শিশুর জেদ – জেদী বা বদমেজাজী বাচ্চাদের সাথে আচরণ এবং পরিবর্তনের উপায়

শিশুর জেদ – জেদী বা বদমেজাজী বাচ্চাদের সাথে আচরণ এবং পরিবর্তনের উপায় – জেদি অর্থাৎ একগুঁয়ে বাচ্চাদের আচরণ বাবা মায়ের কাছে একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কারণ তাদের গোসল করা, খাবার খাওয়া বা বিছানায় যাওয়ার মতো সাধারণ টুকিটাকি কাজগুলো করতে প্রতিদিন রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। পিতামাতারা সাধারণত অসাবধানতাবসত নিজের অজান্তেই বাচ্চাদের মধ্যে জেদি আচরণকে উত্সাহিত করে।

একগুঁয়ে বা জেদি বাচ্চার জেদ পরিত্রাণের সবচেয়ে ভাল উপায় হ’ল তাদের এটা দেখানো যে তাদের অস্বাভাবিক আচরণ কোনো কাজের নয়।

বাচ্চাকে জেদ মুক্ত করার জন্য তাদের ভাল আচরণগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন। শিশুর যত্ন কয়েকটি টিপস তালিকাভুক্ত করেছে যা জেদী সন্তানের সাথে ডিল করতে সহায়তা করতে পারে।

একগুঁয়ে বা জেদি সন্তানের বৈশিষ্ট্য

স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী চলাফেরা করা শিশুগুলো সাধারণত জেদী হয় না। শিশু যদি জেদী বা একগুঁয়ে হয়ে থাকে তবে সে কোনো জটিল পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন বাচ্চারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং সৃজনশীল হতে পারে। তারা প্রচুর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে।

এমনকি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আপনি ক্লান্তও হয়ে যেতে পারেন। তারা নিজ এবং অপরের মতামত থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যদিকে, একগুঁয়ে বাচ্চারা তাদের নিজের মতামতকে আঁকড়ে ধরে এবং আপনি যা বলবেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত হবে না।

একগুঁয়ে বাচ্চাদের আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এখানে-

  • জেদী বাচ্চারা তাদের নিজস্ব মনোভাবগুলো অন্যের উপর খাটাতে চেষ্টা করে। তাই তারা আপনার উপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।
  • তারা মারাত্মকভাবে স্বাধীন হতে পারে।
  • প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা যা পছন্দ করে তা করতে বাধ্য থাকে।
  • তারা সাধারণত বিচক্ষণ হয়ে থাকে।

জেদী শিশুদের ম্যানেজ করা হয়তো কষ্টসাধ্য হতে পারে কিন্তু এটা খারাপ কিছু নয়।

শিশুরা যেসব কারণে একগুঁয়ে বা জেদি স্বভাবের হয়ে থাকে

  • বিষণ্ণতা, ক্লান্তি, ক্ষুধা, একঘেয়েমি ও অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে
  • পরিস্থিতির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে
  • স্বাধীনভাবে ইচ্ছেমত কিছু করতে না পারার কারণে
  • অনুভূতি প্রকাশের অযোগ্যতার কারণে

জেদী বাচ্চাদের কন্ট্রোল আনতে সহায়তা করতে পারে এমন কিছু টিপস নিম্নরুপ

আপনার কাছেও একগুঁয়ে বা জেদী বাচ্চা থাকতে পারে। যাকে আপনি সব সময় বন্দী করে রাখতে চান। যাতে সে কোনো ক্ষতি না করে। কিন্তু প্রতিবারই আপনি ব্যর্থ হয়ে যান। হয়তোবা, প্রতিবার খাওয়ানোর সময় আপনাকে রীতিমত তার সাথে যুদ্ধ করতে হয়।

অথবা ছয় বছর বয়সী সন্তানটি আপনার প্রতিটি কথা অস্বীকার করতে প্রস্তুত। এখন আপনি ভাবছেন, এমন বাচ্চার সাথে কি করে পারা যায়? কেমন জানি একটা টেনশন মাথার মধ্যে কাজ করছে আপনার। সন্তানের একগুঁয়ে প্রকৃতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য নিচের কয়েকটি টিপস আপনার জন্য কার্যকর হতে

শুনতে চেষ্টা করুন

যোগাযোগ একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। যদি আপনি চান যে সন্তান আপনার কথা শুনুক, তবে আপনাকে প্রথমে তার কথাগুলি শুনতে রাজি থাকতে হবে। কোনো কোনো বিষয়ে জেদী শিশুদের কড়া মতামত থাকতে পারে এবং তর্ক করার ঝোঁক থাকতে পারে।

যদি তারা মনে করে যে তাদের কথায় কান দেওয়া হচ্ছে না, তবে তারা আপত্তিজনক হয়ে উঠতে পারে। অনেকক্ষেত্রে, যখন আপনার শিশু কিছু করার বা না করার বিষয়ে জোর দেয়, তখন তাদের কথা শুনতে হবে। কেন তারা বিরক্ত প্রকাশ করছে – এজন্য তাদের সাথে একটি মুক্ত কথোপকথন করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার শিশু যদি দুপুরের খাবার খেতে কোনো ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করে, তবে তাকে জোর করে খাওয়াবেন না। পরিবর্তে, তাদের জিজ্ঞাসা করুন – কেন তারা খেতে চায় না বা ক্ষোভের কারণ কি? এটি হতে পারে তাদের খেলাধুলার কারণে বা পেটে ব্যথার কারণে।

যদি চান যে আপনার পাঁচ বছরের জেদী বাচ্চাটি আপনার কথা শুনুক, তবে তার সাথে শান্তভাবে এবং ব্যবহারিকভাবে চলার চেষ্টা করুন। মাথা গরম করে নয়। নতুবা আপনি আমি সবাই জানি, ‘ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়।’ তাই প্রথমে তার কথাগুলো শুনুন এবং পরে নিজের অভিমত ব্যক্ত করুন।

সংযুক্ত হোন, জোর করবেন না

জেদী বা একগুঁয়ে বাচ্চাদের যখন কোনও কিছুর জন্য জোর করা হয়, তখন তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এতে যা করা উচিত নয় সেগুলি করে বসে। এই ধরনের আচরণকে কাউন্টারউইল বলা হয়। যা জেদি শিশুদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কাউন্টারউইল স্বতঃস্ফূর্ত এবং এটি কেবল শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাই আপনার বাচ্চাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনার ছয় বছরের বাচ্চাটি যে তার শোবার সময় টিভি দেখার জন্য জোর দিয়েছিল, আর আপনি তাকে নিষেধ করছেন। এক্ষেত্রে আপনার মতমত কোনো কাজে আসবে না। বরং তাদের উপর জোর খাটানোর পরিবর্তে, তাদের সাথে বসুন এবং তারা কী দেখছেন তাতে আগ্রহ দেখান। আপনি যখন তাদের প্রতি যত্নশীল হোন, তখন বাচ্চারা সম্ভবত প্রতিক্রিয়া জানায়।

যে সমস্ত শিশুরা তাদের বাবা-মা বা যত্নশীলদের সাথে সংযুক্ত থাকে তারা সহযোগিতা করতে চায়। “একগুঁয়ে বা জেদী শিশুদের সাথে একটি অদম্য সংযোগ স্থাপন তাদের সাথে আচরণ করা সহজ করে তোলে,” সুসান স্টিফেলম্যান তাঁর “প্যারেন্টিং উইথআউট পাওয়ার স্ট্রাগলস” বইয়ে একথা বলেছেন।

সন্তানের সাথে সংযোগের সেই প্রথম পদক্ষেপটি আজই নিন – তাদের বুকে জড়িয়ে ধরুন!

অপশন দিন

একগুঁয়ে বাচ্চাদের নিজস্ব মতামত থাকতে পারে এবং সবসময় কী করা উচিত তা বলা পছন্দ করে না। আপনার চার বছরের একগুঁয়ে বাচ্চাটিকে বলুন যে তাকে রাত ৯ টার মধ্যে বিছানায় থাকতে হবে, এবং আপনি তার কাছ থেকে যা পাবেন তা হ’ল “না!”!

পাঁচ বছরের জেদী বাচ্চাটিকে বলুন যে আপনি পছন্দ করেছেন এমন খেলনা কিনতে এবং তারা তা চাইবে না। আপনার বাচ্চাদের দিকনির্দেশ না দিয়ে অপশন দিন। তাদের বিছানায় যেতে বলার পরিবর্তে তাদের জিজ্ঞাসা করুন যে তারা শোবার সময় গল্প পড়তে চান কিনা! অপশন A (পড়তে চায়), অপশন B (পড়তে চায় না)।

এখন আপনার সন্তান যদি জেদী হয় তাহলে সে বলতে পারে ‘আমি এখনই বিছানায় যাচ্ছি না।’ যখন এমনটি ঘটে তখন নিজেকে শান্ত রাখুন এবং নম্র কণ্ঠে বলুন ‘এটি কিন্তু অপশন দুটির মধ্যে ছিল না।’ যখনি প্রয়োজন পড়বে তখনি আপনি এ সূত্রটি রিপিট করতে পারেন যতটা শান্তভাবে পারা যায়। যখন আপনি তার সামনে বার বার এমনটি করেন তখন সে যে কোনো একটি অপশন সহাজতভাবেই গ্রহণ করবে।

পক্ষান্তরে, শিশুদের সামনে কখনোই অনেকগুলি অপশন দেওয়া উচিত নয়। এতে তারা বিভ্রান্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কাপড়ের দোকানে গিয়ে আপনার সন্তানকে অনেকগুলো পোশাক থেকে একটি পোশাক বেছে নিতে বললে সে অবশ্যই বিভ্রান্ত হবে। বরং আপনার বাছাই করা দুটি বা তিনটি পোশাক থেকে তাকে পছন্দ করতে বলুন। এতে আপনি সহজেই এই সমস্যাটি থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

শান্ত থাকুন

ও এখনো ছোট মানুষ, ও তো জেদ করবেই কিংবা বাচ্চারাতো সাধারণত জেদ করেই থাকে এই ধরনের মন্তব্য না করাই শ্রেয়। অর্থাৎ সন্তানের জেদ নিয়ে বাবা মায়ের মতের ভিন্নতা কোনোমতেই থাকা যাবে না। আর যদি হয়েও থাকে তাহলে তা বাচ্চাদের সামনে কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়।

কোনো কারণে যদি বাচ্চা খুব জেদি হয়ে ওঠে বা হঠাৎ করেই রেগে যায় আর তারপর চিৎকার চেঁচামেচি করে তাহলে আপনিও বাচ্চার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে তাকে থামাতে যাবেন না। রেগে যাওয়া শিশুদের সাথে আপনিও যদি সমপরিমাণ রাগ করেন তাহলে ব্যাপারটি আগুনে ঘি ঢালার মত হয়ে যায়।

অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়ির বড়রা বাচ্চাদের জেদের অভিব্যক্তি মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা স্নেহবশত ঐ শিশুটির সব দাবী মেনে নেন। মনে রাখবেন, এটা একেবারেই চরম একটি ভুল। কেননা, বাচ্চারা সহজেই পরিবারের দুর্বল পয়েন্ট বুঝতে পারে।

কর্মরত মায়েরা সাধারণত মনে করেন যে তারা হয়তোবা বাচ্চাদের অযত্ন করছেন। এটা তাদের মনে একটি বড় অপরাধবোধ সৃষ্টি করে। যার জন্য তারা বাড়ি ফেরার পথে প্রতিনিয়ত সন্তানদের জন্য চিপস, চকোলেট বা নানা ধরনের খেলনা নিয়ে যান। এতে স্বভাবতই বাচ্চার মনে চাহিদার মাত্রা বেড়ে যায়। এই ধরনের ‘প্যারেন্টিং ব্রাইবিং’ বাচ্চাদের জেদী বা একগুঁয়ে হওয়ার অন্যতম কারণ।

হয়তোবা ভাবছেন, তাহলে এর প্রতিকার কী? তাহলে শুনুন – বাচ্চাকে এটা কৌশলে সহজভাবে বোঝান যে আপনার কাজ করাটা প্রয়োজন। বাচ্চার যাতে চাহিদা না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন যতটা সম্ভব। দেখবেন ও সহজভাবেই বড় হচ্ছে। আপনার যদি কখনো বাড়ি ফিরতে দেরি হয় তাহলে কখনোই তার জন্য চকোলেট বা খেলনা আনার প্রয়োজন নেই।

বরং ফেরার পথে ওকে ফোন দিয়ে প্লান করুন, আজ রাতে আপনি কোন গল্পটা তাকে শোনাবেন। এতে কি ঘটবে জানেন? দেখবেন, ওর জেদ একেবারেই উধাও হয়ে যাবে এবং সে অধীর আগ্রহে আপনার বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষায় থাকবে।

সত্যিই যদি আপনার বাচ্চা একগুঁয়ে বা জেদী হয়ে থাকে তাহলে ঐ পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাকে এটা বলতে দিন যে সে কী বোঝাতে চাচ্ছে? আপনিও এটা বোঝার চেষ্টা করুন তার কথার আসল উদ্দেশ্য কী?

যখন বাচ্চা কিছুটা স্থির হবে অর্থাৎ যখন তার জেদ কিছুটা কমবে, তখন তাকে কাছে টেনে নিয়ে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন। আপনার কাজ হচ্ছে বাচ্চাকে শান্ত করা তাকে আরো রাগিয়ে তোলা নয়। তাই তখনই তাকে কিছু বোঝাতে সক্ষম হবেন যখন আপনি শান্ত থাকবেন।

যাইহোক, যদি নিজেকে শান্ত রাখা আপনার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে শান্ত থাকার জন্য যা লাগে তা করুন – ধ্যান করুন, অনুশীলন করুন বা গান শুনুন। বাড়িতে শান্ত বা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সঙ্গীত শুনুন যাতে আপনার বাচ্চারাও শুনতে পারে। মাঝে মাঝে আপনার সন্তানের প্রিয় সংগীত বাজান। এইভাবে, আপনি তাদের ‘ভোট’ অর্জন করতে পারেন এবং তাকেও শান্ত রাখার পাশাপাশি একগুঁয়ে বা জেদী হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।

জেদ যখন কমে এসে বাচ্চা শান্ত হয়ে যায় সেই সময়টা পেরেন্টিং এর জন্য উত্তম সময়। আর সেই সময়টাতেই বাচ্চাকে বোঝাতে হবে যে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে আবার ওরকম করে তাহলে পরিবারের কেউ তার সাথে কোনো কথা বলবে না। যদি তার কোনো নিজস্ব চাহিদা থেকে থাকে তবে তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে। আর এইভাবেই তার মধ্যে সেলফ কন্ট্রোল তৈরি হবে।

শ্রদ্ধা করুন, সম্মান দিন

সাধারণত একগুঁয়ে বা জেদি ছেলেমেয়েদের উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করলে তারা তা গ্রহণ করে না। তাই তাদের সাথে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেন। এমন কয়েকটি উপায় এখানেঃ

  • তাদের কাছে সহযোগিতা চান; তবে আপনার নির্দেশ অমান্য করলে তা পালনের জন্য তাদের উপর জোর করবেন না।
  • আপনার সকল সন্তানের জন্য একই নিয়ম রাখুন। তবে কখনোই কারো উপর শিথিলতা প্রকাশ করবেন না। কারণ আপনি জানেন এটাই তাদের জন্য উপযুক্ত।
  • তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। তাদের অনুভূতি বা ধারণাগুলোকে কখনই বরখাস্ত করবেন না।
  • বাচ্চারা নিজের জন্য যা করতে পারে তা করতে দিন। তবে এটা মনে রাখবেন, বোঝা হ্রাস করার জন্য লোভ দেখিয়ে তাদের কিছু করতে বলবেন না। বরং তার চেষ্টাটাকে স্বাদুবাধ জানান। এটি তাদেরকে বলে দেয় যে আপনি তার প্রতি আস্থা রেখেছেন।
  • আপনি যা বলতে চান তা বলুন এবং আপনি যা বলেছেন তা করুন।

‘ইউ আর নট দ্যা বস অফ মি’ এর লেখক বেস্টি ব্রাউন ব্রুন এর মতে আপনার বাচ্চারা সব সময় আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

একসাথে কাজ করুন

একগুঁয়ে বা জেদি শিশুদের সাথে আপনি কিভাবে আচরণ করছেন সে সম্পর্কে তারা অত্যন্ত সংবেদনশীল। সুতরাং আপনি যে সুর, দেহের ভাষা এবং শব্দভান্ডারগুলি ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে সচেতন হন। তারা যখন আপনার আচরণে অস্বস্তি বোধ করে, তখন তারা নিজেরাই সুরক্ষার জন্য যা ভাল জানে তা করেঃ তারা বিদ্রোহী, টকব্যাক এবং আগ্রাসন প্রদর্শন করে।

  • আপনি যদি জেদি বাচ্চাদের কাছে যাওয়ার উপায় পরিবর্তন করেন তবে তারাও আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করবে তার পরিবর্তন ঘটাবে। কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত নয় – এটা বলার থেকে তাদের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে যান।
  • ‘আমি এটা করতে চাই’ এটা না বলে বলুন যে ‘চলো আমরা এটা করি”, “আমরা কিভাবে চেষ্টা করব” এ রকম মন্তব্য ব্যবহার করুন।
  • বাচ্চাদের কোনো কাজ শেখানোর জন্য মজাদার কিছু ট্রিকস ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সন্তানের কাছ থেকে তার খেলনাগুলো দূরে সরিয়ে রাখতে চান তবে প্রথমে নিজেই এটি শুরু করুন। আর তাকে বলুন আপনার “বিশেষ সহায়ক” হতে।
  • কৌশলগুলো তাকে শেখানোর পেছনে আপনাকে একটু সময় ব্যয় করতে হবে। তার সাথে চ্যালেঞ্জ করুন খেলনাগুলোকে আপনার চেয়ে দ্রুত গতিতে দূরে সরিয়ে রাখতে। এটি একটি গোপন কৌশল যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর।

আগে থেকেই প্লান করে রাখুন

কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি বেশি সময় লাগে আর সে সময় বাচ্চা যাতে ক্ষুধার্ত বা খুব বেশি ক্লান্ত না হয়ে পরে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ধরুন, আপনাকে কোনো এক কাজে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হবে তাহলে শিশুটিকে ব্যস্ত রাখার জন্য সংগে কিছু খেলনা বা তার পছন্দনীয় সামান্য খাবার নিতে পারেন।

বাচ্চার মানসিক শক্তি বাড়ান

সন্তানকে শেখান কিভাবে কঠিন অনুভুতিগুলোকে সহজে প্রকাশ করতে হয়, সে সম্পর্কে তাকে উৎসাহিত করুন। কেননা, যত সে নিজের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে পারবে, তার মধ্যে তত রাগ, ক্ষোভ ও ক্রোধ এই ধরনের অনুভূতিগুলোর সঞ্চালন কমতে থাকবে।

শিশুদের রাগ, অভিমান ও অন্যান্য অনুভূতিগুলো নিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের এটা বোঝান, প্রত্যেকটি অনুভূতি একটি অপরটির থেকে আলাদা।

চিৎকার করে বাচ্চাকে থামাবেন না

ধরুন, আপনার আদরের বাবুটা হঠাৎ পরে গিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। এবার আপনি রেগে গিয়ে আসলেন তাকে থামানোর জন্য। কিন্তু আপনিও এসে চিৎকার শুরু করে দিলেন।

এতে কি হলো? আপনার বাবুটা ভয় পেয়ে আরো জোরে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিল। ব্যস, শান্তি প্রতিষ্ঠার জায়গায় অশান্তি বেড়ে গেল। তাই ভুল করে কখনোই সন্তানদের চিৎকার করে থামানোর চেষ্টা করবেন না।

আলোচনা করুন

কখনো কখনো আপনার বাচ্চাদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন। যখন তারা যা চায় তা পাচ্ছে না তখন তাদের বিরূপ আচরণ করাটা সাধারণ। যদি চান তারা আপনার কথা শুনুক, তাহলে আপনাকে জানতে হবে ঐগুলো করতে তাদের কী থামাচ্ছে?

  • তাকে কিছু প্রশ্ন জিঙ্গাসা করুন , যেমনঃ ‘তাকে কী বিরক্ত করছে?’, ‘তার রাগের কারণ কী’ বা তুমি কিছু চাও কিনা!’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন। এটি তাদের জানায় যে আপনি তাদের ইচ্ছাগুলোকে সম্মান করেন এবং সেগুলি বিবেচনা করতে রাজি।
  • আলোচনার অর্থ এই নয় যে আপনি সর্বদা তাদের দাবি মেনে নিবেন। এগুলি সমস্ত বিবেচ্য এবং ব্যবহারিক হওয়া সম্পর্কে।
  • উদাহরণস্বরূপ, আপনার শিশু একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে রাজি নাও হতে পারে। তার সাথে জেদ করার পরিবর্তে একটি শয়নকালীন সময় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করুন; যা আপনার দুজনের পক্ষে উপযুক্ত।

ব্যস্ত রাখুন, সময় দিন

কথায় আছে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট।’ ক্ষুধা, ক্লান্তি, একঘেয়েমি, বিষন্নতা ও অতিরিক্ত উত্তেজনা শিশুদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য। তবে আপনি যদি সন্তানের যে কোনো প্রয়োজন যথাসময়ে পূরণ করেন তাহলে এ বৈশিষ্ট্যগুলো কখনোই তাদের মাঝে সঞ্চার করবে না। এমন কোনো রুটিন সেট করবেন না যা বাচ্চার জন্য মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।

ঘুমানোর পূর্ব মহুর্তে কোনো উত্তেজনাকর খেলাধুলা থেকে তাদের বিরত রাখুন। কেননা, ঐসময়ে দৌড়ঝাপ করা, অতিরিক্ত দুষ্টুমি, খিলখিল করে হাসা – এরকম খেলাধুলা করলে বাচ্চারা বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা সহজেই বিছানায় যেতে চায় না। তাই এগুলোর পরিবর্তে তাদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প শোনাতে পারেন।

শিশুকে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন

শিশুকে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। এতে যেমন তার উপকার হবে তেমনি সে দায়িত্ববানও হয়ে উঠবে। সবকিছুর জন্য শিশুকে না বলা থেকে দূরে থাকুন। শিশুকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখানোর জন্য তাকে নিজের সম্পর্কে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দিন।

উদাহরণস্বরূপ, তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘তুমি কি লাল জুতোটা পরবে নাকি নীল জুতোটা পরবে?’ অথবা খাওয়ার সময় তাকে জিঙ্গেস করতে পারেন, ‘তুমি কি এখন ডিম দিয়ে ভাত খাবে নাকি সবজি দিয়ে? এভাবে তাকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে সাহায্য করুন।

ভিডিও, টিভি সিরিজ ও ভায়োলেন্ট গেম বন্ধ করুন

এদিক থেকে আপনার বাচ্চাকে নিজে নিজেই জেদি বানাচ্ছেন। ধরুন, আপনি কোনো এক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তাই বাবুটাকে বললেন তুমি টিভিতে স্পাইডারম্যান সিরিজটা দেখ। অথবা মোবাইলে তোমার প্রিয় গেমসটি খেল। এভাবে আপনি প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকলেই তাকে এ ধরনের কাজ করতে বলেন।

অথবা দেখা গেল পরিবারের সবাই মিলে প্রতিনিয়ত আপনারা টিভিতে বিভিন্ন ধরনের সিরিয়াল কিংবা মুভি দেখেন। মনে রাখবেন, বাচ্চা কিন্তু এসবের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। টিভিতে সে যত স্পাইডারম্যান কিংবা মারামারির সিন দেখবে সেও সেরকম অভিনয় করবে। কিংবা পছন্দের সিরিয়াল না শেষ হওয়া পর্যন্ত বই পড়তে বসবে না। তাই এসব থেকে শিশুদের দূরে রাখাই শ্রেয়।

প্রশ্রয় না দেওয়া

বাবুটা আজ পাশের বাসার বেবিটাকে অথবা কোনো এক ক্লাস মেটকে খামচি দিয়েছে। আর আপনি চিন্তা করলেন অবুঝ বাচ্চা কিছু বোঝে না, ছোট মানুষ। কিন্তু এই বাচ্চাই দেখবেন এরপর খেলার পুতুল দিয়ে কারো না কারো মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে, তখনো কি বলবেন সে অবুঝ, কিছু বোঝে না।

মনে রাখবেন, এই ঘটনার জন্য কিন্তু আপনি সম্পূর্ণই দায়ী। যদি আপনি প্রথম দিনেই তাকে বোঝাতে সক্ষম হতেন যে এ বিষয়টি খুব খারাপ, যা আপনার একদম পছন্দ নয়। তাহলে পরের দিন আর এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আপনাকে দেখতে হতো না। সুতরাং তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রথম দিনেই সাবধান হওয়া ভালো।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল

আপনার বাবুকে এটা উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেন যে তার কোনো কাজে আপনিও ব্যথা পেতে পারেন, আপনিও কষ্ট পেতে পারেন। ধরুন, পাশের বাসার বাবুটা তাকে ‘গরু’ বলে ডাকে। আর এটা বলার পরপরই আপনার বাবুটাকে তাকে খামচি মারে। আর এভাবে বেশ কয়েকদিন খামচি মারার পর পাশের বাসার বাবুটা আর তাকে গাধা বলে না। কিন্তু সমস্যাটা এখানে নয়।

সমস্যা হল- পাশের বাসার বাবুটাকে দেখলেই আপনার বাবুটা এখন খামচি দিতে চায়, আর অন্য বাচ্চাদেরও। দিন দিন তার এ খামচির কাহিনী বেড়েই চলেছে। তাহলে এ অবস্থায় আপনি কি করবেন? আপনি তাকে এটা বোঝান যে সে যদি আর কাউকে খামচি মারে তাহলে আপনি তার সাথে আর কথা বলবেন না বা এরকম কিছু একটা। যাতে করে সে এটা বুঝতে পারে যে আপনি তার এ কাজের জন্য ব্যথা পেয়েছেন।

প্রশংসা করুন

শিশুর যে কোন ভালো কাজে প্রশংসা করুন। কেননা, সত্যিকারের প্রশংসা যে কোনো মানুষের মনে একটা পজিটিভ সাইট তৈরি করে। ধরুন, আপনার বাচ্চাটি একটা ছবি এঁকেছে। কিন্তু ছবিটিতে খুব সামান্য পরিমাণে ভুল আছে।

এক্ষেত্রে তার ভুলটি না ধরে তাকে এটা বলুন বাহ! খুব সুন্দর ছবি হয়েছে। আরো চেষ্টা করুন। আশা করি, পরবর্তীটা আরো ভাল করবে তুমি। আর যদি তার ভুলটি ধরিয়ে দিতে চান তাহলে সরাসরি না বলে প্রশংসা করার পর এটা বলুন, বাবু এটাকে দেখতো। এটা মনে হয় এদিক দিয়ে দিলে আরো একটু ভালো হবে। কি বল তুমি? দেখবেন, সে খুব সহজাতভাবেই আপনার কথা গ্রহণ করবে।

শেয়ার করা শেখান

ছেলেমেয়েকে কখনোই সামাজিক পরিবেশ থেকে ভিন্ন করে একা একা বড় করবেন না। এতে সে সমাজের অনেক কিছু থেকেই পিছিয়ে পড়বে। আপনার সন্তানকে যে কোনো জিনিস ভাগাভাগি করা শেখান। যেমন, আপনি একটি রুটি নিয়ে আসলেন। কিন্তু তার পাশে আরো একটি ছোট বাবু আছে। এক্ষেত্রে আপনি তাকে অর্ধেক রুটি দিয়ে আপনার শিশুর সামনে ভাগাভাগি করে খাওয়ার ব্যাপারটি তুলে ধরতে পারেন।

যে সমস্ত অভিভাবকের সন্তান একটি সাধারণত তাদের বাচ্চারা ‘শেয়ার বা ভাগাভাগি’ ব্যাপারটি কম বোঝে। কেননা, তাদের পরিবারে বাচ্চা বলতে সে একাই। তাই যখন আপনি তাকে কিছু দিবেন তখন তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য যে কোনো বাচ্চাকে অর্ধেক বা সেম জিনিসটাই দিবেন। এভাবে তারা নিজেদের একগুঁয়ে বা জেদি ভাবটাকে কমিয়ে নিতে পারবে।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সন্তানের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসেছে?

আপনার সুবিধার্থে বেশ কিছু লক্ষণ এখানে তুলে ধরা হলোঃ

  • কোনো কারণে রেগে গেলেই খারাপ ভাষা ব্যবহার করে।
  • ছোট ছোট কারণেই রেগে যায় এবং জিনিসপত্র ভাংচুর করে।
  • রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে খেলার সাথী বা ভাইবোনদের মারধর করে।
  • অন্য শিশুরা আপনার বাচ্চার সাথে খেলতে বা মিশতে চায় না।
  • তার মুখ থেকে প্রায়ই অন্য মানুষের নামে খারাপ মনোভাব শোনা যায়।
  • খুব রেগে গেলে সে নিজেই নিজেকে আঘাত করে।
  • বাচ্চাটি অন্য বাচ্চাদের ও প্রাণীদের আঘাত করে।
  • বাচ্চা অনেক বেশি প্রতিশোধপরায়ণ স্বভাবের হয়।

একনজরে কী করবেন আর কী করবেন না?

হয়তোবা জেনে থাকবেন, বলার থেকে করাটা কঠিন। আর যা করবেন তা প্রতিনিয়ত ধরে রাখাটা কঠিন।

কী করবেন?

  • শিশুর যে কোনো জেদকে পুরোপুরি উপেক্ষা করুন।
  • বাচ্চার যে কোনো ভালো কাজে প্রশংসা করুন।
  • সমবয়সী বাচ্চাদের সাথে খেলতে দিন এবং তার জিনিসপত্র অন্যদের সাথে শেয়ার করা শেখান।
  • তার যে কোনো কথা মূল্যায়ন করে নিজের মন্তব্য দিন।
  • সামাজিক পরিবেশে গ্রহণীয় ও বর্জনীয় আচরণগুলি সম্পর্কে তাকে স্পষ্ট করে জানান।
  • মিথ্যা বলার প্রবণতা দূর করুন।
  • বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করুন।
  • বাধ্যতামূলক পড়ালেখা করাবেন। আর পড়ালেখার পাশাপাশি সাধারণ আচরণ, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শেখান।
  • তাকে সম্মান করুন এবং কোনো বিষয়ে তার করা অভিমত পর্যালোচনা করুন।

কী করবেন না?

  • জেদের বশবতী হয়ে কোনো জিনিস চাইলে তা পুরোপুরি উপেক্ষা করুন। স্বাভাবিকভাবে চাইলে কেবল তখনই দিবেন।
  • উস্কানিমূলক কোনো কথাবার্তা (রাগ উঠে এমন) বলবেন না।
  • যে কোনো রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ কোনো ধরনের কৈফিয়ত ছাড়াই উপেক্ষা করুন।
  • বার বার এক কথার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না।
  • শিশুদের পাশে রেখে অন্যদের সাথে জেদ নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা করবেন না।
  • বকা দেওয়া, অতিরিক্ত বোঝানো বা তিরস্কার করবেন না।

বোনাস টিপসঃ বাবা মায়ের জন্য

এখান অব্দি এসেছেন- এর মানে হলো আপনি পুরো আর্টিকেলটি পড়েছেন। এখন হাতের পাশেই যদি মোবাইল ফোন থাকে তাহলে আপনার মাকে ফোন দিয়ে এটা জিঙ্গেস করুন “আমি কি ছোট বেলায় তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, মা?”

অপরদিক থেকে মায়ের হাসিমাখা মুখখানা থেকে জবাবে আসবে, নাহ, তুইও অনেক শান্ত ছিলিরে, বাবা। পাশের বাসার বাচ্চাগুলো তাদের মায়েদের কতই না জ্বালাত। কত ধরনের কত কমপ্লেইনই না আসত দিনভর। কিন্তু তুই তো অনেক শান্তশিষ্টই ছিলিরে বাজান।

আমি বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না। কেননা, আপনার বাচ্চা যেমন আপনাকে যন্ত্রণা দেয় তার থেকে বহুগুণ বেশি যন্ত্রণা আপনি দিয়েছেন, এর থেকে কম দেননি। এটা নিশ্চিত।

বাচ্চাকে সঠিকভাবে লালন পালনের জন্য, যোগ্য ব্যক্তিত্ব দেওয়ার জন্য আপনি যেমন অনলাইনে এসেছেন, আপনার মায়ের সময় কিন্তু এরকমটা ছিল না। তিনি নিজে থেকেই বুঝে নিয়েছেন আপনাকে কিভাবে মানুষ করা লাগবে?

এরজন্য তিনি বেশি বেশি যে কাজটা করতেন তা হলো আপনার সাথে বেশি বেশি সময় কাটানো। তাই আপনিও চেষ্টা করুন, বাচ্চার সাথে বেশি বেশি সময় কাটানোর। সর্বোপরি, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন।

প্রশ্ন – উত্তর পর্ব

শিশু রাগী হয় কেন?

রাগ নেই এমন মানুষ কি আছে এই পৃথিবীতে? না নেই, সবার রাগ আছে। এটা একটা শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য, তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখাটাই মূখ্য। বাচ্চারা এই নিয়ন্ত্রণ সহজে করতে পারে না, কারণ তারা এটির খারাপ দিক তেমন উপলদ্ধি করতে পারে না।

আপনি যদি চান আপনার শিশু অতিরিক্ত রাগী না হোক তাহলে সবার আগে আপনাদের শান্ত হতে হবে। বাবা-মা হিসেবে আপনাদের শান্ত সুরে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাহলেই আপনার বাচ্চা আপনাদের দেখে সেটাই শিখবে।


শিশু বদমেজাজী হয় কেন?

আপনার বাচ্চা বদমেজাজী তার মানে আপনার পরিবারে আপনি বা বড় কারো এই বদমেজাজ আছে যা সে অনুসরণ করছে। বেশিরভাগ বাবা-মা ঝগড়া ও রাগারাগী থেকে শিশু বদমেজাজী হয়। আবার সব কাজে তার অন্যায় আবদার পূরণ করলে বা অন্যায় তুলে না ধরলেও এরকমটা হয় বাচ্চারা।

যেমন- আপনার বাচ্চা কারো সাথে ঝগড়া করল, এখন আপনি যদি নিজের বাচ্চার ভুল না ধরে শুধু অন্যের বাচ্চার ভুল ধরেন তাহলে আপনার শিশু সাহস পেয়ে গেল। সে দাপটের সাথে ঐ কাজটি বারবার করবে এবং শাসন করার অভ্যাস তৈরি হবে।

তাই নিরপেক্ষ ভাবে বাচ্চার সাথে আচরণ করুন, ভুল করলে ধরিয়ে দিন। আপনাকে রাগ দেখিয়ে কোন কিছু আবদার করলে তা পূরণ করা থেকে বিরত থাকুন, আর তার সাথে ভালো ব্যবহার করুন। স্বভাবতই বাচ্চাদের আবদার পূরণ না করলে তার মন খারাপ হয়, এসময় তার পছন্দের কোন খাবার বা অন্য কিছু দিয়ে তার মন ভালো করুন, তাকে একা মন খারাপের মধ্যে রাখবেন না।


শিশুর অতিরিক্ত জেদ কেন হয়?

২০ শতাংশ শিশু জীনগত কারণে ও বাকি ৮০ শতাংশই পরিবেশগত কারণে জেদি হয়। মনোবিজ্ঞানের মতে, সন্তানের যেসব আচরণে মা-বাবা মনোযোগ দেবেন, সেসব আচরণ সে বারবার করবে। ধরুন আপনার শিশুর জেদ সে পুতুল কিনবে, এজন্য কান্নাকাটি করল, আর আপনি তা সইতে না পেরে তা তখনি কিনে দিলেন।

এ থেকে সে বুঝল যে জেদ না করলে পাওয়া যায় না, তাই জেদ করতে হবে। এভাবেই ধিরে ধিরে জেদী হয়ে পড়ে। আবার বাচ্চার সামনে যদি বলেন, এ খুব জেদী/বদমেজাজী তাহলে সে নিজেকে সেটাই ভাববে এবং মেনে নিবে। এখন সে মনে করবে সে যেহেতু জেদী তাহলে জেদ করি।

তাই শুরু থেকে বাচ্চার অহেতুক আবদার পূরণ করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে কোন একটি জিনিস কিনে দেয়ার আগে সেটার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরুন, তাকে বুঝতে দিন একটি জিনিস এমনি এমনি বা সহজে আসে না। সেটার জন্য আপনাদের কত কি পরিশ্রম করতে হয়।
অনেকে আবার বাচ্চার একটা আবদারও পূরণ করে না, এটা ঠিক না। ছোট খাট আবদার প্রয়োজনের সাপেক্ষে পূরণ করবেন, এতে ভালোবাসা বাড়ে, শিশু আপনার অনুগামী হয় বা চুরির অভ্যাস হয় না।


বাচ্চারা কথা শোনে না কেন?

বাচ্চার প্রতি যখন আপনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে তখন আর আপনার কথা শুনবে না। আবার আপনি তাকে এমন কিছু করতে বললেন যেটা আপনি নিজেই মানেন না, সেটাও কিন্তু বাচ্চারা শুনবে না। বাচ্চাদের আত্মসম্মান অনেক। তাকে সম্মান ও গুরুত্ব দিলে সে সবকিছু শুনতে রাজি। কিন্তু আপনি যদি তাকে মারেন, অন্যের সামনে অপমান করেন বা কোন কিছু জোর করে ভয় দেখিয়ে করতে বলেন তাহলে শিওর থাকেন যে আপনি দিন দিন তার উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন।

বাচ্চা আপনার কথা তখনি শুনবে যখন- আপনি তাকে সম্মান দিবেন, ভালোবাসা দিয়ে বোঝাবেন, অনুপ্রেরণা দিবেন, মূল্যায়ন করবেন, জোর না করে বুঝিয়ে বলবেন, তার ইচ্ছার মূল্য দিবেন। বাচ্চার কাছে যদি আপনি একজন ভালো বন্ধু হতে পারেন তাহলেই সে আপনার কথামত চলবে।

যেমন- এই এখনি পড়তে বস এভাবে না বলে, বলুন যে- বাবা/মা তুমি আজকে রাতে কয়টার সময় পড়তে বসবে আমাকে বলো, আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিব। এভাবে কোন কিছু চাপিয়ে না দিয়ে, তার কাছ থেকে মতামত নিন। যখন দেখবে আপনি তাকে মূল্যায়ন করছেন তখন সেও আপনাকে মূল্যায়ন করবে।

অবশেষে আপনার বাচ্চার জন্য শুভকামনা রইল।
আর আপনিও ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *