করলে খিদের জ্বালায় আপনাকে সময় দিবে না। অনেকে বাচ্চাদের দোকানের খাবার যেমন- চিপ্স, চকলেট ইত্যাদি খিদে নষ্ট করা খাবার বেশি দেয়, ফলে বাচ্চার ক্ষুধামন্দা হয়।

শিশুদের এক খাবার সব সময় দিবেন না, খাবারে একটু বৈচিত্র আনুন। একই খাবার ভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করুন। যে খাবার সে খেতে চায় না তা একটু ভিন্ন রেসিপিতে পরিবেশন করুন। বাচ্চারা মজাদার খাবার পছন্দ করে বেশি, এজন্য খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনুন।

খাবারের প্রয়োজনীয়তা বা মূল্য না বুঝলে সেটার আনন্দ থাকে না। অসহায় গরীব বাচ্চাদের শুধু ভাত দেন দেখবেন খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে। কিন্তু যত বাহানা আপনার বাচ্চা করে। এর কারণ আপনি নিজেই। আপনি তাকে বেশি মূল্য দিয়ে ফেলেছেন। আমার মা ছোটবেলায় আমাকে সব খাবার খাওয়া শিখিয়েছেন।

আমি যদি কোন খাবার খেতে পছন্দ না করি সেটা টানা তিন দিন চলত, অর্থাৎ আমি নিরামিষ খেতে চাইতাম না, তাই আমার মা অন্য তরকারি বাদে শুধু নিরামিষ রান্না করে রাখতেন। তখন আর কোন উপায় না পেয়ে খিদের জ্বালায় নিরামিষ দিয়ে ভাত খেতাম। এভাবে আমি সব খাবার খাওয়া ছোটবেলা থেকে শিখেছি। এখন ম্যাচে বা হোস্টেলে থাকলে আমার কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু আছে যারা আমিষ না হলে খেতেই পারে না। ছোটবেলায় যদি তাদের বাবা-মা সব খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করাতেন, তাদের বাহানা বা জেদের গুরুত্ব না দিতেন তাহলে তারা আজ কষ্ট করে না খেয়ে থাকতে হয় না।

তাই আমার ব্যক্তিগত সাজেশন হবে আপনি বাচ্চাদের সব খাওয়ার অভ্যাস করান। খেতে না চাইলে চুপ থাকেন, খাবার নিয়ে তাকে বলতে যাবেন না খাও। তার জেদ বা বাহানার কথা শুনবেন না। দেখবেন সে নিজে থেকে খাবার খেতে শুরু করবে। ছোট থেকেই বাচ্চাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দিন। মন খারাপ করে, বা জেদে আপনার বাচ্চা না খেয়ে থাকলে শুকায় যাবে, ক্ষতি হবে এমনটা ভাববেন না, কারণ বাচ্চারা বড়দের মত খিদে সহ্য করতে পারে না। তাই যখন খিদে লাগবে তখন দেখবেন ঠিকি খেতে বসেছে।


খাবারে শিশুর রুচি বাড়ানোর উপায় কি?

– খাবার আধা ঘন্টা আগে জল পান করান।
– শিশুদের পছন্দমতো খাবার বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। এতে শিশুর খাবারের চাহিদা বাড়বে।
– জিঙ্কের অভাব ক্ষুধা ক্ষতির জন্য দায়ী, তাই জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়ান। কাজু বাদাম, গম, কুমড়া ইত্যাদি জিংক সমৃদ্ধ।
– আপনি যদি কোনো খাবার অপছন্দ করেন তবে তা শিশুর সামনে বলবেন না।
– শিশুদের জোর করে খাওয়াবেন না।
– খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করুন।
– শিশুদের একই খাবার প্রতিদিন খাওয়াবেন না। সপ্তাহে সাতদিন শিশুর খাবারের রেসিপি তৈরি করুন।
– মাকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। মাকে দেখে শিশু ওই খাবার খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করবে।
– স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি উৎসাহিত করতে শিশুদের পার্কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে পারেন।
– স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য পুরস্কার দিন ও প্রশংসা করুন।
– শিশুর মধ্যে একসঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
– খাবার খাওয়ানোর সময় গল্প, কবিতা ও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলুন।

আশা করি, আপনার শিশুর খাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, বাবা-মা হিসেবে একটু কৌশলী ও ধর্যশীল হলেই বেশিরভাগ সমস্যা সহজে সমাধান হয়ে যায়। তাই আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন, ছোট বেলা থেকে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন, উৎসাহের সাথে নিজের ইচ্ছায় খাবার গ্রহণে অভ্যাস গড়ে তুলুন। সঠিক পুষ্টি এবং সুসাস্থ্য নিশ্চিত করুন।

আরো পড়ুন – নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায়

শিশুর কান্না বন্ধ করার উপায় – শিশুকে শান্ত করুন স্মার্ট উপায়ে: শিশুদের কণ্ঠ সাধারণত বেশ তীক্ষ্ণ হয়। তাই শিশুদের কান্না কারো কাছেই পছন্দের মত কোনো বিষয় নয়। এজন্য শিশু কাঁদলে প্রতিটি বাবা-মাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং বাচ্চার কান্না দ্রুত থামানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেন।

একটা শিশু বিভিন্ন কারণে কান্না করতে পারে আবার কখনো তারা কারণ ছাড়াই কান্না করে। আবার নতুন বাবা মায়েদের পক্ষে কান্নার নির্দিষ্ট কারণ জানা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ তাদের শিশু লালন পালনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না।

কিন্তু বিশেষভাবে মায়েরা শিশুর কান্নায় খুব বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মনে করেন শিশু হয়তোবা বুকের দুধ ঠিকমত পাচ্ছে না। তাদের বাড়তি খাবার প্রয়োজন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর একমাত্র ও প্রধান খাদ্য। একেবারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ সময়টাতে শিশুকে অন্য কিছু খাবার না দেওয়াই ভালো।

শিশুর কান্নার কারণ ও কান্না বন্ধ করার উপায়

শিশুরা কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় তাদের কেবল দুটি ভাষা; একটি হলো কান্না আরেকটি হাসি। কিন্তু শিশুরা সাধারণত এমনি এমনি কাঁদে না। কেননা, তারা কান্নার মাধ্যমে ক্ষুধা, বিরক্তি, অস্বস্তি, ভয় কিংবা যে কোনো প্রয়োজন প্রকাশ করে। জন্মের পর প্রথম ৩ মাস পর্যন্ত একটি শিশু কোনো কারণ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে ২৪ ঘন্টায় তিন থেকে চার বার কান্না করে। এছাড়া অনেক সময় তারা কান্নার মাধ্যমে আপনার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমিডি জানিয়েছে, শিশুর অতিরিক্ত কান্নার কিছু কারণের কথা। দেখে নিন তো আপনার আদরের বাবুটি এসব কারণেই বেশি কাঁদে কিনা?

১। ক্ষুধা লেগেছে কিনা?

শিশুর কান্না করার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্ষুধা। কান্না করার আগেই শিশুকে খেতে দেওয়া উচিত। কেননা, অতিরিক্ত কান্না শিশুর জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে শিশুরা কান্না করলেই আমরা ধরে নেই যে তাকে ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু এমনটা সব সময় হয় না। হয়তোবা, পিঁপড়ের কামড়ে বা কোথাও আঘাত প্রাপ্ত হলেও বাচ্চা কান্না করতে পারে। কিংবা অনেক সময় পেট ভালোভাবে না ভরলেও শিশু কান্না করতে পারে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন, শিশুর ক্ষিধা পেয়েছে?

ক্ষুধা পেলে,

  • শিশু অস্থির হয়ে ওঠে।
  • ঠোঁট কামড়াতে থাকে।
  • মুখে বার বার আঙ্গুল দেয়।
  • কাঁদতে শুরু করে।
  • গালে হাত লাগানো হলে তাদের মাথা হাতের দিকে ঘোরায়

এই কয়েকটি লক্ষণ দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন শিশুর ক্ষুধা লেগেছে। এছাড়া যদি আপনার কখনো এরকমটা মনে হয় যে শিশুর ক্ষিধা লেগেছে তাহলে বাবুর হাতটি গালের দিকে ঘুরিয়ে দিন। বাবু যত তার হাতটি মুখে দেয় তাহলে বুঝতে হবে বাবুর ক্ষিধা লেগেছে।

২। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডার কারণে

গরম কিংবা ঠাণ্ডা উভয়টাই শিশুদের অপছন্দ। তাই অতিরিক্ত গরম কিংবা ঠাণ্ডার কারণে শিশুরা কেঁদে ওঠে। কিভাবে বুঝবেন শিশুর অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরম লাগছে?

  • প্রতিবার খেলাধুলার পর আপনি যখন তার নোংরা পোশাকগুলো পরিবর্তনের জন্য দেহ থেকে খুলে ফেলেন তখন শিশুরা কেঁদে ওঠে।
  • ন্যাপি পরিবর্তন করার সময় যখন তার জামা খুলে ঠান্ডা ও ভেজা টিস্যু দিয়ে মোছেন, তখন সে ঠান্ডা অনুভবের কারণে কাঁদে।
  • প্রতিবার গোসলের সময় শিশুকে যখন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভেজান তখনও শিশু কেঁদে ওঠে।
  • পায়খানা করার পর শিশুকে যখন টিউবওয়েল কিংবা টেপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন তখনও শিশু কাঁদে।
  • নবজাতককে উষ্ণ রাখতে গিয়ে বাড়তি পোশাক পরিয়েছেন। এতে অতিরিক্ত গরম কিংবা অস্বস্তি বোধের কারণে শিশুরা কাঁদতে শুরু করে।

এ ছাড়াও নতুন পরিবেশে গেলে, ব্যথা পেলে বা ভয়ের কিছু দেখলে, হঠাৎ জোরে কোনো শব্দ শুনলে, নতুন মানুষ দেখলেও শিশুরা কান্না করতে পারে।

৩। পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য

দীর্ঘসময় ধরে খেলাধুলার কারণে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে যায়। আর তখনই তাদের প্রয়োজন হয় ঘুমের। সাধারণত আমরা বড়রাই একটু ক্লান্ত হলে বা সারাদিনের পরিশ্রমের পর একটা ফ্রেশ ঘুম না দিলে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তাই বিছানায় গা দিতেই চলে যাই গভীর ঘুমের ঘোরে। কিন্তু শিশুরা তো আর এ কাজটি একা একাই করতে পারে না। তাই তারা কান্না শুরু করে দেয়। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা ঘুমের জন্য কান্না করছে?

ঘুম পেলে,

  • বাচ্চাদের চোখে পানি আসতে থাকে।
  • বাচ্চারা অতিরিক্ত ক্লান্ত হলে।
  • নাক ও মুখ চুলকাতে থাকলে।
  • ঘাড়ের মধ্যে মাথা রেখে শান্ত থাকলে।
  • অস্থিরতাবোধ করলে।
  • প্রতিনিয়ত নিয়মমাফিক ঘুমের টাইম থাকলে

এছাড়াও আপনি তার কান্নার ধরণ (বিরক্তিকর কান্না/বিরক্তিকর নয় এমন কান্না) দেখেও বুঝতে পারেন সে ঘুমের জন্য কাঁদছে নাকি অন্য কিছুর জন্য। অথবা এটাও ভেবে দেখতে পারেন সে পূর্বে কখন ঘুমিয়েছিল, এখন আবার ঘুমাবে কিনা। যদি এমনটা মনে হয় তাহলে তার বিছানায় নিয়ে গিয়ে ঘুম পারিয়ে দিন কিংবা তাকে কোলে নিয়েও ঘুম পাড়াতে পারেন।

৪। ভেজা ডায়াপার বা ডায়াপার নোংরা হলে

বেশ কিছু শিশু অনেকক্ষণ ধরে নোংরা ডায়াপার সহ্য করতে পারে যদিও এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু শিশু ডায়াপার নোংরা হলেই অস্বস্তিবোধ করে ও কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। অনেকসময় মায়েদের অবহেলার কারণেও শিশুরা নোংরা ডায়াপর পরে দীর্ঘক্ষণ থাকে। কিন্তু এটা একেবারেই উচিত নয়। শিশুর ডায়পার নোংরা হলে সেটা সাথে সাথেই পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত।

নচেৎ নোংরা ডায়াপারের কারণে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে। ভেজা ডায়াপারের কারণেই যে বাচ্চা কাঁদে তা কিন্তু না। বাচ্চার নরম ত্বকে কোনো জ্বালা যন্ত্রণা হওয়ার কারণেই কাঁদে। তাই ডায়াপার বদলানো নিয়ে অবহেলা করলে চলবে না। শিশুর মঙ্গল চাইলে নোংরা হলে তৎক্ষণাৎ তা পাল্টাতে হবে। আর মনে রাখবেন শিশুর ত্বকের জন্য র‍্যাশ ভালো কিছু নয়। তাই শিশুর জন্য বেছে নিতে হবে অধিক শোষণক্ষমতার কটন ডায়পার, যা নবজাতককে দিবে আরাম আর রাখবে র‍্যাশ মুক্ত।

৫। মা-বাবার সান্নিধ্য বা আদর চাওয়া

অনেক সময় শিশুরা মা-বাবার সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য কিংবা একটু আদরের জন্য কান্নাকাটি করে।

সন্তানের প্রথম বন্ধু হলো মা-বাবা। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই সন্তান মা-বাবাকে চিনতে পারে। তাদের শরীরের আলাদা গন্ধ, কণ্ঠ, হৃদস্পদন ইত্যাদি বুঝতে পারে। মা-বাবা যদি বাবুর সাথে কথা বলে, খেলে তাহলে সে আনন্দ পায়। তাই তারা আশেপাশে থাকলেই কোলে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠে ও কেঁদে দেয়। আসলে শিশুরা মা-বাবার সাথে সময় কাটাতে চায়, তাদের সাথে খেলতে চায়, তাদের কথা শুনতে চায়।

একবার ভাবুনতো, তার খাওয়া ঠিক আছে, ঘুম ঠিক আছে, ডায়পারে সমস্যা নেই, সে কোনো আঘাত প্রাপ্ত নয়। এসব কিছু ঠিক থাকা স্বত্বেও সে কাঁদছে কেন? কি, একটুখানি আদরের জন্য নয়তো?

হ্যা, ঠিক তাই। এরকমটা ঘটলে শিশুকে আস্তে করে আদরের ভাষা বলতে বলতে কোলে তুলে নিন, তাকে চুমু খান, কথা বলুন। কোলে তুলে নেওয়ার পর হালকা করে দোল দিন। দেখবেন, আর কান্নাকাটি করছে না।

তো কি বুঝলেন, বাবা-মায়ের সান্নিধ্যের জন্যুও শিশুরা কাঁদে।

৬। পেটের সমস্যা হলে

পেটের পীড়া শিশু কান্নার আরেকটি কারণ। পেট ব্যথা কিংবা পেটে কোনো সমস্যা হলে শিশুরা অনবরত কেঁদে উঠে। অনেক সময় খাওয়ার পরে শিশুদের পেটে গ্যাস হলে ব্যথার সৃষ্টি হয়। আর তাতেই শিশুরা কান্না শুরু করে দেয়। মেডিক্যাল সাইন্সে এই সমস্যাটাকে বলে ইনফ্যান্টাইল কলিগ।

জন্মের পর সাধারণত প্রথম তিন মাস পর্যন্ত শিশুরা এ রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। আবার হজমের সমস্যাও শিশুর পেট ব্যথার জন্য দায়ী। এটা সাধারণত একেবারেই নবজাতক শিশুদের হয়ে থাকে। তাহলে কিভাবে বুঝবেন শিশুরা পেটের সমস্যায় ভুগছে?

পেটে সমস্যা হলে শিশুরা,

  • বেশি নড়াচড়া করে।
  • বিশেষ করে হাত ও পা ভাঁজ করে ফেলে।
  • খাওয়ার পর পেটে গ্যাস হলে।
  • অস্থির হয়ে ওঠে।

এছাড়া মাসল বা হাড়ের কোনো ব্যথাও কারণও এমন কান্নার জন্য দায়ী। পেটের গোলমাল হয়ে থাকলে তাকে গ্রাইপ ওয়াটার খাওয়াতে পারেন। তবে আগে এটা শিওর হতে হবে যে, আপনার বাবুটা পেটের সমস্যার জন্যই কাঁদছে কিনা।

৭। দাঁতে অথবা কানে ব্যথা

অনেক সময় শিশুরা কোনো কারণ ছাড়াই বেশি বেশি কাঁদে। এটা সাধারণত ৬-৮ মাস বয়সী শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। যদি আপনি এরকম কান্নার সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারেন তাহলে কয়েকটা কাজ করবেন।

  • আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে বাচ্চার দাঁতের মাড়ি দেখে নিন। মাড়িতে শক্ত কিছু উঠলে বুঝবেন শিশুর দাঁত উঠেছে। দাঁত ওঠার কারণে ব্যথা ও অস্বস্তিবোধ হলে শিশু কেঁদে ওঠে।
  • অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানেও ব্যথা হয়। যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদতে থাকে।

এরকমটা ঘটলে ডাক্তারি পরামর্শ নিন। শিশুকে যত্নে রাখুন।

৮। অপরিচিত পরিবেশ

শিশুরা সাধারণত পরিচিত পরিবেশ ও পরিচিত মানুষদের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। তাই হঠাৎ করে যখন তাদের অপরিচিত কোনো পরিবেশে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তারা কান্না শুরু করে দেয়। কারণ হৈ চৈ পূর্ণ নতুন পরিবেশে তারা অস্বস্তিবোধ করে এবং হঠাৎ বিকট কোনো শব্দ শুনে শিশুরা ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতে পারে।

৯। অসুস্থ হলে

কিছু কিছু সময় শিশুরা দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকে। তারা বিছানায় শুয়ে থাকতে চায় না, কোলে উঠতে চায়, খেতে চায় না, বিরক্তিবোধ করে।

এরকমটা ঘটলে মনে রাখবেন, শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ। আর এ সময় তার শরীরে জ্বর থাকতে পারে।

তাই তার শরীরে ও কপালে হাত দিয়ে দেখতে পারেন শরীর গরম আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

১০। পছন্দের কোনো জিনিস এ উঠতে চাইলে

অনেক সময় শিশুরা কোনো জিনিস এর প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়। যেমনঃ মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি কিংবা সাইকেলে উঠতে তারা পছন্দ করে। পছন্দের জিনিসটি তাদের সন্নিকটে থাকলেই তারা সেটা দেখে কাঁদতে শুরু করে। সেটাতে উঠতে চায়।

খেয়াল রাখবেন, শিশুরা প্রয়োজনের কথা মুখে বলতে পারে না। তারা অঙ্গবভঙ্গি কিংবা আচার আচরণের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে। আর খুব বেশি সমস্যা মনে হলে তারা কান্না শুরু করে দেয়। শিশু কান্নাকাটি করবেই এটা নিতান্তই সত্য একটি বাক্য। আর তারা কান্নাকাটি করলে ভয় পাবেন না, বিরক্ত হবেন না। শিশুর প্রতি অধিক যত্নশীল হোন। ওদের বুঝতে চেষ্টা করুন এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে অপেক্ষা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১১। সিনথেটিক কাপড়

এ ছাড়া অনেক সময় সিনথেটিক কাপড় পরালে শিশুদের গায়ে অস্বস্তিবোধ হয়। এ ধরনের কাপড় পরালে গায়ে ঘর্ষণের ফলে শরীর কেটে যায় এবং কাঁটা অংশগুলো চিন চিন করে ও ব্যথা অনুভুত হয়। এতেও নবজাতক শিশুরা কেঁদে ওঠে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী?

যদি আপনার আদরের বাবুটি এক নাগাড়ে কান্না করতেই থাকে এবং তাকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে কয়েকটি জিনিস লক্ষ করতে হবে।

  • প্রথমে তার শরীরে ভালোভাবে লক্ষ করুন কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা।
  • এরপর হাত পা নড়ানড়া করে দেখুন। যদি শিশুটি আরো জোরে কান্না করে তবে বুঝতে হবে তার শরীরে ব্যথা হচ্ছে।
  • তার শরীর ও মাথায় হাত দিয়ে দেখুন স্বাভাবিকের তুলনায় খুব বেশি গরম অনুভুত হচ্ছে কিনা।
  • বাচ্চার পেটে হালকা চাপ দিয়ে দেখুন সে পেটের ব্যথায় আরো জোরে কাঁদছে কিনা।
  • কোনো কীটপতঙ্গ তাকে কামড় দিয়েছে কিনা নিশ্চিত হোন। অনেক সময় বিছানায় খাবারের টুকরা পড়লে পিঁপড়া কিংবা কোনো পোকামাকড় খাবার খেতে এসে বাচ্চাকে কামড় দিতে পারে।

এসব বাদেও যদি শিশু খুব অস্বাভাবিকভাবে কান্না করতেই থাকে তবে খুব দ্রুত চেষ্টা করুন নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

জন্মের পর শিশুর কাঁদে কেন?

প্রতিটি শিশু মাতৃগর্ভে নিরিবিলিতে বেড়ে উঠতে থাকে৷ যেখানে কেউ তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা বা তাকে বিরক্ত করার চেষ্টা করে না৷ সেই শান্তাবস্থাই তার পছন্দের পরিবেশ হয়ে ওঠে৷ কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হঠাৎই এক মুহূর্তে তার সবকিছু বদলে যায়, যা ওই টুকু একটা শিশুর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া কঠিনতম একটি বিষয়৷ তখন সে কাঁদতে শুরু করে।

জন্মের পর তার কান্নার ফলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা, পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়৷


জন্মের পর শিশু না কাঁদলে করণীয় কি?

জন্মের পর শিশু না কাঁদলে মনে করা হয় তার শরীরে অক্সিজেন ছড়িয়ে পড়তে কোনও সমস্যা হচ্ছে। তাই, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর না কাঁদলে, তার পিঠে মেরে তাঁকে কাঁদানোর চেষ্টা করা হয়, যাতে প্রাথমিক কিছু সমস্যা থাকলে তা ঠিক হয়ে যায়৷


কেন শিশুরা অতিরিক্ত কাঁদে?

কান্না হলো কষ্ট বা হতাশা কমানোর কার্যকরী একটি মাধ্যম। যাদের বোঝার ক্ষমতা ভালো, সহজে মানিয়ে নেয় তারা কাঁদে কম। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঠিক এই সমস্যাটাই থাকে, আবার অনেক বাচ্চা কান্নাকে চাহিদা পূরণের মাধ্যম মনে করে।

যেমন- আপনার বাচ্চা প্রসাব করছে বিছানায়, যেটা তার জন্য বিরক্তিকর। আপনি কাজে ব্যস্ত থাকায় সে দেরী সহ্য করতে না পেরে কাঁদে যাতে তা কান্নার শব্দে আপনি তা বুঝতে পারেন। আসলে শিশুরা এটা বোঝে তখনি যখন দেখে যে কান্না করলে তার চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তখন সে এটাকে মাধ্যম হিসেবে নিয়ে নেয়।


বাচ্চা রাতে কাঁদে কেন?

বাচ্চা যে রুমে থেকে অভ্যস্থ সেই রুমের পরিবেশ বা তাপমাত্রা পরিবর্তন শিশুর কাছে অসস্তিকর লাগে। আবার রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে শিশু একা অনুভব করে, আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেলে সে ভয় পেয়ে যায়, তখন কান্না করে সান্নিধ্য চায়।

এছাড়া পেটের সমস্যা, বা কোন অসুখ থাকলে তা যেহেতু রাতে বেশি বাড়ে তাই রাতে শিশুরা কাঁদতে পারে। তবে মা হিসেবে আপনি একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন আসল কারণ।

আশা করি, আমাদের এই পদ্ধতি ও কারণগুলো আপনার মনের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ভালো থাকুক আপনার সোনামণি। ভালো থাকুক, আপনার পরিবার।

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম – Baby Care Guidelines Bangla

নবজাতক শিশুর যত্ন

নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যার নিয়ম: শিশুরা খুব কোমল এবং নরম ত্বক নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নতুন পিতামাতারা প্রায়শই তাদের শিশুর ত্বকের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন যা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। শিশুর ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং সঠিক ত্বকের যত্ন না নিলে সম্ভবত তার চুলকানি এবং অ্যালার্জি হতে পারে।

জন্মের পর ২৮ দিন পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় নবজাতক পিরিয়ড। আর এ সময়টা বাচ্চা ও মা দুজনের জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদরের বেবীটাকে সুস্থ, সুন্দর, রোগবালাইমুক্ত ও হাস্যোজ্জল রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো জুড়ি নেই। শিশুর কোমল শরীরে সহজেই রোগজীবণু আক্রমণ করতে পারে। এছাড়া সামান্য অপরিচ্ছন্নতার কারণে শিশুর নাভীর ইনফেকশনও হতে পারে।

আপনার ছোট্ট বাবুর ছোট্ট শরীরকে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। তাই ‘শিশুকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন’ এসব টিপস নিয়েই আমাদের এই আর্টিকেল।

হাত ধুয়ে নিন

আমাদের হাতে সাধারণত অদৃশ্য ময়লা লেগেই থাকে। যেগুলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবানুনাশক না ব্যবহার করলে যায় না। তাই শিশুর সংস্পর্শে আসার পূর্বে নিজের হাতটি সর্বদা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য আপনি ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।

অন্য কেউ শিশুকে কোলে নিতে চাইলে তাকেও হাত ধুয়ে নিতে বলুন। এছাড়া প্রতিবার শিশুকে পরিষ্কার করার পূর্বে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই তাকে কোলে নিন।

বাচ্চার কাপড় কাঁথা পাল্টানোর সময়, প্রসাব পায়খানা করার পর বা ডায়াপার পাল্টানোর সময়ও হাত ধুয়ে নিন।

ত্বক ও চুলের যত্ন

এটা লক্ষণীয় যে, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের প্রতিদিন গোসল করাতে পছন্দ করে। আর এজন্য তারা অ্যালার্জির সৃষ্টি করে না এমন সাবান বা স্যাম্পু ব্যবহার করে থাকে। শিশুর ত্বক হালকা গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। প্রয়োজনে ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য চোখে ধরে না এমন একটি সাবান ব্যবহার করুন। বাচ্চাকে শুকানোর জন্য যে ঘরটি ব্যবহার করবেন সেটি অবশ্যই গরম রাখুন। এজন্য শীত এড়ানোর সমস্ত এয়ার কণ্ডিশনারগুলো বন্ধ রাখুন।

শিশুর ত্বকে নতুন কোনো পণ্য চেষ্টা করবেন না। কোনও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলি শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে। প্রাকৃতিক তুলো এবং মসৃণ তোয়ালে ব্যবহার করে বাচ্চাকে মুছে ফেলা ভাল। যাতে অপ্রত্যাশিত স্ক্র্যাচ থেকে দূরে থাকা যায়।

ভারনিক্স ব্যবহার করুন

সন্তান জন্মের পর তাকে উষ্ণ, কোমল ও আরামদায়ক জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করুন। শিশু জন্মের পর চেষ্টা করুন ভারনিক্স ব্যবহার করতে। ভারনিক্স এমন একটি তেল জাতীয় পদার্থ যা শিশুর চামড়ায় ব্যবহার করলে অনেকটা অ্যান্টিবডির মত কাজ করে। শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন জিনিস যেমনঃ বাইরের ধুলোবালি বা অন্য কিছু ইত্যাদিকে বাচ্চার সংস্পর্শে আসতে বাঁধা প্রদান করে।

নাভির যত্ন

শিশু জন্মের পর পরই ডাক্তাররা প্লাসেন্টা থেকে কেটে দেন। নাভি থেকে রক্তপ্রবাহ বন্ধ এবং ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমানোর জন্য ডাক্তাররা নাভি কাটার পরপরই তা পেঁচিয়ে ক্লিপের মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্ল্যাম্প বা টেইপ লাগিয়ে দেন।

নাভিতে পানি, তেল, লোশন বা সাবান ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। বাচ্চার নাভিকে শুষ্ক রাখুন। কেননা, নাভি যত বেশি শুষ্ক থাকবে তত দ্রুত তা ঝরে যাবে।

শিশুর গোসলের নিয়ম

প্রথমবার শিশুকে গোসল করানো ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা। এত ছোট্ট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই যায় না ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে? কিন্তু আমাদের দেশের মায়েরা একটা কাজ খুব ভুল করেন। আর সেটা হলো যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চার গোসল সেরে ফেলা। বাচ্চাকে সপ্তাহে তিনবার গোসল করানোর নিয়ম আছে।

তাও আবার ইচ্ছামত পানি ঢেলে নয়। নরম কাপড় কিংবা স্পঞ্জ নিয়ে সেটা হালকা গরম পানিতে চুবাতে হবে। তার সেটা দিয়ে শিশুর সমস্ত শরীর সুন্দর করে মুছে দিতে হবে। তবে ডাক্তাররা বাচ্চার নাভি না শুকানো পর্যন্ত গোসল দিতে নিষেধ করেন।

ততদিন পর্যন্ত শুধু ভেজা কাপড় দিয়ে বাচ্চার শরীর মুছে দিলেই চলবে। আর ছোট্ট বাচ্চাকে বার বার পানি ঢেলে গোসল করালে শিশুর ত্বকে যে তেল তেলে ভাবটা থাকে সেটা চলে যায়। ফলে একজিমার মত মারাত্মক চামড়ার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চার গা ভেজা থাকলে একটা নরম শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা, গলা, বুক, হাত ভালোভাবে মুছে দিন। নতুন বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

বাচ্চার কান পরিষ্কার

শিশুর ত্বক এমনিতেই নরম হয়। নরম ত্বকে শক্ত কোনো কিছুর আঘাত বেশ বেদনাদায়ক ও ভয়ংকর। তাই কটনবাডস দিয়ে শিশুর কান পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আপনি বরং কডনবাডস কিংবা নরম কাপড় ব্যবহার করে কানের বাইরের ময়লাগুলো পরিষ্কার রাখতে পারেন। কিন্তু কানের ভিতরের ময়লা পরিষ্কার করতে গেলে অসাবধানতা বশত কানের পর্দায় কটনবাডস এর আঘাত লেগে যেতে পারে। আর তাতেই শিশুর কানের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। যা খুবই ক্ষতিকর। আবার কানের ভিতরে এক ধরনের লোম থাকে। যেগুলো বাইরের ময়লাগুলো ঠেলে দেয় এবং ভিতরে যেতে বাঁধা প্রদান করে। ছোট্ট শিশুর কানে কটনবাডস ব্যবহার করলে এই লোমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাই কটনবাডস এর আঘাত থেকে এদের রক্ষা করা জরুরি।

নবজাতকের নাকের যত্ন

কানের মত নাকেও কটনবাডস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ময়লা জমে কিংবা সর্দির কারণে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তখন শিশু মুখের মাধ্যমে নিঃশ্বাস নেয়। তখন শিশু দুধ টানতে চায় না। তাই আপনি বরং কডনবাডস এর পরিবর্তে নরম পরিষ্কার সুতি কাপড়ের কোণা পেচিয়ে নিয়ে তা দিয়ে বাচ্চার নাক পরিষ্কার করতে পারেন।

শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন

ডায়াপার যতটা শিশুর জন্য ততটা ক্ষতির কারণও হতে পারে। কেননা, অধিক সময় ধরে নোংরা ডায়াপার পরিবর্তন না করলে শিশুর র‍্যাশ হতে পারে, যা তার জন্য ক্ষতিকর এবং ভয়াবহ। এজন্য ডায়াপার ব্যবহারে সাবধান হতে হবে।

ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে শিশুর ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল লাগিয়ে নিতে পারেন। অনেকে আবার পাউডার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু পাউডার ব্যবহার করলে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

নবজাতকের জন্য সবসময় ভালো এবং উচ্চ শোষণক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার নিশ্চিত করুন। ডায়াপার লাইন খেয়াল রাখুন এবং প্রয়োজন হলে পাল্টে দিন। শিশুর ব্যবহৃত ডায়াপার সুন্দর করে মুড়িয়ে নিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিন।

নবজাতকের জিহ্বা পরিষ্কার

বাবুদের দুধ খাওয়ার কারণে জিভের মধ্যে সাদা সাদা আস্তরণ পড়তে দেখা যায়। অনেক মায়েরা এই বিষয়টি খেয়ালই করেন না। তাই ঐ সমস্ত শিশুদের মুখে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। মনে রাখবেন এটা পরিষ্কার করাও খুব জরুরি। এটা পরিষ্কারের জন্য পরিষ্কার শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন। আলত করে মুছে দিন আপনার ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ৷

শিশুর শরীরে ম্যাসাজের নিয়ম

এটা সবাই জানি, শিশুর ত্বক খুব নাজুক হয়। জন্মের প্রায় দশ সপ্তাহ পর থেকে শিশুকে নিয়মিত ম্যাসাজ দিতে পারেন। এতে শিশুর ত্বক আরো একটু স্বাস্থ্যকর হয়। তবে রিসার্চে এটাও দেখা গেছে, শিশুকে কিভাবে স্পর্শ করা হচ্ছে, তার উপর শিশুর সুস্থতা ও বৃদ্ধি খানিকটা নির্ভর করে।

শিশুর শরীরে ম্যাসেজের জন্য তেমন স্পেশাল কোনো নিয়ম নেই। ম্যাসেজের পূর্বে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন। তা হলো শিশুর শরীরে যাতে চাপ না লাগে। কেননা, এতে শিশু ব্যথা পেতে পারে। আর তাই একটা উষ্ণ রুমে নরম একটা ভাজ করা কম্বলের উপর শিশুকে উপর করে শোয়ান। তারপর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বেবী লোশন বা বেবী অয়েলগুলো হাতে মেখে নিন। এরপর আলতো করে শিশুর সমস্ত শরীরে বুলাতে থাকুন। এতে শিশুর চামড়া আরো নরম ও স্বাস্থ্যকর হবে।

সুস্থ ও হাসিমাখা মুখে নতুন অতিথি আসুক এটা আমরা সবাই চাই। তাই আপনার নবজাতকের ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে জন্ম থেকেই তার যত্ন নেওয়া জরুরী। উপরিউক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে আপনার নবজাতক শিশু নাভির ইনফেকশন, সর্দি, ডায়রিয়া বা অন্যান্য ইনফেকশন হতে রক্ষা পাবে। শিশুকে যত্নে রাখুন ভালোবাসায় আর পরিচ্ছন্নতায়।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

শিশু জন্মের কতদিন পর গোসল করাবেন?

জন্মের তিন দিন পর আপনি বাচ্চাকে গোসল করাবেন। প্রতিদিন করানোর দরকার নেই। একদিন, দুই দিন পর করানো যেতে পারে। তবে অবশ্যই সেটি হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে করাতে হবে।


বাচ্চার কানের ময়লা পরিষ্কার করার উপায় কি?

কানের ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহার করতে পারেন বেবি অয়েল। বেবি অয়েল হাতে নিয়ে ২ কানে ভাল মতো লাগিয়ে নিন। তারপর কয়েক ফোটা তেল আস্তে আস্তে কানের ভিতরে দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে কটনবাড বা কান পরিষ্কার করার কিট দিয়ে কান পরিষ্কার করে ফেলুন।

কানের ময়লা পরিষ্কার করার সহজ উপায় হল অলিভ অয়েল। কানের ময়লা নরম হয় এবং সহজে পরিষ্কার করা যায়। সামান্য অলিভ অয়েল নিয়ে গরম করে নিন, তারপর একটি ড্রপারে গরম তেল ভরে ২ কানের ভিতরে দিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন কানের ভিতরের ময়লা নরম হতে। কান পরিষ্কার করার কিট দিয়ে কান পরিষ্কার করে নিন।


নবজাতকের নাকে শব্দ দূর করার উপায় কি?

নাক ডাকার অন্যতম কারণ নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাক জ্যাম হয়ে যাওয়া। ঠান্ডা লাগলে বা অ্যালার্জিতে এই ঘটনা ঘটে। এজন্য বিছানার মাথার দিক কয়েক ইঞ্চি উঁচুতে রাখা উচিত। চিত না হয়ে বরং এক কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করুন। শিশুর খাবার ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগেই শেষ করুন।


নবজাতকের নাক বন্ধ হলে করণীয় কি?

সরষের তেলে রসুন গরম একটা চায়ের কাপের চার ভাগের এক ভাগ সরষের তেল নিন। তাতে ২-৩টে রসুন কোয়া দিয়ে হালকা আঁচে গরম করে নিন। তারপর সেটাকে একটু ঠান্ডা হতে দিন। তারপর বাচ্চার গলা, বুক, পিঠ ও পায়ের তালুতে আসতে আসতে মালিশ করুন।

যে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞের প্রথম পছন্দ স্য়ালাইন ড্রপ। বাচ্চাকে কোলে শুইয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে ধরুন। নাকে ধীরে ধীরে ২-৩ ড্রপ দিন। অপেক্ষা করুন, ড্রপ ভিতরে যাওয়া পর্যন্ত। তারপর বাল্ব সিরিঞ্জ দিয়ে নাকের ময়লা বের করে নিন।


বাচ্চাদের ওরাল থ্রাশ কি?

বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম দূর্বল হয়ে গেলে তখন এক ধরণের ছত্রাক আক্রমণ করে। বাচ্চাকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হলেও এই রোগ হতে পারে। কারণ কিছু কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো খেলে বাচ্চাদের শরীরের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায়, ইমিউন সিস্টেমের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তখন মুখের ভিতর গালসি বা চোয়ালে একধরনের সাদা ফোস্কার মত দেখা যায় যাকে বলে ওরাল থ্রাশ।

ওরাল থ্রাশ হলে প্রথমত তার সবকিছু খুব যত্নের সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। খেলনা থেকে শুরু করে আশেপাশে বিভিন্ন বস্তু যা শিশু মুখে দিতে পারে, খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। সাথে মায়ের দুধের নিপল-ও সবসময় পরিস্কার রাখতে হবে। ডাক্তার দেখালে সাধারণত একটি অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রীম দেয়। নিয়মানুযায়ী এই ক্রীম ব্যবহার করলে সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই ওরাল থ্রাশ সেরে যাবে।


নবজাতক নাকে মুখে বমি করে কেন?

বদ হজম বা মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করলে, বমি করে দেয়। তবে অনেক কারণ হতে পারে বমি করার পিছনে।


নবজাতকের চোখ হলুদ হয় কেন?

জন্ডিস হতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।


নবজাতকের চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ ও সমাধান কি?

প্রথমত ম্যাসেজ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে কারণ ম্যাসাজের ফলাফল এক বছর পর্যন্ত, ৯৬ থেকে ৯৮ ভাগ পাওয়া যাবে। এরপরেও যদি উন্নতি না হয়, দুই বছরের মধ্যে কোনো একসময়ে অজ্ঞান করে, ডাক্তার তারের মতো যন্ত্র দিয়ে সেই রাস্তাটিকে পরিষ্কার করে দেয়। এটি করলে যাদের সমস্যাটি রয়ে গেছে তাদের মধ্য থেকে ৯৫ ভাগ শিশুর বিষয়টি ভালো হয়ে যায়।

আশা করি, নবজাতক শিশুর যত্ন বিষয়ক এই টিপস গুলো দিয়ে, আপনাদের জানার বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে পেরেছি, আপনাদের প্রশ্ন জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। ভালো থাকবেন, আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখায়।

আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখুন –

আরো পড়ুন- শিশুর খাবারে অরুচি ও প্রতিকারের উপায়

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়স ভেদে প্যারেন্টিং নিয়মে – Baby Talk Tips

শিশুদের কথা শেখানোর উপায়

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়স ভেদে – সকল বয়সের বাচ্চা এবার কথা বলবে: শিশুর দেরিতে কথা বলা বা শব্দ উচ্চারণ ঠিকমত না হওয়া ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে মায়েরা দুশ্চিন্তায় থাকে। অনেক সময় এই বিষয়গুলোকে মনগড়া ট্রিটমেন্ট যেমন- ঝাড়ফুঁক, পানিপড়া ইত্যাদি নানা উপায় অবলম্বন করে অনেকে। যেটা বাচ্চার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেক সমস্যা আর বড় আকার ধারণ করতে পারে না, বরং ঠিক হয়ে যায় পুরোপুরি। তো আজকে আমি আপনাদের সন্তানের কথা বলা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এমন কিছু সহজ পদ্ধতি বলব যা আপনি বাসায় বসে অনায়াসে করতে পারবেন। চলুন তবে শুরু করা যাক।

শিশুর কথা বলার সমস্যা

‘কথা বলতে শেখা’ এমন একটি প্রক্রিয়া যা জন্মের সময় থেকেই শুরু হয়। যখন আপনার শিশুটি মানব কণ্ঠ কীভাবে শব্দ করতে পারে তা অনুভব করে তখন থেকেই সে নানারুপ শব্দ তৈরি করে। ২ বছর বয়সী, বেশিরভাগ শিশুর একটি বড় শব্দভাণ্ডার রয়েছে। যেখানে তারা তাদের প্রয়োজন এবং ধারণাগুলি প্রকাশ করার জন্য শব্দগুলি একসাথে রাখতে পারে।

বাচ্চারা চারপাশের বিভিন্ন শব্দ মনযোগ দিয়ে শুনে এবং তা নিয়ে ভাবতে থাকে। যখন একবার সে বুঝতে পারে যে এই শব্দটি আসলে এই জায়গা থেকে আসছে তখন সে সেটা একেবারে ব্রেনের মধ্যে জমা করে রাখে। তারপর সে নিজেই এই শব্দটি ভালো লাগলে করতে শুরু করে, যেটা আমরা বুঝতে পারি না। কারণ সেটা সে চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না, ছোট মানুষ বলে কথা। তবে অনেক বাচ্চারাই এটা করতে পারে, একেবারে হুবহু নকল!

শিশুরা অনুকরণ প্রিয়, তারা বাবা মায়ের অনুকরণ করে। তাই আপনার মুখ থেকেই সে প্রথম কথা বলা শিখে। এজন্য অনেক টেকনিক আছে যা আপনার বাচ্চার কথা বলা ও উচ্চারণ জড়তা দূর করবে। তবে বয়স ভেদে বাচ্চারা যেহেতু আলাদা চরিত্র বহন করে তাই টেকনিকগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়। আসুন দেখি, আপনার শিশুর কথা শেখানোর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপনি কী করতে পারেন?

শিশুদের কথা শেখানোর উপায় বয়সভেদে

তিন মাসের বাচ্চা থেকে শুরু করতে হবে। কারণ শিশু কথা বলতে না পারলেও মায়ের পেটে থাকা অবস্থা থেকে কথা শুনে, বুঝতে চেষ্টা করে। কোনটা কথা রাগী আর কোনটা কথা মিষ্টি তা সে বুঝে যায় অনায়াসে। তার প্রমাণ স্বরূপ যখন আপনি কারো সাথে ঝগড়া করেন বা উচ্চস্বরে কথা বলেন তখন খেয়াল করে দেখবেন যে পাশে থাকা শিশুটি কাঁদছে, সে বুঝতে পেরেছে পরিবেশ ঠিক নাই।

তাই মায়ের গর্ভাবস্থায় থাকা সময়ে মাকে বিভিন্ন ভাবে কবিতা, ছড়া পড়তে হবে, মাঝেমাঝে বাচ্চাকে শুনিয়ে কথা বলতে হবে, তাহলে দেখবেন এমনিতেই বাচ্চার কথা না বলার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

আসুন দেখি কিভাবে আপনার শিশুটিকে কথা বলা শেখাবেন তা উদাহরণ সহ জেনে নেই।

৩ মাসের শিশুর কথা বলা

আপনার শিশু আপনার কন্ঠ শুনে। সে আপনাকে অনুকরণ করে এবং কলকল শব্দ করে। তারপর আপনার অনুরূপ শব্দ করার চেষ্টা করে। ‘কখন ভয়েস সুন্দর হয়’ কখন একটি কথা মানানসই হয় তা আপনি আপনার বাচ্চাকে এভাবে শেখাতে পারেন-

১। আপনার শিশুর কাছে গান করুন। আপনি তার জন্মের আগেই এটি করতে পারেন! মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ও আপনার শিশু আপনাকে শুনবে। আপনি যদি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেন বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় তাহলে বড় হয়ে বাচ্চা এই সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

আবার ধর্মীয় কোন গল্প, কথা, বা সংগীত শোনান তাহলে সে সেটার প্রতি টান অনুভব করবে। তাই পেটে থাকা হোক আর নবজাতক হোক তার সামনে গল্পের বই পড়বেন, গুণ গুণ করে গাইবেন, মজার মজার ছড়া শোনাবেন। তাহলে বাচ্চাও এটি করতে চাইবে এবং মুখের জড়তা কাটিয়ে বলতে শুরু করবে।

২। আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। আপনার শিশু উপস্থিত থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে কথা বলুন। এমতাবস্থায়, সে শব্দগুলি হয়তো বুঝতে পারবে না, তবে সে আপনার ভয়েস এবং আপনার হাসি পছন্দ করবে। সে অন্যদের কথা শোনা এবং অন্য লোকদের দেখতেও উপভোগ করবে। অবসরে বা অন্যসময় সে এটা হুবহু করার চেষ্টা করবে।

৩। বিশ্রামের সময়ের জন্য পরিকল্পনা করুন। বাচ্চাদের টিভি বা রেডিও বা অন্যান্য গোলমাল ছাড়াই নিঃশব্দে আধো আধো স্বরে বা অসংলগ্নভাবে কথা বলা এবং খেলার জন্য সময় প্রয়োজন।

তাই সময় বের করে বিভিন্ন শব্দের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। যেমন- কখনো সিংহ, কখনো বাঘের শব্দ থেকে শুরু করে নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। সে শুনবে, তা ব্রেণ সেটা নিয়ে ভাববে এবং হুবহু করার চেষ্টা করবে।

৩ থেকে ৬ মাসের বাচ্চার কথা বলা

লোকেরা একে অপরের সাথে কীভাবে কথা বলে তা আপনার শিশু শিখতে থাকে। আপনি যখন কারো সাথে গল্প করেন তখন আপনি তাকে একজন ‘কথক’ হতে সহায়তা করতে পারেন। নিচের পদ্ধতিগুলো করার চেষ্টা করুন-

১। আপনার বাচ্চাকে কাছে ধরুন যাতে সে আপনার চোখে দেখে।

২। তার সাথে কথা বলে হাসি দিন।

৩। আপনার বাচ্চা যখন অস্ফুট স্বরে বলা কথা বলার চেষ্টা করে তখন তার তৈরি শব্দগুলি অনুকরণ করুন।

৪। যে শব্দটি আপনি করেছেন সে যদি একই শব্দটি পুনরায় করার চেষ্টা করে তবে আপনিও পুনরায় শব্দটি অনুকরণ করুন।

এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে তার সাথে সময় কাটান। এতে কথা বলা সহজ হবে এবং শিশু কথা বলতে উৎসাহী হবে। আর মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক মুজবুত হবে।

৬ থেকে ৯ মাসের বাচ্চার কথা বলা

আপনার বাচ্চা শব্দ করে খেলবে। এই শব্দগুলির মধ্যে কিছু শব্দ যেমন “বাবা” দাদা ইত্যাদি। এসময় খুশিমূলক কোনো কথাবার্তা শুনে বাচ্চা হাসে এবং ধমক শুনে কাঁদে বা তাকে দেখতে অসন্তুষ্ট লাগে। বাচ্চাকে এরকম ছোট ছোট শব্দগুলি বুঝতে আপনি সাহায্য করতে পারেন। (যদিও সে এখনও সেগুলি বলতে পারে না)

১। বাচ্চাকে নিয়ে খেলুন, তাকে পিঠে চড়িয়ে ঘোড়ার মত শব্দ করুন আবার কখনো হাতির মত। এতে শিশু উৎসাহ পায় এবং হাসতে গিয়ে শব্দ তৈরী করে। আবার বইয়ের ছড়া পড়তে পড়তে সেখানে থাকা ছবির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন এবং তার হাত দিয়ে ছবিগুলো স্পর্শ করুন।

২। তাকে একটি খেলনা দিন এবং এটি সম্পর্কে কিছু বলুন। যেমন- দেখ বাবা/মা এই গাড়িটার রং লাল, এটির চারটি চাকা।

৩। আপনার শিশুকে একটি আয়না দিন এবং নিজেকে দেখতে দিন। তারপর জিজ্ঞাসা করুন, “সে কে?” সে যদি সাড়া না দেয়, তাহলে তার নাম বলুন।

৪। আপনার বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট প্রশ্ন করুন। যেমন “কুকুর কোথায়?” যদি সে উত্তর না দেয় তবে কোথায় তাকে দেখান।

এভাবে নিত্য নতুন কোন বিষয় নিয়ে বাচ্চাকে গাইড করুন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, বাচ্চাকে কখনো জ্বোর করবেন না। হাসিখুশি মেজাজে তার সাথে এগুলো করুন। কোন কারণে করতে না চাইলে আগে তার মন ভালো করে নিন তারপর করার চেষ্টা করুন।

৯ থেকে ১২ মাস বয়সের শিশুর কথা বলা

এ সময় আপনার শিশু সহজ সহজ শব্দ বুঝতে শুরু করবে। আপনি “না-না” বললে সে আপনার দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে “মা কোথায়?” সে মায়ের খোজ করবে এবং এদিক ওদিক তাকাবে। সে ইঙ্গিত করবে, শব্দ করবে এবং সে কী চায় তা আপনাকে “বলার” জন্য তার শরীরটি ব্যবহার করবে।

উদাহরণস্বরূপ, সে আপনার দিকে চেয়ে থাকতে পারে এবং তার হাতগুলো উপরে তুলে কোমরটা নাচাতে পারে। এর মানে সে উপরে উঠতে চায়, এটা আপনাকে বোঝাতে চাচ্ছে। ‘সে এখন খেলতে চায়’ এটা আপনাকে বোঝানোর জন্য আপনার হাতে একটা খেলনা দিতে পারে। আপনি যখন আপনার শিশুকে “কথা বলতে” সহায়তা করতে পারেন। আপনি কীভাবে অন্যকে বিদায় দেয়ার সময় “বাই বাই” বলেন তা তাকে দেখান।

তাকে বাস্তবিক কথার দিকে নিয়ে যান। কোন নীতি মূলক বা ইশপের গল্প তাকে শুনান, তার মনে প্রশ্ন তৈরী হবে। আর সেটা বলার চেষ্টা করবে, দেখবে বাচ্চার যত কথা বলে বেশিরভাগটাই প্রশ্ন। তাই কোন শিশু যদি কথা না বলে তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে এমন সব কথা বলা যেখানে প্রশ্ন করতে অনেক কৌতুহল জাগবে। ঠিক এই টেকনিকটি কাজে লাগিয়ে আপনি বাচ্চাকে সহজে কথা বলা শেখাতে পারেন।

এক থেকে দেড় বছরের সন্তানের কথা বলা

এ সময় বাচ্চারা শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করে। কোনো কিছু খুঁজতে তারা একই শব্দকে ধারাবাহিকভাবে বারবার বলতে থাকে। যেমনঃ বোতলের জন্য “বাবা” কিংবা জুস এর জন্য “জুজু”। এই বয়সে অনেক শিশুই একটি বা দুটি শব্দ করে থাকে। কিন্তু তারা ২৫ টিরও বেশি শব্দ বুঝতে পারে।

আপনি যদি তার কাছে কোনো খেলনা চান তবে সে আপনাকে একটি খেলনা দেবে। এমনকি কোনও শব্দ ছাড়াই, সে আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে, জিনিসটি নির্দেশ করে, জিনিসটির কাছে পৌঁছে গিয়ে বা জিনিসটি দেখিয়ে বা অস্ফুট শব্দে। আপনি আপনার বাচ্চাকে শব্দগুলি বলতে সহায়তা করতে পারেন এভাবে –

১। আপনি যে সমস্ত জিনিস দৈনন্দিন ব্যবহার করেন সেগুলোর নাম তাকে বলুন। যেমনঃ “কাপ”, “জুস”, “পুতুল” এর মতো শব্দগুলি ব্যবহার করুন। একঘেয়েমি বারংবার না বলে বাচ্চাকে বেশ কয়েকদিন সময় দিন সেগুলোর নাম বলতে।

২। বইগুলিতে থাকা ছবিগুলো সম্পর্কে আপনার বাচ্চাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। আপনার শিশুকে ছবির জিনিসগুলোর নামগুলো জানতে কয়েকদিন সময় দিন।

৩। আপনার শিশু যখন কোন জিনিস দেখে সেগুলোর বলতে পারে তখন হাসুন বা হাততালি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জিনিসটি সম্পর্কে তাকে আরো কিছু বলুন। যেমনঃ “তুমি কুকুর দেখছো। এটি অনেক বড়! তার লেজ নাড়ানোটা শুধু একবার দেখই না কতটা সুন্দর।”

৪। ‘আপনার শিশু কোন বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলতে চায়’ সে সম্পর্কে তার সাথে কথা বলুন। পুরো বিষয়টি একেবারে বলে তার জানার কৌতুহল নষ্ট করে দিবেন না। বরং একটু সময় নিয়ে অল্প অল্প করে তাকে জানান।

৫। আপনি প্রতিদিন যে কাজগুলি করেন সেগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন এভাবে- “তুমি আজকে কোন রঙয়ের শার্ট পড়েছ, জান?” তুমি আজকে লাল কালারের শার্ট পড়েছ। “তোমার কি দুধ বা জুস প্রয়োজন আছে?”

৬। আপনার বাচ্চা যা বলে তার উপর ভিত্তি করে আরো কিছু শেখান। যদি সে “বল” বলে, তাহলে আপনি বলতে পারেন, “এটি হলো তোমার বড়, লাল বল।”

৭। আপনার সন্তানের পছন্দসই পুতুল বা খেলনা প্রাণীর সাথে খেলার ভান করান। এটি আপনার কথোপকথন এবং আপনার খেলায় অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমনঃ “রোভারও খেলতে চায়। সে কি আমাদের সাথে বলটি গড়িয়ে নিতে পারবে? ”

কথা বলার সময় অবশ্যই কোমল ভাবে বাবা/মা সম্বোধন করে বলুন। তার কাছ থেকে প্রশ্ন করুন, মতামত দিন। সে যেন বুঝতে পারে যে তাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেখবেন এমনিতেই সে আগ্রহ নিয়ে কথা বলবে।

আর তার কোন প্রশ্নের মনগড়া বা উল্টাপাল্টা জবাব দিবেন না, যেটা সত্য সেটাই বলুন, যদি আপনার সন্তানকে সত্যবাদী বানাতে চান। কারণ সে যখন দেখবে তার বাবা মা মিথ্যা কথা বলে তখন সেও মিথ্যা বলতে চাইবে।

১৫ থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুর কথা বলা

আপনার শিশু আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য আরও জটিল অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করবে এবং তার শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে থাকবে। সে আপনার হাত ধরবে, আপনাকে বইয়ের শেলফের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তখন কোনও বইয়ের দিকে ইঙ্গিত করুন এবং “বুক” শব্দটি বলতে পারেন। এরপর বলুন “আমি তোমার সাথে একটি বই পড়তে চাই।” আপনি আপনার সন্তানকে আপনার সাথে কথা বলতে সহায়তা করতে পারেন এভাবে-

১। তাকে বলুন “আমাকে তোমার নাক দেখাও।” তারপরে আপনার নাকের দিকে ইশারা করুন। এতে করে সে শীঘ্রই তার নাকের দিকে ইঙ্গিত করবে। পায়ের আঙ্গুল, হাতের আঙুল, কান, চোখ, হাঁটু এবং আরও কিছু দিয়ে এটি করুন। দেখবেন, আপনার বাচ্চা খুব দ্রুত এগুলো চিনবে এবং বলতে শিখবে।

২। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেলনা লুকিয়ে রাখুন। এরপর তাকে খেলনাটি খুঁজে পেতে এবং তার আনন্দ ভাগ করে নেওয়াতে সহায়তা করুন।

৩। যখন সে আপনাকে কিছু নির্দেশ করে বা আপনাকে কিছু দেয়, তখন তার সাথে ঐ বস্তুর বিষয়ে কথা বলুন। “তুমি আমাকে বইটি দিয়েছ। ধন্যবাদ!

এভাবে বাচ্চাকে উৎসাহ ও পুরষ্কার দিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। তাকে গালাগাল বা ধমক না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। আপনি শুধু আপনার সন্তানকে কথা বলা শেখাচ্ছেন না বরং তাকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরী করছেন এটা ভেবে সে হিসেবে কাজ করুন। শিশুদের কথা শেখানোর উপায় গুলোর মধ্যে এটি খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি।

১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়সের বাচ্চার কথা বলা

আপনার বাচ্চা দিকনির্দেশগুলি অনুসরণ করতে সক্ষম হবে এবং একসাথে শব্দ বলতে সক্ষম হবে। যেমনঃ ‘গাড়ি যায়’, ‘জুস চাই’ এর মতো শব্দগুলি একসাথে বলতে শুরু করবে। সে ভাষার বিকাশকে উত্সাহিত করে এমন ভান করা খেলাও খেলতে শুরু করবে। আপনি আপনার সন্তানের কথা বলার দক্ষতা জাগাতে পারেন এভাবে-

১। আপনার শিশুকে আপনাকে সহায়তা করতে বলুন। উদাহরণস্বরূপ, তাকে কাপটি টেবিলের উপরে রাখতে বা তার জুতো আপনার কাছে আনতে বলুন।

২। আপনার শিশুকে সাধারণ গান এবং নার্সারি ছড়া শিখিয়ে দিন। আপনার সন্তানের কাছে পড়ুন। সে কী দেখছে তা আপনাকে নির্দেশ করতে এবং বলতে বলুন।

৩। আপনার সন্তানকে বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। সে তাদের একটি নতুন খেলনা সম্পর্কে বলতে পারেন।

৪। আপনার সন্তানকে খেলার ভান করা শেখান। এর জন্য আপনি একটি প্লে ফোনে কথা বলতে পারেন, পুতুলগুলিকে খাওয়াতে পারেন বা খেলনা পশুদের সাথে পার্টি করতে পারেন।

তবে এ বয়সে বাচ্চা কথা একেবারে বলতে না পারাটা কিছুটা চিন্তার। আপনি এসব চেষ্টা করেও যদি ফল না হয় তবে ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। শিশুর দেরিতে কথা বলা অবশ্যই একটি চিন্তার বিষয়, তাই হেয়ালি করবেন না।

২ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুর কথা শেখা

আপনার সন্তানের ভাষার দক্ষতাগুলো খুব দ্রুত ও সীমাবদ্ধ হয়ে বৃদ্ধি পাবে। সে আরও সহজ শব্দগুলির দ্বারা একসাথে সরল বাক্য তৈরি করবে। যেমনঃ “ম্যামি বাই বাই বাই”। সে সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। যেমনঃ “তোমার ভালুকটি কোথায়?”

৩৬ মাসের মধ্যে সে আরও জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। যেমনঃ “ক্ষুধার্ত হলে তুমি কী করবে?” এসময় সে আরও বেশি করে খেলার ভান করবে। যেমনঃ কাজ করতে যাওয়া, খেলনা গাড়ি ঠিক করা, তাঁর “পরিবারের” (পুতুল, প্রাণীর) যত্ন নেওয়ার মতো কাল্পনিক দৃশ্যের অভিনয় করবে।

আপনি আপনার বাচ্চাকে তার সমস্ত নতুন শব্দ একসাথে বলতে এবং তাকে এমন জিনিস শিখতে সাহায্য করতে পারেন যা জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণঃ

আপনার বাচ্চার নাম বা প্রথম এবং শেষ নাম বলতে শেখান। আপনার শিশুকে তার সামনে প্রদর্শিত জিনিসগুলির সংখ্যা, আকার এবং গঠন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। “হ্যাঁ” বা “না” উত্তর নেই এমন মুক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। এটি তাদের নিজস্ব ধারণা তৈরি করতে এবং তাদের প্রকাশ করতে শিখতে সহায়তা করে। যদি এটি কীটপতঙ্গ হয় তবে আপনি বলতে পারেনঃ “কী মোটা, কৃপণ! তারা কয়জন আছে?

তারা কোথায় যাচ্ছে? অপেক্ষা করুন, দেখুন এবং উত্তরটি শুনুন। প্রয়োজনে আপনি একটি উত্তর প্রস্তাব করতে পারেনঃ “আমি পাঁচটি দেখতে পাচ্ছি। তারা কি পার্কে বা দোকানে যাচ্ছেন?” আপনার সন্তানকে এমন গল্প বলতে বলুন যা তার প্রিয় বইয়ের সাথে যায়। “এই তিনটি হাতির কী হল?” পড়াশোনার ফলে ভাষার বিকাশ হয়। আপনার স্থানীয় লাইব্রেরিতে গল্পের সময় তাকে নিয়ে যান।

আপনার ছোট বাচ্চা আপনার সাথে বইটি সমবয়সীদের পাশাপাশি উপভোগ করবে। প্রচুর খেলার ভান করা খেলুন। গল্পগুলি অভিনয় করা এবং ভূমিকা পালন করাই ভাষা ব্যবহার এবং শেখার জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি করে। আগে যা কাজ করেছে তা ভুলে যাবেন না।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার সন্তানের এখনও বিশ্রামের সময় প্রয়োজন। তবে মনে রাখবেন, এটি কেবল ন্যাপের (দুপুর বেলার স্বল্প ঘুম) জন্য নয়। টিভি এবং রেডিও বন্ধ করুন। আপনার সন্তানকে শান্তভাবে খেলতে, গান করতে এবং আপনার সাথে কথা বলতে উপভোগ করুন।

উপসংহার

শিশুর কথা বলার সমস্যা বেশিরভাগ সময় স্বাভাবিক কোন সাধারণ সমস্যার জন্য হয়। আপনি যদি বয়সভেদে উপরের বিষয়গুলো করার চেষ্টা করেন তাহলে আশা করি আপনার শিশু কথা বলবে।

তারপরেও কিছু বড় ও জন্মগত সমস্যা থাকে যেগুলো ডাক্তার ঠিক করতে পারে আবার কখনই ঠিক হয় না। বাচ্চাদের স্পিচ থেরাপি কিছু ট্রিটমেন্ট আছে যা বেশ কার্যকর। তবে আপনার সন্তান কথা যদি নাও বলতে পারে তবু চিন্তিত হবেন না, সঠিক শিক্ষা ও স্বাভাবিক বাচ্চার মত তাকেও সুযোগ করে দিন, দেখবেন সে পৃথিবী জয় করবে।

আশা করি, আপনাদের কাজে লাগবে বিষয়গুলো। আপনার শিশু স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন পাক এই কামনা করি। আমাদের সাথেই থাকবেন, আপনার বিভিন্ন প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করতে পারেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করব আপানকে উত্তর দেয়ার। ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে অন্য মায়ের বাচ্চা কথা বলার সমস্যা থেকে মুক্তি পায়। ভালো থাকুন, পরিবার ও সন্তানকে সময় দিন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

স্পিচ থেরাপি কি?

স্পিচ থেরাপি হচ্ছে এক ধরনের বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা। যার সাহায্যে কথা বলতে না পারা অথবা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না এমন রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। সাধারণত তোতলামি, শিশুদের দেরিতে কথা বলা, কানে কম শোনাজনিত কথা বলার সমস্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, তাদের প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ করে দেয় স্পিচ থেরাপি।
দাঁত, জিহ্বা, তালু, ভোকালকর্ড ইত্যাদি অঙ্গের মিলনে আমরা কথা বলি। এর যে কোনোটির সামান্য সমস্যা হলে স্বাভাবিক কথা বলা সম্ভব হয় না। স্পিচ থেরাপিস্টরা তাই বাকপ্রতিবন্ধীদের কিছু কায়দা-কানুন শিখিয়ে দেন ও চর্চা করান। প্রয়োজনে তারা অপারেশনের সহায়তা নেন।


শিশুর দেরিতে কথা বলা সমস্যা বুঝব কিভাবে?

শিশু প্রথম বছর একটি শব্দ, দ্বিতীয় বছর দুটি শব্দ এবং তৃতীয় বছর পুরো বাক্য বলতে পারবে। এর ব্যতিক্রম হওয়া মানেই শিশু কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। শিশু বড় হলে সমস্যাটি ঠিক হয়ে যাবে এমন ভাবনা ঠিক নয়।


শিশুর দেরীতে কথা বলার কারণ কি?

শিশুর বংশগত কারণ, মস্তিষ্কের জন্মগত সমস্যা, প্রসবকালীন জটিলতা, জিহ্বার ত্রুটি, বাচ্চার মানসিক প্রতিবন্ধকতা, বাচ্চার সামনে ঝগড়া করলে বা অত্যধিক উচ্চস্বরে কথা বললে নার্ভাসনেসের কারণে তাদের কথা জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।


জিহ্বা আটকানো বা টাং টাই কি?

কোনো বাচ্চার ক্ষেত্রে জিহ্বা সামনের দিকে টাইয়ের মতো পাতলা মাংস দিয়ে মুখ গহ্বরের সঙ্গে লেগে থাকে। ফলে জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করে না। এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় টাং টাই। টাই স্মার্টনেসের প্রতীক হলেও জিহ্বার টাই মোটেও সুখকর নয়। এ ধরনের সমস্যা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে।


কিভাবে তোতলা ভালো হয়?

তোতলামি সমস্যা সব দেশেই সব বংশের বাচ্চাদের আছে। তবে এ ধরনের রোগীদের জন্য সরাসরি চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তোতলামির সঠিক কারণ না থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় অতিরিক্ত টেনশন, কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হওয়া, দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি কারণে অনেকে তোতলায়। অনেক সময় স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তায় ৫-৬ মাসে এ ধরনের বাচ্চারা প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠে। মুখে কথা আটকে যাওয়ার সমাধান হয়ে যায়।


উচ্চারণগত সমস্যা কেন হয়? সমাধান কি?

অনেক শিশু আছে যারা বাংলা বর্ণমালাগুলো শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারে না। যেমন ‘ত’ কে সর্বদা ‘প’ উচ্চারণ করা, ‘ল’ কে ‘ড’ উচ্চারণ করা ইত্যাদি। এসব শিশু স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তায় খুব দ্রুত স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে। অথবা বাবা-মা চেষ্টা করে এটি ঠিক করতে পারে। উপরে বলা বিষয়গুলো করার চেষ্টা করুন আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।


ঠোঁট বা তালু কাটাজনিত কথা বলার সমস্যা সমাধান কি?

আজকাল প্লাস্টিক সার্জারির কল্যাণে ঠোঁট কাটা বা তালু কাটা রোগীরা স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় অপারেশন পরবর্তী সময়ে কথা বলতে গেলে, কেননা ঠোঁট বা তালু কাটা থাকার কারণে তারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে অভ্যস্ত থাকে না। স্পিচ থেরাপিস্টদের সহায়তা নিলে বা বাবা মা নিয়ম মত জেনে সেভাবে চেষ্টা করলে এ ধরনের সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়।


বাচ্চার কম শোনাজনিত সমস্যার সমাধান কি?

বাচ্চার কম কথা বলার আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে কথা ঠিকমত না শোনার কারণে বা কানের সমস্যা থাকলে। হেয়ারিং এইডসের (কানে শোনার যন্ত্র) মাধ্যমে অনেক বাচ্চার শোনার ব্যবস্থা করা গেলেও বিড়ম্বনা দেখা দেয় কথা বলার ক্ষেত্রে। স্পিচ থেরাপিস্টরা সহজেই এ ধরনের সমস্যা দূর করতে পারেন। এছাড়াও কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, ফ্যাঁসফ্যাঁসে কথা বলা, নাকি সুরে কথা বলা ইত্যাদি সমস্যা দূরীকরণে স্পিচ থেরাপিস্টদের জুড়ি নেই।

Note: Some information was adapted, with permission, from Learning Link: Helping Your Baby Learn to Talk, by C.E. Morrisset Huebner and P. Lines, 1994, Washington, DC: U.S. Department of Education, Office of Educational Research and Improvement.)